

একখান কবিতা লিখবার চাইছিলাম
~ আতিয়া মাহজাবিন
একখানা কবিতা লিখবার চাইছিলাম।
তাই লাইগা গত কয়েকদিন ধইরে মুহূর্তের পর মুহূর্ত,
সহস্রাব্য সময়ের রশি টাইনে ছিঁড়া ফেলছি ,
তবু শব্দের লাগাম ধরতে পারি নাই !
কলম ধরছি আর হাত কাঁপছে থরথর!
অক্ষরগুলা সব রক্ত হইয়া ঝইরা পড়ছে।
কিন্তু একখান কবিতা লিখবার পারি নাই !
ওসমান ভাইয়ের সেই দুই হাত ছড়ানো আকাশটা কি কলমের কালিতে ধরে?
নাকি সেই চঞ্চল হতে নিথর হওয়া দেহের ভার
সইবার ক্ষমতা আছে এই কাগজের?
তাই তো বলি, কেমনে লিখি সেই প্রশস্ত বুকের কথা?
আমি আসলে শব্দের লাগাম ধরতে চাইছিলাম,
অথচ রগচটা যন্ত্রণারা সব আজ রশি ছিঁড়া পালাইতেছে!
আমি চাইছিলাম সেই ছেলেটার ঠাটা পড়া হাসিটারে ছন্দ বানাইতে,
চাইছিলাম ফজর বেলার ঐ ধুলোমাখা পায়ের পদধ্বনি দিয়া মহাকাব্য লিখতে!
যেই পায়ে পিষ্ট হইয়া যায় শাসকের সিংহাসন!
বিপ্লবের পর বিপ্লব হয় এ দ্যাশে ,
জীবন দেয় আবরার ফাহাদ থেইকা আবু সাঈদ ।
আর তারপর ভাবা হয় বিপ্লব এসেছে!
এসেছে এই মাতৃভূমিতে ।
তারপর রক্ত চোষা জমিনে পুনরায় শাহাদাহর চাষ করতে হয় আমগো হাদীদেরকে।
বিপ্লবের আগে রক্ত ঝরে ,
জুলুমের কন্ঠ উচ্চস্বরে বজ্র ধ্বনিত হয় ।
বিপ্লবের সময় টগবগে প্রাণে রাজপথ রক্তিম হয়ে ওঠে।
জনগণের চৈতন্য ফিরে।
ক্ষাণিকক্ষণের জন্য!
বিপ্লব হয়, সরকার হয়।
বিপ্লবের পর আবার রক্ত ঝরে ।
খুন ঝরে, শহীদ হইতে হয়!
এইডারেই সম্ভবত ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি বলে, না?
আসলে আমি না কবিতাটা কি নিয়ে লিখবার চাইতাছি,
ঠিক তাই বুঝতেছি না।
সেই ছেলেটারে নিয়া যে গর্ব করে তার রক্ত বিসর্জন দিয়েছে!
নাকি সেই তৃষ্ণার্ত জমিনকে নিয়া-
কাল থেকে কালান্তরে যেইখানে শুহাদার চাষ হইতাছে?
নাকি সেই টগবগে রক্তকে নিয়া,
যা সেকেন্ডের পর সেকেন্ডে বিচ্ছেদের অনলে বিচ্ছিন্ন হবার পর
বারংবার সকলকে একই রশিতে বাঁইধা ফেলে!
ঠিক বুঝবার পারতাছি না ।
অথচ !
অথচ আমি একখান কবিতা লিখবার চাই !
শব্দের লাগাম ধরা তো দূরের কথা ,
কবিতার টপিকটাই বুঝতে পারতাছিনা ।
আরে এহোনো তো এইডাই বুঝতে পারতাছি না,
জীবন্ত প্রাণ হইতে কেমনে মৃত লাশের দাম বেশি হয়?
সেই সমীকরণ ডাই! ঠিক বুঝবার পারতাছি না।
রাঘব বোয়াল জমিন আমার, বড্ড রক্ত চোষা!
কাব্য লিখতে মোসির কালি লাগে।
আরে যেই জমিন বঙ্গোপসাগরের নোনা জলেই
তৃপ্তি পায় না,
চাষ করা লাগে খুনের পর খুন তাজা ইনসাফের লহু দিয়া,
সেই জমিনে কি আর কালি দিয়া কাব্য লিখন যায়?
সেই জমিনে কবি হইবার লাগলে নিজের খুন ঝরাইয়া অমর কাব্য রচনা করতে হয়।
সেই কবির কলম হয় এক আগ্নেয়গিরি, শব্দগুলা সব উত্তপ্ত লাভা!
ভেতরের বিচ্ছেদের অনল যখন দাউদাউ কইরা জ্বইলা ওঠে,
তখন আর কাব্য হয় না, তখন আর ছন্দের ব্যাকরণ খাটে না!
তৃষ্ণার্ত জমিন যখন টগবগে রক্ত চোষার জন্য হা কইরা থাকে,
তখন আমি কবি না, আমি হইয়া উঠবার চাইতাছি একখানা জ্যান্ত বিদ্রোহ!
বিশ্বাস কর, এই চাপা পড়া আগ্নেয়গিরি যদি একবার বিস্ফোরিত হয়,
তবে রাজপথ কাঁপানো ঐ সহস্রাব্দ পায়ের শব্দে মসনদ চুরমার হবে!
বিচারের পাল্লা যদি না দোলে,
তবে তুলাদণ্ড ভাইঙা গইরে উঠবো নতুন মানদণ্ড।
দেশ যদি তার বীররে ধইরা রাখতে না পারে,
তবে সেই দেশরেই আমরা ঘাড় ধইরা বদলায় দিমু!
আমি কবিতা লিখবার চাইছিলাম।
পারি নাই!
কিন্তু বুকের ভেতর এক আস্ত বিদ্রোহের অগ্নি সমুদ্র পুষতেছি।
সেই আগুন যেদিন জ্বলবে, সেদিন শাসকের প্রাসাদ হবে ছাই!
আর আমার এই 'না পারা' শব্দগুলাই হবে নব্য পৃথ্বীর তপ্ত খুনের গান!
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.