অন্যরকম তুমি
জান্নাতুল ফেরদৌস তারিন
৬ষ্ঠ পর্ব
তুবা:কিন্তু এর চেয়ে বড় সমস্যা আরেকটা,,এটা আমাকে আরো বেশি ভাবাচ্ছে,,,
তৃণা:কী রে দোস্ত
তুবা:দেখ আমি তো জেনারেল এ পড়াশুনা করি,,ওনারাও তায় জানে,,এর আগে আমি পর্দার জন্য অনেক বিয়ে ভেঙ্গেছি,কিন্তু ওনারা যদি আমাকে পর্দা করতে না দেয়,,,?!আর আমি ভাবছি আমি মাদ্রাসায়,হাফেজী পড়েছে এমন কাউকে বিয়ে করবো,কারন ইসলাম সম্পর্কে আমি অনেক কিছু জানি না,,যাতে সে আমাকে নিজে শিখায়ে নিতে পাড়ে,আমাকে সাহায্য করতে পাড়ে,,কিন্তু এখন তো এসব কিছু হবে না,,,
তৃণা:দেখ দোস্ত আমি জানি তুই সব পাড়বি,,সব কিছু মানিয়েও নিতে পাড়বি,আর তুই তো হাদিস পড়ে অনেক কিছু শিখেছিস ঐ,ভাবে না হয় শিখে নিবি সব,,আর রইলো যদি তোর স্বামী যদি ইসলামের পথে না চলে?সেটা না হয় তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে তাকে ইসলামের পথে নিয়ে আসবি,ইনশাল্লাহ,,, তাছাড়া আমরা তো জানি না ওনি আসলে কেমন,,এমনও তো হতে পাড়ে জেনারেল পড়লেও দ্বীন মেনে চলে,,তুইও তো জেনারেল পড়চোছ কিন্তু দ্বীন তো মেনে চলছ,,,
তৃণার কথায় তুবা কিছুটা ভরসা পেলো,,,
.তুবা আর আহিরের বিয়ে শুক্তবারের জন্য ঠিক হলো,,,
আহিরের আগে যে তেমন পর্দ করা মেয়ে পছন্দ ছিলো এমন টা না,,সে ভাবতো যারা বেশি হুজুর সাজে তারাই বেশি খারাপ কাজ করে,,তাই সে স্মার্ট মেয়েদের বেশি পছন্দ করতো যারা খুব ফ্রেন্ডলি কথা বলে,আহিরের কলেজ লাইফ এ একটা মেয়ের সাথে প্রেমও ছিলো।প্রায় ৩ বছর কিন্তু মেয়েটার অনেক ছেলের সাথেই রিলেশন ছিলো,,মেয়েটা বড়লোক ছেলে দেখে দেখে রিলেশন করতো আর তাদের থেকে ভিবিন্ন সুযোগসুবিধা ভোগ করতো,,একদিন আহিরের এক বন্ধু আহির কে সব বলে কিন্তু আহির বিশ্বাস করে নি,,তাই সে বন্ধু একদিন সমস্ত প্রমাণ দেখালে আহির বিশ্বাস করে,,আর ঐ দিন সে মেয়েটাকে কয়েকটা চড় মেয়ে ঐ খান থেকে চলে আসে,,এর পর থেকে আর কোন মেয়ের সাথে আহিরের সম্পর্ক ছিলো না,,সে আর স্মার্ট মেয়েদের পছন্দ করে না,,,,
তাই সে বহু বছর পর একটা মেয়ের প্রেমে পড়ে কিন্তু তাও তাকে পাবে না সে,,অন্য কাউকে বিয়ে করতে হবে,,,এটা ভেবে সে অনেক মন খারাপ করে আছে,,,,,
.
আস্তে আস্তে বিয়ে কাছে আসছে তাই সবাই শপিং নিয়ে ব্যস্ত,, সবাইকে দাওয়াত দেওয়া প্রায় শেষ,,
.
বৃহস্পতিবার প্রায় সব মেহেমান চলে আসছে,তুবাদের আপনজন প্রায় সবাই গ্রামে থাকে তাই বিয়েতে তেমন কেউ আসে নী তবে কয়েকজন পুরুষ আছে ছেলে আসছে আর ওর চাচাতো বোনরা সবাই আসছে,,,
আর আহিরদের মেহেমান দিয়ে বাসা ভরপুর,,,
হলুদের অনুষ্ঠান সামান্য করেই হয়েছে,,যে যার মতো করে আনন্দ করেছে বিয়েতে,,,কিন্তু কোন গানবাজনা ছাড়া,,,
শুক্রবার সবাই জুমা পড়ে রওনা দিলো অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্যে,,বিয়েটা কমিউনিটি সেন্টারে হবে তাই আহিরের বাসা থেকে তেমন দূরে না,,,সবাই কিছুক্ষণে পৌঁছে যায়,,তুবাকে সাজিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে,,,
তারদিকে সবার এতো দৃষ্টি দেখে সে খুব বিরক্তি হচ্ছে,,কেননা আজ সে পর্দা করে নেই,,নায় চায়তেও তাকে এভাবে বসে থাকতে হচ্ছে,,,পর্দার কথা চিন্তা করে তার চোখে পানি ছলছল করছে,,,সে বসে বসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাচ্ছে,,,
.
আহির কমিউনিটি সেন্টারে এসে পৌঁছে গেছে,,
আজকে তুবাকে সত্যি অনেক সুন্দর লাগছে,,তার এই রূপ যেনো আজকে আল্লাহ আলাদাভাবে দিয়েছে আজকের জন্য,,,চারদিকে শুধু তুবার রুপের প্রশংসা,,
তুবার খুব অসস্থি লাগছে,,
আহির এসে তুবার পাশে বসলো,,আসতেই তার নজর পড়ে তুবার দিকে,,কিন্তু সে চোখ নামিয়ে নেয়,,কারন সে এখনো মেনে নিতে পারে নী এই বিয়ে,,
কিছুক্ষণের মধ্যে কাজী আসে আহির আর তুবার সই নিতে,,,
আহির না চায়তেই সই করে দেয়,,,
এবার তুবাকে দিলো সই করতে কিন্তু তুবার হাত কাঁপছে তার চোখ ছলছল করছে,,,সবাই কে ছেড়ে চলে যেতে হবে,জীবনের সব ছেয়ে বড় সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে সে,,সে বুঝতে পাড়ছে না সে কী ঠিক মানুষকে বেঁছে নিচ্ছে নাকী ভুল মানুষকে,,,কীভাবে মানিয়ে নিবে সবাইকে,, সবাই অপরিচিত , কে কেমন তা জানে না,,,সব ভাবতে ভাবতে তুবার হাত কাঁপছে,,, হঠাৎ তৃণার ধাক্কায় সে ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসে,,,
তৃণা:কিরে দোস্ত কী ভাবছিস এত,,তাড়াতাড়ি কর,,কাজী সাহেব অপেক্ষা করছে তো,,,
তুবা:কাঁপা কাঁপা হাতে সই টা করে দিলো,,,
.
এভার বিদায়ের পালা
তুবা তার বাবাকে ধরে কান্নাকাটি শুরু করে দিলো,,তার কান্নায় সবাই কান্না করে দিলো,,,
তৃণা কোনরকম নিজেকে সামলিয়ে তুবাকে শান্তনা দিতে গিয়ে পাড়লো না,,,নিজেই কান্না করে দিলো তুবাকে জড়িয়ে ধরে,,,তৃণাকে তুবা তো ছাড়তে চাচ্ছে না,, তার বেস্টফ্রেন্ড কে ছেড়ে আজ চলে যেতে হবে,,ঠিক করে আর হয়তো দেখাও হবে না,,,তার সবচেয়ে প্রিয়ো বন্ধুকে মনে হয় সে হারিয়ে পেলছে,,,
তৃণা কোনরকম কান্না আটকে তুবাকে গাড়িতে তুলে দেয়,,তাসনুবা তুবার সাথে তোয়াকেও নিয়ে যায়,,তাতে হয়তো তুবার ভালো লাগবে তাই,,,
,
,,সবশেষে বাসায় এসে পৌঁছালো সবাই,,,তুবাকে নিয়ে গিয়ে তাসনুবার রুমে বসানো হলো সাথে তোয়াও আছে,,,একের পর এক করে সবাই তুবাকে দেখতে গেলো,,সবাই আলাপ করে চলে যাচ্ছে,,,খাদীজা বেগম তুবাকে মিষ্টিমুখ করালো,,,
আস্তে আস্তে সব ঝামেলা মিটতে লাগলো,,,তাসনুবা তুবাকে একটা জামা এনে দেয় পড়ার জন্য,,,তুবা জামাটা পড়ে একটু শান্তি পাচ্ছে,,এতক্ষণ মনে হয় সে আগুনে বসে ছিলো,,, এই রকম লাগছে,,
.
রাত হতেই কয়েকটা বাবি মিলে তাসনুবাকে রানীর মতো করে সাজিয়ে দিলো,,তাকে সত্যি রানীর মতো লাগছে,,,কিন্তু এখম তাসনুবার অসস্থি হচ্ছে না কেননা সে জানে,জীবনসঙ্গীর জন্য সাজলে কোন গুনাহ নেই,,ভড়ং সবার কাছ থেকে নিজের সৌন্দর্য লুকিয়ে স্বামীর কাছে নিজেকে সৌন্দর্য প্রকাশ করতে বলা হয়েছে,,,
চারদিকে ফুল দিয়ে সাজানো,,ফুলের ঘ্রাণে পুড়া রুমটা ভরে আছে,,এতো সুন্দর করে সব সাজানো গুছানো দেখে তুবার অনেক ভালো লাগছে,,,
তুবা মনে মনে লজ্জাও পাচ্ছে,,,
সে ছুপ হয়ে এক কোনায় বসে আছে,,আহিরের অপেক্ষায়,,,,কিন্তু আহিরের কোন পাত্তা নেই,,,
.
অনেক রাত পর আহির রুমে আসলো,,আহিরের আসার শব্দ শুনতেই তুবা উঠে দাঁড়িয়ে গেলো,,,আর আস্তে করে সালাম দিলো,,,
আহির মাথা নাড়িয়ে সালামের জবাব দিলো,,,আর বল্লো
আহির: আপনি ঘুমিয়ে পড়েন,,,নিশ্চয় অনেক ক্লান্তা হয়ে আছেন,,,
আরো পড়ুন এবং লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.