কারিমা খাঁন দুলারী' এর সেরা ১৩ টি কবিতা। কবিতা গুলো পড়ুন, পড়লে ভালো লাগবে ইন শা আল্লাহ। ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন।
গরু হয়না কভু জ্ঞানী
কারিমা খাঁন দুলারী
গরু হতে চায় জ্ঞানী গুনি
সে পড়ছে খুলে বই।
শিক্ষিত মুর্খ যারা আছে
তাঁরা শিক্ষা পাবে কই।
অনেক মানুষ শিক্ষিত হয়ে
হয়েছে সমাজে তাঁরা গরু।
শিক্ষার কোন মুল্য রাখে না
মানুষ বলে কাপুরষ ভীরু।
পোশাক তো বাহিরের আবরণ
আলস হলো জ্ঞানের শিক্ষা।
আচার আচরণ খারাপ যার
সবাই তাঁকে দেয় কতো ধিক্কা।
যে সম্মান দিতে জানে না
তাঁর শিক্ষার কি আছে মুল্য।
এ সব কথা জ্ঞানী গুনিরা
ইতিহাসের পাতায় যে বল্লো।
শিক্ষা অর্জনের পরে যাঁর
জ্ঞানের আছে খুব অভাব।
ভাবতে হবে এটা তাঁর
বংশের মারাত্মক সভাব।
অল্প শিক্ষার মানুষ গুলো
কথা বলতে যে পায় ভয়।
সুন্দর জীবন গড়ে তাঁরা
সুখে শান্তিতে দিন কাঁটায়।
আরো পড়ুনঃ রসুনের উপকারিতা, অজানা ১০ টি উপকারিতা সম্পর্কে জানুন |
ধন্য তুমি বঙ্গবন্ধু
কারিমা খাঁন দুলারী
ধন্য তুমি বঙ্গবন্ধু
ধন্য তোমার জীবন।
আজও তোমার জন্য কাঁদে,
এই বাংলার ভুবন।
মরে ও তুমি বেঁচে আছো
এই বাংলাদেশের বুকে,
তোমার প্রিয় জনগণ,
তোমায় ভেবে কাঁদে ধুঁকে ধুঁকে।
বঙ্গবন্ধু ছিল বাংলায়,
জনগণের নেতা।
আজ মানুষ মনে করে,
পায় হৃদয়ে ব্যাথা।
মৃত্যু খবর ছরিয়ে পড়ে,
এই বাংলায় যখন।
পাগল পাড়া হয়ে গেল,
তোমার জনগণ তখন।
মন মাতানো কন্ঠের সুরে,
ভুবন যেতো ভরে
আজও মরে বেঁচে আছো,
সবার অন্তর জুড়।
তার মতো আর হবে না,
দেশ শাসনের লোক।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পড়,
মানুষ পেয়েছে বড় শোক।
হেমন্তের কাশ বনে, পাখিদের মেলা
কারিমা খাঁন দুলারী
ভুবন ভরে এলো হেমন্ত
ভাসে মেঘের কোলে ভেলা।
বকের শারী কাশ বনে
দেয় ফুলে ফুলে দোলা।
পাখিরা ঝাঁকে ঝাঁক বেঁধে
গান গেয়ে করে খেলা।
বকের সারি নদীর কুলে
বসায় হেমন্তের মেলা।
ঐ রক্তিম সূর্যের শান্ত বানী
উন্মুক্ত হীন তার ধনী।
কালো মেঘে আঁধার করে
ঝড়ছে অঝড়ে বৃষ্টির পানি।
খেজুর গাছ কেটে গাছি ভাই
বাঁধবে মিষ্টি রসের হাঁড়ী।
মনের আনন্দে ঘাড়ে করে
নিয়ে যায় সে বাড়ী।
সবুজ শ্যামল মাঠের দিগন্তে
উড়ছে ঐ বন পাখি।
অবাক চোঁখে এক দৃষ্টিতে
আমি চেয়ে চেয়ে দেখি।
মাঠ ভরা সোনালী ধান আছে
কৃষকের মুখে মধুর মৃদু হাসি।
এইতো সোনার বাংলাদেশ
আমরা কতো যে ভালো বাসি।
মন মাতানো মেঠো পথে
আমরা হাঁটি খালি পায়ে।
রাখাল ছেলে বাঁশি বাজায়
হেমন্তের গান সে গেয়ে।
নয়া মাঝি
কারিমা খাঁন দুলারী
বড় হয়ে আমি হব
ফুলতলার ভৈরব নদীর মাঝি।
সকাল সন্ধ্যা বৈঠা হাতে
তাই তো এই সং সাজি।
মাঝির ছেলে মাঝি হব
এটা আমার মনের কথা।
সবাই বলবে মাঝির ছেলে
তখন প্রানে লাগবে ব্যাথা।
লেখা পড়া করে কি হবে
মানুষ তো বলে মাঝির ছেলে।
কোথাও গিয়ে জীবন আমার
যানি না চলবে কি হালে।
তাই মনটা কে ঢেউ এর মাঝে
স্রোতের সাথে দেব উজার করে।
বড় হবার স্বপ্ন আশা গুলো
আজ বৃষ্টি হয়ে নয়ন ঝড়ে।
ঢেউয়ের তালে পার করে
দিব আমার জীবন তরী।
তাই তো এসে বাবার সাথে
আমি বৈঠা হাতে আজ ধরি।
আকাশ ছোয়া স্বপ্ন যখন
আসে সবার অন্তর ভরে।
মাঝ নদীতে বৈঠা ছেড়ে
কষ্টের গান গাইবো উজার করে।
হৃদয়ের ভাষায় কবিতা
কারিমা খাঁন দুলারী
আমি যখন কবিতা লিখতে
বিভোর থাকি সন্ধ্যায়।
আনমনে অবাক হয়ে ভাবি
কি লিখবো কবিতার খাতায়।
লেখকের গল্প কাহিনীতে
খুজে পাবে কি আমায়।
নইলে কবির লেখা গদ্য
নয় নাট্য কারের ভূমিকায়।
তোমার মনের ডাইরির খাতায়
লেখকের ভাষার গল্প গাঁথায়।
দেশের প্রকৃতি নিয়ে কেন
মন উতালা হয়ে হারায়।
দেশ নিয়ে কবিতা লিখবো
কেন আসছে না যে মাথায়।
মনের ডাইরির সব ভাষা
লিখতে পারতাম যদি খাতায়।
লিখতে বসলে সব লিখি
যখন বেলকনিতে দাঁড়ায়।
আকাশের আবির্ভাব ঘটে
আমি দুহাত দিয়েছি বাড়ায়।
হৃদয়ের মাঝে আঁকি আমি
প্রকৃতির মধুর যত ছবি।
বাংলাদেশ নিয়ে লিখে যেনো
হতে পারি স্মৃতি ময় এক কবি।
দেখিনি মায়ের মুখ
কারিমা খাঁন দুলারী
মাকে আমার মনে পড়ে না
মরেছে আমার জন্মের বেলা।
খেলার ছলে অকারণে
মনে করে ওঠে বুকে জ্বালা।
মনে হয় মার গায়ের গন্ধ
সব সময় থাকে আমার সাথে।
পথের পাশে শুয়ে ভাবি
মাকে স্বপ্ন দেখি রাতে।
ভাবি মা আমায় কোলে নিয়ে
গাইছে ঘুম পাড়ানী গান।
তাহলে মায়ের সাথে আছে বুঝি
আমার জন্মের নারীর টান।
মায়ের মুখ দেখার ভাগ্য
হয়নি আমার এই কপালে।
অপায়য়া অলক্ষী বাজে
মানুষরা বলে আমায় সকলে।
সঙ্গি বিহীন জীবন আমার
নেই যে কোন আমার বন্ধু।
সুখ দুঃখের কথা বলার
পাইনা কাওকে এক বিন্দু।
পথের টুকাই পথে থাকি পড়ে
নেয় না কেউ আমার খবর
বুকে আর্তনাদে কাতর হয়ে
দেখতে যাই আমার মায়ের কবর।
রুপ নগরের রানী আমি
কারিমা খাঁন দুলারী
রুপ নগরের রানী আমি
যাই রঙিন তরী বেয়ে।
আমি রুপসী সুন্দরী মেয়ে
থাকি খুলনা ফুলতলার গাঁয়ে।
ফুলতলা ভৈরব নদীর কুলে
থাকে আমার রঙিন নাও।
রূপসী সুন্দরী মাঝি তুমি
এখন কোথায় বেয়ে যাও।
স্বামী আমার বড়ই পাঁজি
কাজ করতে হয়না সে রাজি।
তাই আমি আজ হয়েছি
ফুলতলা ভৈরব নদীর মাঝি।
পার করি বহু মানুষ
এ পার হতে ঐ পার।
লোকে মন্দ বলে বলুক
আমি ধারী না কারও ধার।
রাখাল ছেলে আমায় দেখে
বাজায় নিঠুর সুরে বাঁশি।
মন আমার উদাস করে
পাগলের মত ছুটে আসি।
বহু দুরে যাই ভাড়া নিয়ে
পাল তুলে যাই বেয়ে।
মিষ্টি মধুর হাসি দিয়ে
যাই গান আমি গেয়ে।
নুন আনতে পান্তা ফুরায়
পান্তা খেতে ফুরায় নুন।
আমার স্বামীর নাই যে
একে বারে কোনই গুন।
ভৈরব নদীর তীরে
কারিমা খাঁন দুলারী
জেলে ভাই মাছ ধরে
ফুলতলা ভৈরব নদীর তীরে।
খোকন সোনা যাসনে
হাঁড়ীয়ে যাবা লোকের ভীড়ে।
মানুষ সব দল বেঁধে যায়
নদীর তীরে ভরে।
মনের ভুলে ও যেওনা
তুমি যাবে পানিতে পড়ে।
আমি বাবা যেতে চাই
ঐ জেলে ভাইর নায়ে।
থলে ভরে মাছ নিয়ে
আসবো আবার গাঁয়ে।
ফুলতলার হাঁটে যেতে
খোকা ভয় করে মনে।
বাজার এত গরম
তুই থাকিস আমার সনে।
মানুষ আগে পায়ে হেঁটে
যেতো সবাই বাজারে।
মাছ তরকারি গোশ
আনতো সবাই ব্যাগ ভরে।
জিনিসের দাম এত বেশি
কিনতে পারি না মন ভরে।
দর দাম করলে আমার
মাথাটা যায় যে ঘুরে।
ভাবছি আমি কাল থেকে
করবো সবজির ব্যবসা।
দুই জন মিলে বিক্রি করব
থাকবে না কোন সমস্যা।
জীবন যাবে যানি ঝড়ে
কারিমা খাঁন দুলারী
হিমেল হিমেল ঠান্ডা হাওয়া
বইছে গাছের পাতায়।
আমি তখন লিখতে বসি
আমার মনের ডাইরির খাতায়।
জীবন তো গাছের পাতার মত
সে যাবে যে এক দিন ঝড়ে।
তবুও আমরা বেঁচে থাকি
আবেগের ভালো বাসায় পড়ে।
ঘড়ির কাঁটার মত টিক টিক করে
চলছে জীবন তার গতিতে।
দেখতে দেখতে দিন ফুরিয়ে
সবাই দাঁড়ায় মৃত্যুর পথে।
হঠাৎ করে আসে মরনের হানা
করতে পারে না কেউ মানা।
ধ্বংস করে সব আশা
তা তো আছে সবার জানা।
এই পারেতে কাজ কর্ম
ঐ পাড়েতে আসল বাড়ী।
শক্ত করে বৈঠা বাও
দিতে হবে মৃত্যুর সাগর পাড়ি।
ভোর বিহানে
কারিমা খাঁন দুলারী
মা পাশের বাড়ী শুনতে পেলাম।
খুব পিঠা খাওয়ার ধুম।
পিঠার ঘ্রাণে আমার চোঁখে
মা আসছে না আর ঘুম।
বাড়ীর আঙিনায় খেজুর গাছে
ঝুলছে রসের মিঠাই হাঁড়ী।
তাহলে আমাদের বাড়ীতে
কেন মা হয়নি পিঠা তৈরি।
মা ভোর বিহানে রস পাড়তে
যাবো আমি নদীর পাড়ের মাটে।
রসের হাঁড়ী ঘাড়ে নিয়ে
বাবা বিক্রি করবে গিয়ে হাঁটে।
কাঁচা রস খাবো মাগো
আমি গ্লাস ভরে ভরে।
প্রতি দিন পিঠা বানায় রেখ
মা আমাদের জন্য ঘরে।
মায়ের হাতের পিঠা খেতে
কি যে ভারি মজা।
যদি হয় জামাই কুলি
মচ মচে তেলে ভাজা।
খাওয়ার মাঝে গল্পের আসর
শুরু করে আমার বাবা।
সোনা মনিরা তোমরা কি
পিঠা আরও খাবা।
আমি নই কোন রাইটার
কারিমা খাঁন দুলারী
আমি নই তো কোন রাইটার
তবে লিখতাম জীবন কাহিনী।
পত্রিকার পাতায় ছাপা হত
পড়তো দেশের জ্ঞানী গুনি।
নই তো কোন সিংগার
নই তো আমি কোন গাইকা।
আমার সুরে ভুবন ঘোরে
হতে চাইনা আমি নাইকা।
আমি নই আর্টিস ম্যান
আনমনে যেতাম ছবি একে।
অমর হয়ে থাকতাম ভুবনে
দেয়ালে ছবি বাঁধিয়ে রেখে।
আমি নই কোন এক্টর
জীবনের স্মৃতি নিয়ে করতাম অভিনয়।
তুলে ধরতাম মধুময় শৈশবের কথা
আছে যত লুকিয়ে হৃদয়।
কেচ হবে না খারিজ
কারিমা খাঁন দুলারী
আমারে কও ফইরির মাইয়ে
নিজি খাও দেহি পান্তা।
বড় লোকের মাইয়ে রে
কি খাওয়াতি কও আন্তা।
তিন বেলা খাইচ্ছো ভাত
দিয়ে কাঁচা মরিচ।
ধনীর দুলালি আইনতে যদি
কেচ হতনা তোমার খারিজ।
আমারে কও ছোট্ট লোকের মাইয়ে
এ কথা কও কোন জোরে।
বড় লোকের জামাই হলি
দেতো পুলিশির হাতে ধইরে।
বেশি জ্বালাতন কর যদি
যাবানি বাপের বাড়ী হাইটে।
আমার জন্নি কানবা কিন্তু
বুক যাবে নে তোমার ফাইটে।
সারা দিন কাজ কইরে
আমি আসি মেলা রাইত।
ইচ্ছে মত খাইয়ে তুমি
সইন্দের সময় হও কাইত।
নিজের গতর খাটাইয়ে
খাইও দেখপানি গিলে।
রাইত টা পোহালি দেহি
বাপের বাড়ী যাবানি চইলে।
যদি উড়ে যাই
কারিমা খাঁন দুলারী
মা,আমার ডানা কেটে
দিলো না আর উড়তে।
সুন্দর করে জীবন টাকে
পারিনি আমি গড়তে।
ইস্কুলে যেতে নিষেধ করে
মা,করেছে অনেক ভুল।
পড়তে বসলে টেবিলে মা,
টেনে ধরতো মাথার চুল।
সব সময় বলতো মা,
মেয়েদের করতে হয় কাজ।
ইস্কুলে যেতে তোর কি
করে না একটু ও লাজ।
মেয়েদের বেশি করতে নেই
ইস্কুলে পড়া লেখা।
রাস্তা ঘাটে চলতে গেলে
ছেলেদের সঙ্গে হবে দেখা।
এ সব বলে মা,আমার
কেটে দিল জীবনের ডানা।
লেখা পড়া করতে মা,
করতেন শুধুই যে মানা।
শশুর বাড়ী গেলে তো
ঠেলবি চুলার জাল।
তখন বুঝবি তোর অবস্থা
হবে কেমন হাল।
কবি কারিমা খাঁন দুলারী, খুলনা জেলার ফুলতলা ইউনিয়ন দক্ষিণ ডিহি গ্রামে এক মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন, ১৬ ডিসেম্বর ১৯৮৯ সালে। তাঁর নিজ বাবার বাড়ীতে, ৬ ভাই তিন বোন তিনি ৬ নাম্বার। পিতার নাম মোঃ নুর হোসেন এবং মাতার নাম আনোয়ারা বেগম। ছোট্ট বেলা থেকে সাহিত্য অনুরাগী নিজের লেখা গান গেয়ে বন্ধু বান্ধবীদের ইস্কুল জীবনে খুব বিনোদন দিতেন। কবিতা তাঁর মনের স্পন্দন।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.