হঠাৎ একদিন! সময়টা ছিল নির্বাচনের সময়। একদিন রাতে রুপকথার বাবা বাড়ি ফিরছিলো রাত তখন প্রায় ১০টা। নির্বাচনের সময়, বিশেষ করে সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে। থম-থমে অবস্থা বিরাজ করছে, কেউ কেউ রাতের আঁধারে পোস্টার লাগানো নিয়ে ব্যস্ত।
রুপকথার বাবার হাতে একটা কাপড়ের ব্যাগ ছিল। কিন্তু,কিছু কুচক্রী সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে ভদ্রলোক (রুপকথার বাবা) রাতের অন্ধকারে কারো চেহারা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল না তবুও কিছু চেহারা পরিস্কার।।
কিছু না বলে না জিজ্ঞেস করে, অন্যায় ভাবে, পেছন থেকে এসে ভদ্রলোক কে এলোপাথারী মারতেছে, ছয় কি সাতজন মিলে। অনেক চেস্টার পরও নিজেকে ঘাতকদের হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন নি, তিনি কিছু বলতে যেও বলতে পারছে না, দম যেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অন্যায় ভাবে মারতে মারতে একটা সময় আধমরা করে এক হিন্দু বাড়ির সামনে রক্তাক্ত দেহটা রেখে গেলো ঘাতকরা।
এ দিকে মেয়েটার পরিবার অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে সময় চলে যাচ্ছে, কখন তিনি বাড়ি ফিরবেন। রুপকথা আজ তার বাবার হাতেই খাবার খাবে, বায়না ধরেছে তার মায়ের সাথে, বাবা আসলে একসাথে খাবার খাবে। মোবাইলের যুগ ছিল না তখন, চিঠি লিখেছিল আসার আগে! আজই বাড়ি ফিরবে কিন্ত কেন এখনো ফিরছেন না সেই ভাবনা ভাবছে পরিবার।
হঠাৎ এক সময় বাড়ির পাশের কয়েকজন ভদ্রলোক রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময়, রক্তাক্ত দেহটার উপর লাইটের আলো পড়তেই ভয় পেয়ে যায় উনারা,অন্ধকারে মুখের উপর ভালো ভাবে আলো দিয়ে চেহারাটা চিনতে পারে, উনারা আশেপাশের কয়েকজন লোক ডেকে হসপিটালে নিয়ে যায়। এদিকে ছোট্ট রুপকথা না খেয়ে বাবার অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণ পরে বাড়ির উঠোন থেকে ডাকতে শুনা যায় (রাত ১২টা) 'হাবিব'কে কারা যেন মেরে অমুক বাড়ির সামনে রেখে গেছে, কয়েকজন মিলে হসপিটালে নিয়ে গেছে।
কেন যেন আমার মনে হচ্ছে তারা পরিকল্পিত ভাবেই মেরেছে। আহ! রুপকথার পরিবারে নেমে আসলো কালো ছায়ার দাপট।
বড় ছেলে এবং ছোট মেয়ে ফারজানাকে নিয়ে রাতের আঁধারে ছুটে হসপিটালের দিকে।
দীর্ঘ একমাস পর হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরে আসেন রুপকথার বাবা হাবিব। তবে পুরোপুরি সুস্থতা নিয়ে নয় অচল অবস্থায়, নেই আর স্বাভাবিক। পরিবারে শুরু হয়ে দুঃখের প্লাবন।
সময়টা ছিল বর্ষাকাল! চারিদিকে ভরাডুবা পানি। একদিন সকালে হাবিব দোকানে যায়। পরিচিত অপরিচিত সবার সাথে অনেক কথা বলে, হাবিব নামের ভদ্রলোকটা কাউকে পরওয়া না করে কারো কটুবাক্যে কান না দিয়ে হঠাৎ করেই বড় বড় কন্ঠে তার ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা বলেই যাচ্ছে। দোকানে উপস্থিত সকলে অভাক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে কথা শুনছে সবাই। উনি বলে যাচ্ছেন, যদি কখনো উনি মারা যায় উনার ছেলে-মেয়েদের দিকে খেয়াল রাখতে। একপর্যায়ে এক ভদ্রলোক বলে উঠে থাক আর বলিস না হাবিব! অগ্রিম গর্ব করা ভালো না তাহলে অনায়াসে পা-পিছলে পড়ে যাবে হয়তো।
প্রতি প্রশ্ন উত্তরে হাবিব বললেন, যাই হোক দোয়া রাখবেন, আমার ছেলে-মেয়েরা তাই করবে যা আমি এখন বলে যাচ্ছি। বলতে বলতে সবার সাথে চা খেয়ে হাবিব বাড়ি ফিরে। বাড়িতে ঢুকেই প্রথমে হাবিবের বড় ভাইয়ের ঘরে প্রবেশ করে এবং মেজো ভাইয়ের উদ্দেশ্যে বড় ভাইকে নালিশ করে রাগারাগি করে চলে আসার সময় উনার বড় ভাই বলে, বাদ দে এ সব, ঘরে গিয়ে খেয়ে নে আর ঘুম যা।
হুম আসলেই ঘুম যাবেই তবে সেই ঘুম(অবাক করলো)......
নিজ ঘরে আসার আগেই উঠোনে মেজো ভাইয়ের সাথে রাগারাগি করে। এক পর্যায় মেজোদের মানে রুপকথার কাকাদের ঘর থেকে আওয়াজ আসে
''মরবি না তুই,মরবি না" তখন হাবিব প্রতি উত্তরে বলেন, এইতো আমি তো মরেই যাবো, আল্লাহ আমায় ডাকতেছেন,দুনিয়াতে আজীবন থাকবো না কিন্তু তোমরা ভালো হয়ে যেও"
আসলেই কথাটা শুনতেই বুকটা হাহাকার করেই উঠছে।
সময়টা হবে সম্ভবত সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা বা আটটা। রুপকথা ঘুমাচ্ছে, আসার সময় ছেলে-মেয়েদের জন্য চকলেট নিয়ে আসলো।
হায় আপসোস! কি নির্মম, রুপকথা মা এসে দরজা খুলতে দেখেই হাবিব হাসলো আর নিজে নিজেই মেজো ভাইয়ের সাথে রাগারাগি করার কারণ বলতে বলতে শুয়ে পড়ে।
নিয়মিত পড়ুন এবং লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.