

নারীরা রাজনীতিতে কেন আসবে? ইসলাম, সমাজ ও বাস্তবতার নতুন পাঠ
একটা প্রশ্ন আজও বহু মেয়ের মনকে ধাক্কা দিয়ে যায়... রাজনীতিতে কি মেয়েদের আসা উচিত? ইসলাম কি অনুমতি দেয়?
বিশেষ করে ইসলামী মূল্যবোধে বেড়ে ওঠা এবং বিভিন্ন সংগঠনে যুক্ত হাজারো তরুণী প্রায়ই নিজেদের মধ্যে এই আলোচনা করে। তাদের চোখে স্বপ্নেরা খেলা করে , সমাজ পরিবর্তনের তাগিদে ভাসমান নদীতে নৌকা চলে , কিন্তু তাদের সুপ্ত প্রতিভা বিকশিত করার দ্বিধাও আছে ইসলাম কি সত্যিই পথ বন্ধ করে দিয়েছে?
এই বিভ্রান্তির জবাব খুঁজতে গেলে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় সমস্যাটা আসলে ধর্মে নয়, সমস্যাটা জ্ঞান না থাকার মধ্যে। বহু ভুল ধারণা, সামাজিক ব্যাখ্যা আর অল্প শোনা বক্তব্য মিলিয়ে নারীর রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে ভুল সিদ্ধান্ত তৈরি হয়।
ভুল ধারণার জন্ম কোথায়? অনেকেই ভাবে “নারী নেতৃত্ব হারাম...সুতরাং রাজনীতিও হারাম।” কিন্তু ইসলামে “নেতৃত্ব” বলতে সবকিছু বোঝানো হয়নি। রাসূল ﷺ শুধুমাত্র খিলাফত বা রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ শাসক পদের ক্ষেত্রে নারীদের নিরুৎসাহ করেছেন। কিন্তু সমাজ, প্রশাসন, নীতি নির্ধারণ, জনকল্যাণ এসব দায়িত্বের ক্ষেত্রেই কোনো নিষেধ নেই। আজকের রাজনীতির প্রকৃত কাঠামো হলো সমাজকে সংগঠিত করা, নীতি প্রস্তাব দেওয়া, মানুষের অধিকার রক্ষা করা, জনসেবামূলক কাজ করা। এগুলোকে “রাষ্ট্রপ্রধান” বলা যায় না।
ইসলামের ইতিহাস: নারী নেতৃত্বের জীবন্ত উদাহরণ পুস্তক খুললেই দেখা যায়,ইসলামী সমাজের ভিত্তি গঠনে নারীরা নেতৃত্ব দিয়েছেন, সিদ্ধান্তে যুক্ত হয়েছেন, রাষ্ট্রিক কাজে অংশ নিয়েছেন।
হুদাইবিয়া সন্ধির সংকটময় মুহূর্তে নবীজি ﷺ কে রাজনীতিক সিদ্ধান্তে পথ দেখিয়েছিলেন। সেই পরামর্শ গ্রহণের পরই পরিস্থিতি শান্ত হয়।
তিনি হাদিস শিক্ষা, রাষ্ট্রীয় পরামর্শ, বিচারিক মত সবকিছুতেই কর্তৃত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। পুরুষ সাহাবীদের বড় অংশই তার কাছ থেকে শিখেছেন।
উমর (রা.) তাকে মদিনার বাজার তত্ত্বাবধায়ক বানিয়েছিলেন। এটি বর্তমান প্রশাসনের ভাষায় একটি "মহাপরিচালক পর্যায়ের" পদ।
এসব ইতিহাস প্রমাণ করে নারীরা শুধু উপস্থিতই ছিলেন না, তারা রাষ্ট্র ও সমাজ পরিচালনার অংশ ছিলেন।
তার চেয়েও বড় কথা কুরআন নারী–পুরুষ উভয়কে একই দায়িত্ব দিয়েছে:
“মুমিন নারী ও মুমিন পুরুষ তারা একে অপরের সহায়ক; সৎ কাজে নির্দেশ দেয়, অসৎ থেকে নিষেধ করে।”
(সূরা তাওবা: ৭১)
এখানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে
শুধু পরিবার নয়, পুরো সমাজকে ঠিক রাখার। এই দায়িত্বের বড় অংশই রাজনীতি, নীতি–নির্ধারণ এবং সামাজিক নেতৃত্ব।
আজকের রাজনীতির প্রয়োজনীয়তা: নারীর চোখেই সমাজের সঠিক প্রতিচ্ছবি আজকের রাজনীতির বড় অংশই ব্যক্তিগত ক্ষমতা নয়,বরং আইন–প্রণয়ন শিক্ষা নীতি
নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা সামাজিক উন্নয়ন পরিবার–সমস্যার সমাধান,স্বাস্থ্য, শিশু, কল্যাণ নীতি সমাজের কণ্ঠস্বর হওয়া।
এসব ক্ষেত্রে নারীর অভিজ্ঞতা ও দৃষ্টিভঙ্গি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একজন নারী জানে একটি স্কুলে স্যানিটেশন না থাকলে মেয়েদের কী সমস্যা হয়,প্রসব পরবর্তী সেবায় কী ঘাটতি আছে,নারী–নিরাপত্তার কোথায় ভাঙন,গ্রামে একা চলার ভয় কেমন, অভিভাবকের দুশ্চিন্তা কেমন।এই অভিজ্ঞতাগুলো নীতি তৈরি করতে অপরিহার্য। পুরুষের দৃষ্টিকোণ এই অভিজ্ঞতাকে পুরোপুরি ধরতে পারে না।
“রাজনীতি মানেই ফিতনা” এ ধারণা কতটা যুক্তিহীন?
রাজনীতি নিজে ফিতনা নয়। মানুষ যদি নীতিহীন হয়, রাজনীতিও নষ্ট হয়। কিন্তু নৈতিক রাজনীতি যা ন্যায় প্রতিষ্ঠা করে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায় তা তো ইসলামেরই শিক্ষা।
ইসলাম বলে অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলতে, অবহেলিতকে সাহায্য করতে, সমাজকে সৎ পথে পরিচালনা করতে। এসব দায়িত্ব রাজনীতিরই অংশ।
নারী রাজনীতিতে আসা এক জরুরি সময়ের দাবি, সমাজ বদলাতে হলে নারীর অংশগ্রহণ অপরিহার্য। রাজনীতিতে নারীর অংশগ্রহণ মানে
ন্যায় প্রতিষ্ঠা, সামাজিক কল্যাণ, নতুন প্রজন্মের নিরাপত্তা, ইসলামী মূল্যবোধে সমাজ গঠন, দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো
ইসলাম নারীর রাজনীতিতে আসা নিষিদ্ধ করেনি, বরং সঠিক আদব ও পর্দা বজায় রেখে এই ক্ষেত্রকে নারীর জন্য উন্মুক্ত রেখেছে।
আজকের বিশ্বে নারীদের রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ শুধু বৈধ নয়, বরং সমাজ, রাষ্ট্র ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কল্যাণে অত্যন্ত প্রয়োজন।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.