নিম্নে দুজন লেখকের লেখা প্রকাশ করা হলো।...
লেখক - রতন বসাক
গরম আছে বলেই ঠান্ডাকে আমাদের ভালো লাগে। আবার শীত ঋতুতে প্রচন্ড শীত পড়লে গরমকে আমাদের ভালো লাগে। তবে কোন কিছুই মাত্রাতিরিক্ত ভালো নয়। গরম কিংবা ঠান্ডা যাই হোক না কেন, সেটা পরিমাণ মতো হলে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য ভীষণ উপযোগী হয়। তাই দুটোরই আমাদের প্রয়োজন আছে। আমাদের এই পৃথিবীতে কোন স্থানে প্রচন্ড গরম আবার কোন স্থানে বরফের মতো ঠান্ডা আবহাওয়া অবস্থান করে।
বহু যুগ আগে মানুষ পশু পাখিদের মতোই বন জঙ্গলে বসবাস করত। তখন এই পৃথিবীর উষ্ণতার মধ্যে একটা ভারসাম্য ছিল। বিভিন্ন ঋতুর পরিবর্তন হতো। গ্রীষ্মকালে তখন এতটা তাপমাত্রা ছিল না, আজ যতটা তাপমাত্রা আমরা অনুভব করছি। সভ্য হওয়ার সাথে সাথে মানুষ বন জঙ্গল কেটে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করল। ফলে এই পৃথিবীতে সবুজায়নের কম হতে থাকল।
মানুষ তার নিজের প্রয়োজনে বন জঙ্গল কাটার জন্য পৃথিবীতে উষ্ণতার পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়তে লাগল। কিছু বছর আগেও এতটা উষ্ণতার বৃদ্ধি পায়নি আজ যা আমরা দেখছি। এই উষ্ণতা বৃদ্ধির অনেক কারণ আছে। যার জন্য আমরা অর্থাৎ মানুষরাই দায়ী। আমরা নিজেদের স্বার্থ ও সুবিধার জন্যই পরিবেশের খেয়াল না করে পরিবেশকে দূষিত করে চলেছি।
শিল্পের বিপ্লবের ফলে বিভিন্ন কলকারখানা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে অবিরত। এ সি ও বিভিন্ন যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়াও পরিবেশকে দূষণ করে চলেছে। এছাড়া আমরা গাছ না লাগিয়ে, বড় গাছকে কেটে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছি। ফলে মাটির ক্ষয় রোধ হচ্ছে না ও অক্সিজেনের কম হচ্ছে। পৃথিবীতে সবুজায়ন কমে যাওয়ার ফলে বৃষ্টির পরিমাণও ধীরে ধীরে কমে আসছে। সময়মতো বিভিন্ন ঋতুর প্রভাবও আমরা অনুভব করতে পারছি না।
আমরা জানি যে এই পৃথিবীতে তিন ভাগ জল ও এক ভাগ স্থল আছে। সেই জল কঠিন বরফ আকারে থাকার ফলে পৃথিবী এখনো ঠিক আছে সম্পূর্ণ জলে ডুবে যায়নি। কিন্তু অতি সম্প্রতিক উষ্ণায়নের ফলে সেই বরফ গলতে শুরু করেছে। এবং সমুদ্রে জলের পরিমাণও অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। উষ্ণায়নের ফলে এইভাবে যদি কঠিন বরফ গলতে থাকে, তাহলে আগামীতে সমগ্র পৃথিবীটাই জলের তলায় চলে যাবে। এই আশঙ্কা করছে পরিবেশবিদ বৈজ্ঞানিকরা।
তাই সময় এসেছে আমাদের অর্থাৎ মানুষকে ভেবে দেখার। এই এক ভাগ স্থল ও আগামীর প্রজন্মকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে, এখনি আমাদের তার ব্যবস্থা করে যেতে হবে। অবহেলা করলে আগামীতে প্রত্যেকটা প্রাণীর জীবন আশঙ্কায় থাকবে। তাই সময় থাকতে বিশ্বের প্রত্যেকটা মানুষকে এর জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। এই পৃথিবীতে উষ্ণতার হাত থেকে বাঁচাতে পারলেই, তবে আমরা নিরাপদে থাকতে পারব।
প্রথমেই বিভিন্ন কলকারখানা থেকে যে বিষাক্ত ধোঁয়া নির্গত হচ্ছে, তা যেন পৃথিবীর বুকে নেমে না আসতে পারে, তার ব্যবস্থা করতে হবে। দূষিত জল ও নোংরা আবর্জনা ফেলে নদ-নদী গঙ্গা ও সাগরকে নষ্ট করা যাবে না। গাছ আমরা প্রয়োজনে কাটব, তবে একটা গাছ কাটার আগে কমপক্ষে চারটে গাছ ফাঁকা স্থানে লাগাতে হবে। আমরা যে বিভিন্ন ফল ও শাকসবজি খাই, তার বীজ সংরক্ষণ করে বর্ষার আগে বাড়ির আশেপাশে ও রাস্তার দুই ধারে লাগিয়ে দিতে হবে।
এইভাবে আমরা প্রত্যেকেই যদি পৃথিবীকে ভালোবেসে পৃথিবীর যত্ন ও পরিচর্চা করি, তবে নিশ্চয়ই উষ্ণতা অনেকটাই কমবে। পৃথিবীতে রক্ষা করা আমাদের প্রত্যেককে দায়িত্ব ও কর্তব্য হিসেবে নিতে হবে। আর অজ্ঞজনেদের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা বুঝিয়ে বলতে হবে। শুধু ভাষণ বা ভালো কথা লিখে ও বলে নয়, বাস্তবে প্রত্যেককেই করে দেখাতে হবে। তবেই পৃথিবীর উষ্ণতা কমবে ও আমরা তথা সমগ্র প্রাণীকুল এই পৃথিবীতে ভালো থাকব।
[caption id="attachment_12367" align="alignnone" width="2560"] গরম নিয়ে প্রবন্ধ ও কিছু কথা | গরম সমস্যা সমাধানে উপায়[/caption]
~ মিরাজুল ইসলাম হাদী
সূর্যের প্রখর তাপদাহে আজ বাংলার জমিনের প্রতিটি অঞ্চল হাহাকার করছে। সূর্যের তেজস্বিনী তাপে যেন রাস্তায় ছাতা ছাড়া বের হওয়া হয়ে উঠেছে দায়। এই প্রখর তাপ আর অতিরিক্ত তাপমাত্রার দরুন গত ২০ এপ্রিল থেকে আজ ২৪শে এপ্রিল পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাড়িয়েছে ৩৩ এর কোঠায়। তাহলেই ভাবুন ভয়াবহতা কতটুকু। তাপমাত্রা হ্রাসের জন্য এবং পরিবেশ শীতল করার জন্য গ্রহণ করা হচ্ছে নানাবিধ পদক্ষেপ। সূর্য থেকে পৃথিবীর দূরত্ব প্রায় ১৪.৯৬ কোটি কিলোমিটার বা ১ নভো মিটার। সূর্য পৃথিবী থেকে এত দূরত্বে অবস্থান করা সত্ত্বেও এর তাপে আমাদের জীবন ওষ্ঠাগত হওয়ার অবস্থা। সূর্যের এই সামন্য তাপমাত্রা থেকে ছাড়া পাওয়ার জন্য আমাদের কতই না আয়োজন। ফ্যান, এসি আরও কত কি যে আমরা ব্যবহার করি এর গরম থেকে মুক্তির জন্য।
তাপমাত্রা সামন্য কয়েক ডিগ্রি বৃদ্ধি পেলে আমরা অধৈর্য্য হয়ে যাই এ তাপদাহ থেকে উত্তরণের জন্য। আমরা কত চেষ্টাই না করি এ গরম থেকে মুক্তির জন্য। গত কয়েকদিনের অত্যধিক গরমের দরুন অনেক অঞ্চলে আয়োজিত হয়েছে ইস্তিস্কায়ের সলাত।
আমরা পৃথিবীর এই গরম- উত্তাপ থেকে উত্তরণ বা মুক্তির আশায় যে এত আয়োজন করছি কিন্তু কখনো কি একবারের জন্যেও এত ব্যতিব্যস্ত হয়েছিলাম পরকালের সেই উত্তাপ থেকে মুক্তির জন্য। কিয়ামত দিবসে সূর্যের অবস্থান নিয়ে মিকদাদ (রা.) বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কিয়ামত দিবসে সূর্যকে মানুষের এত কাছে আনা হবে যে তা মাত্র এক অথবা দুই মাইল ব্যবধানে থাকবে।
বর্তমানের ১৫ কোটি কিলোমিটারের ঝলসানো তাপে আমাদের নাভিশ্বাস অবস্থা আর কিয়ামত দিবসের সেই কঠিন আজাবের দিনে তা থাকবে মাত্র এক কিংবা দুই মাইল উপরে।
সূর্যের এই অত্যধিক তাপের প্রতিফলনে আমাদের জন্য রয়েছে ব্যাপক শিক্ষা। আল্লাহ রব্বুল আলামীন কুরআনুল হাকীমে বলেছেন,আর তিনি তোমাদের জন্য নিয়োজিত করেছেন রাত ও দিনকে এবং সূর্য ও চাঁদকে এবং তারকাসমূহও তাঁর নির্দেশ পালনে নিয়োজিত। নিশ্চয়ই এতে অনেক নিদর্শন রয়েছে এমন কওমের জন্য যারা বুঝে।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২)
আমাদের উচিত সূর্যের এই প্রখর তাপের উপলব্ধি করা। দুনিয়ার এই সামন্য সূর্যের তাপ যদি আমাদের সহ্য না হয় তাহলে কিভাবে সেই কিয়ামতের দিনের সূর্যের তাপ আমাদের সহ্য হবে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর ফজর বিধানগুলো যথাযথ জানা ও তা অনুযায়ী আমল করা।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.