আমার জন্য বর্ষাকাল
রোকসানা আক্তার
আষাঢ় শ্রাবণ দুইমাস বর্ষাকাল। প্রচন্ড গরমে মানুষ যখন ছটফট করতে থাকে। তখন বর্ষা আসে প্রবল গর্জনের মাধ্যমে মনে আতঙ্ক জাগিয়ে।আবার এই বর্ষাই মানুষের মনকে উদাস করে দেয়।বর্ষার পানিতে চারদিক থৈ থৈ করে। আকাশ থাকে ঘন মেঘে ঢাকা। এরই বুকে চলে বিদ্যুৎতের খেলা। নৌকার ছুটাছুটি। জেলেদের মাছ ধরা। যখনই বর্ষাকাল আসে আমার মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়। রাতে আমার চোখ থেকে ঘুম চলে যায়।এই বর্ষা আমাকে মনে করিয়ে দেয়। হসপিটালে আমার মৃত ছেলে সন্তানের জন্ম হয়েছিল। আমি লোকলজ্জার ভয়ে মৃত ছেলের মুখখানি দেখতে বলতে পারিনি। ছেলেকে কার্টুনে করে সাথে নিয়ে আসেন নৌকা পথে স্বজনরা। মাঝখানে কার্টুন ভাসিয়ে দেয়া হবে আমি জানতাম না। ছেলেকে না দেখার হাহাকার আজ ও মন শিউরে উঠে কেঁদে। আজ এই সাপ্তাহিক অনুমতি আমাকে এত কষ্ট প্রকাশ করার সুযোগ করে দিয়েছে। জীবনের প্রথম যখন আমি বর্ষার সম্মুখীন হই। কি যে ধপাস ধপাস ঢেউয়ের শব্দ। এই ঢেউ ঘরের এক কুনে ভেঙে নিয়ে যায়।আমি কচুরিপানা দেই তা ও ভাসিয়ে নিয়ে যায়।হঠাৎ মায়ের ফোন আসে তখন দেখি পায়ের নিচে সাপ। আমি লাফ দিয়ে মোবাইল ফেলে দূরে সরে যাই। মাটি ভাঙা সহান থেকে সাপ আসবে সেই ভয়ে সারারাত ঘুম আসত না। ঝড় তুফানের সময় দরজা জানালা বন্ধ করতে পারতাম না। বাতাসের শক্তির কাছে আমি হেরে যেতাম। আমি তখন একা, অসহায় ছিলাম। বিছানায় যেতে ও ভয় লাগত হয়ত সাপ থাকতে পারে। গাছের ফলানো সবজি আনতে ও ভয় লাগত, ঘরের ভিতরে চারদিকে কেঁচো সাপ, কালো পিঁপড়া কামড় দিত পায়ে।আমি অনেক ভয় পেতাম। রাতে এসব ভাবতে ভাবতেই সকাল হয়ে যেত। বাজার খরচ আনতে অনেক মাঝি ভাইকে ডেকে খরচ আনতে হত। কারেন্ট ছাড়া অন্ধকার ঘরে মোমবাতি জ্বেলে ঘুমিয়ে যেতাম। হঠাৎ ঢেউয়ের শব্দ ঘুম শেষ।এভাবে দিনের পর রাত, রাতের পর দিন কেটে যেত। অনেক ভয়ের সাথে সংগ্রাম করে যুদ্ধ করেই জীবন অতিবাহিত করেছি। এখন অযথাই কোন শব্দ শুনলেই ভয় লাগে মনে। আমার মেয়েরা বলে আমিম আপনি শুধুই ভয় পান। আজ ও আমি কাউকে বলতে পারিনি কেনো আমি ভয় পাই। আমি নিজেই জানিনা কেনো ভয় পাই। অবশেষে বলতে চাই যত ধরনের বিপদই আসুক না কেনো আল্লাহর উপর ভরশা করে সাহসের সাথে জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে হয়। সংগ্রাম করতে হয়।নিশচয়ই আল্লাহ সকল সমস্যার সমাধান করে দিয়ে থাকেন।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.