গল্পঃ জীবন সংগ্রামে রুপকথা!
লেখিকা নিশীতা সুলতানা শিল্পী
দ্বিতীয় পর্ব
রুপকথাদের ঘরটা ছিল ছোট খুব ছোট, বাঁশের তৈরি দৌ-চালা। হঠাৎ হাবিব (রুপকথার বাবা) শুয়ে পড়ে শরীর প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করছেন ওই যে ঘাতকদের মারের আঘাত আবার ও শরীরে ভিড় করতেছে। রুপকথার বাবার জন্য খাবার এনে খাটের এক কোণায় রাখে রুপকথার মা! আহ কি নির্মম সেই খাবার আর খাওয়া হলো না হাবিবের। আর সেই শোয়া থেকে উঠা হলো না। 'হাবিব' বলতেছেন শরীরে প্রচুর ব্যাথা হচ্ছে,নিশ্বাস নিতে পারছে না, এক পর্যায় কথা বলা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ক্ষনিকের মধ্যে শরীরের প্রতিটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বন্ধ হয়ে গেলো। পাশে ছিল বড় ছেলে। রুপকথার মায়ের চিৎকার শুনে ছুটে আসে বাড়ির এবং আশেপাশের অনেক মানুষ। ঘুম ভেঙ্গে যায় রুপকথার ছুটে আসে বাবার পাশে। শুধু বলতে শুনা যায় আমার ছেলে-মেয়েদের দেখে রেখো।।
চারিদিকে প্রচুর বৃষ্টি-বজ্রপাত হচ্ছে। আহ কতটা অসহায়ত্ব হয়েছে, এক নিমিষেই তলিয়ে গেলো বিশাল সাগরে যেখানে গেলে মানুষ আর ফিরে আসে না।
বাড়ির অনেকেই রুপকথার মেজো কাকু কে ডাকে কিন্তু, নিয়তির কি নির্মম পরিহাস মেজো কাকুর ঘর থেকে একটাই আওয়াজ আসে "আরে দেখ হেতে হয়তো বং (ঢং করতেছে) ধরে শুয়ে আছে,মরে নি"
আহ কতটা নিচু মনের মানুষ হলে এ ভাবে মানুষের মৃত্যু নিয়ে কথা বলতে পারে।
কেউ ডাক্তার নিয়ে আসে কেউ হসপিটালে নেয়ার জন্য চেস্টা করে, কিন্ত তখন যে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ডাক্তার উনাকে দেখে বলে দিলো হসপিটালে নিয়ে লাভ নেই কাকু আর এই দুনিয়াতে নেই।
কারো বিশ্বাস হচ্ছে না হাবিব (রুপকথার বাবা) মারা গেছেন, কেউ বলে এই মাত্র দোকান থেকে বাড়িতে সুস্থ অবস্থায় ফিরলো,কেউ বলে এই মাত্র রাস্তায় কথা বলে আসলো ক্ষনিকের মধ্যে কি হয়ে গেলো।
প্রায় এক ঘন্টা পর মেজো কাকু বের হয়ে আসে, হাইরে মানুষ, রুপকথার বড় জেঠু ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়। কারণ ওই অবস্থায় ও রকম কথা কতটা কষ্টের তা একমাত্র ভুক্তভোগীরাই উপলব্ধি করে।
শত শত মানুষদের ভিড়, রুপকথা ছোট হলেও তারা বাবা যে আর দুনিয়াতে নেই সেটা বুঝতে পারছে, সেও অঝোর নয়নে কাঁদছে, খুব কাঁদছে। তার বড় এক আপু তাকে কোলে নিয়ে কাঁদছে। তার মা পাগলের হয়ে যায় অজ্ঞান হচ্ছে বার বার। কিন্ত কিছু যে করার নেই, আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন যখন যাকে খুশি তাকেই দুনিয়ার বুক থেকে তুলে নেন হুম এটাই নিয়ম এটাই চরম বাস্তবতা।। তবুও এই বিশাল সত্য মেনে নেয়া কঠিন।
তাৎক্ষনিক নিয়ে যায় রুপকথার আম্মুকে হসপিটালে। নেমে আসে রুপকথার পরিবারে দুঃখের প্লাবন, সব সুখ এক নিমিষেই তলিয়ে গেলো। সেই থেকে শুরু হয় অসুস্থতার বড় ক্ষত।
এভাবেই দিন যায় মাস যায়।
হঠাৎ একদিন, রুপকথার নানা ভাই আসে তার আম্মুকে নিয়ে যাওয়ার জন্য কিন্ত, ভদ্রমহিলা নিজের বাবার সাথে রাগারাগি করে অনেক চেষ্টার পর বুঝিয়েছেন উনি ছেলে মেয়েদের ছেড়ে কোথাও যাবেন না। দ্বিতীয় বিবাহের কথা উনি ভুল করেও ভাববেন না।
খুব কম বয়সে উনি স্বামী হারা হয়েছেন।
বছর খানেক পর শুরু করেন ছেলে মেয়েদের নিয়ে বাঁচার লড়াই,জীবনের তাগিদে, ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের সঠিক পথে চালানোর, সঠিক পথ খুঁজে দেয়ার চেষ্টায়। আসলে পরিবার টা ছিল অত্যন্ত দরিদ্র পরিবার। যদিও রুপকথার নানুদের কোনো কিছুর অভাব নেই, জায়গা-জমি বিশাল এক আবাসস্থল উনাদের, কিন্তু তিনি তার দিকে তাঁকান নি, কি হবে বাবার অর্থ সম্পদ দিয়ে।
নিজের সাথে যুদ্ধ করে ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের বাঁচানোর তাগিদে হাটতে শুরু করে সঠিক গন্তব্যের খোঁজে।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.