দগ্ধিত ফুলের কতকথা
আতিয়া মাহজাবিন
ফুটে ছিলো শিশুরা সকাল বেলার রোদে,
বুকভরা স্বপ্নে, টিফিনের গন্ধে—
মায়ের ফুঁ দেওয়া ঠাণ্ডা ভাতে
ছিলো নিঃশব্দ সুর,
আজ সে মুখগুলো নিঃশব্দেই ঝরে,
আকাশে ছাই হয়ে উড়ছে দুর্দিনের দূর!
ক্লাসরুমে পেন্সিল পড়ে থাকে নির্বাক,
খাতায় লেখা নামে আজ আগুনের ফাঁক—
অ, আ, ক, খ…
এর মাঝেও ছিলো বাঁচার আকুতি !
কিন্তু আগুন তো শুধু পোড়ায়নি অক্ষর পাতা,
পুড়িয়ে দিয়েছে কণ্ঠ নালির শিরা!
দগ্ধতায় শুধু পুড়লো না শুধু রক্তমাখা দেহ,
পুড়লো বিশ্বাস, পুড়লো পথ-নির্দেশ।
চোখের পাতায় জ্বলছে ছাইয়ের রেখা,
ঘুমন্ত জাতির নাম কী তবে? — “পরাজয়” লেখ?
বুকের উপর ছেলেটি আজ নেই,
খেলনা হাতের, ছুটে আসা সেই!
হোম ওয়ার্ক নিয়ে তার অভিযোগ ভরা কথা,
আজ তার মুখে বারুদের মখমল ধোঁয়ায় ভরা!
শিশুরা পুড়েছে? না, রাষ্ট্র পুড়েছে—
নাকি শুধুই বিবেক আজ ছাইয়ে গড়েছে?
যে আঙুলে লেখা ছিলো “অ, আ” এর স্বপ্ন ধ্বনি,
সেই আঙুল নেই,
রয়ে গেছে শুধু পুড়ে যাওয়া খণ্ডিত ছায়া–ছবি!
খাতার পাতায় লেখা ছিল কত শত স্বপ্ন,
আজ সে পাতায় আগুনের লেলিহান চুম্বন!
তুমি বলো—এটা নিছক দুর্ঘটনা?
আমি বলি—এ তো সুশাসনের ব্যর্থতার ঘৃণ্য গণনা।
যে মা একদিন ফুঁ দিয়ে ভাত ঠাণ্ডা করতো,
আজ সেই মা আগুনে সন্তানের মুখ সেঁকছে!
কী করে বলো ঠাণ্ডা করবে সে এই দগ্ধ শরীর?
যখন হাসপাতালের শীতল বিছানা
শুধুই এক পোড়া লাশের স্নিগ্ধ শীতলতা বরণ করছে?
শাসকেরা শোকবার্তা সাজায় শালীন,
শব্দে তারা কাঁদে, চোখ থাকে লীন।
কিন্তু সেই চোখ কি দেখেছে
এক ফালি ফুলের ঝলসানো চামড়া?
যেখানে শিশুর শেষ, সর্বশেষ আর্তনাদ —
আরো করুণ, আরো ক্ষীণ,
আরো অন্ধকার সুরে ডুবে যায় ব্যর্থ রাষ্ট্রযন্ত্রে!
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.