পীরে কামেল বইয়ের রিভিউ
বইয়ের নাম : পীরে কামেল
লেখিকা : উমেরা আহমেদ
অনুবাক : সাদমান সিদ্দীক
প্রকাশনী : ইজরা পাবলিকেশন্স
পৃষ্ঠা সংখা : ৬২৯ (দু’খণ্ড)
মুদ্রিত মূল্য : ১০৭৬৳ (দু’খণ্ড)
ফটোগ্রাফিক ও রিভিউ : আতিয়া মাহজাবিন
মানুষের জীবনে কখনো কখনো এমন একটি পর্যায় আসে , যখন স্থবির হয়ে মানুষ উপলব্ধি হয় যে তাদের ঠোঁট ও হৃদয় থেকে নির্গত দোয়া প্রভাবহীন হয়ে গিয়েছে । মনে হয় যে তাদের এক গভীর সম্পর্ক ছিল , আর তা ভেঙে গিয়েছে । ঠিক তখনই মানুষ পীরে কামেল এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে । যিনি তার হয়ে হাত তুলে কায়মনোবাক্যে দোয়া করে আল্লাহর নিকট পাঠিয়ে দিবে । যিনি তার হয়ে রবের দরবারে রোনাজারি করবে । পীরে কামেলের এই অনুসন্ধানই মানুষকে প্রত্যেক যুগে , প্রতিটি প্রেরিত পয়গম্বরদের নিকট নিয়ে গিয়েছে । অতঃপর , এই নবুয়তের ধারা মুহাম্মাদ (সাঃ) এর নিকট গিয়ে সমাপ্ত হয় । তিনিই শেষ পীরে কামেল । তিনি এমন একজন যার ভালোবাসায় সত্যান্বেষীরা ত্যাগ করে তাদের জীবনের সবটুকু মোহ ।
“পীরে কামেল” বইটি এমনই এক ভালোবাসার নাজরানার পটভূমিতে রচিত হয়েছে । পীরে কামেলের প্রতি সবটুকু ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়েছে ।
❐ কাহিনীর প্রেক্ষাপট ও পর্যালোচনা :
উপন্যাসের প্রধান চরিত্র হলো ইমামা হাশেম ও সালার সিকান্দার । ইমামা ছিল ধনাঢ্য কাদিয়ানী পরিবারের সন্তান যারা গোলাম আহমাদ কাদিয়ানীকে নবী হিসেবে মানতো । এমন একটি জঘন্য আকিদা ও দলের আমির ছিল ইমামার বাবা হাশেম মুবিন আহমদ । ইমামা এই জঘন্য ও মিথ্যে আকিদার কবল ছিঁড়ে, বিবেকের যাকে কুরআনের সান্নিধ্যে আসে । এই কুরআনই তাকে ইসলামের সুশীতল সুনির্মল পথের সন্ধান দেয় । একমাত্র রাসূল (সা:) কে শেষ পয়গম্বর হিসেবে বিশ্বাস করার জন্য তার উপর নেমে আসে পারিবারিক চরম বিভীষিকা । সেই কঠিন মুহূর্তেই ইমামাকে সঙ্গ দেয় সালার সিকান্দার । সালার ছিল পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার ২.৫% মানুষের অন্তর্গত, যাদের আইকিউ লেভেল ১৫০ থেকেও বেশী । যার ফলশ্রুতিতে সে সব রকমের আজগুবি কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত থাকতো । আর , ইমামাকে সাহায্য কে সে শুধুমাত্রই অ্যাডভেঞ্চার হিসেবেই নিয়েছিল । সালার খুঁজে বেড়াতো দুঃখ অথবা সুখের চূড়ান্ত পর্যায় ।
“পীরে কামেল” এমন একটি উপন্যাস যেখানে পাবেন আপনি বিলাসিতায় থেকে সত্য-সন্ধান ও গ্রহণের এক দুর্বার তাড়না । পাবেন পাপাচারে মত্ত হয়ে শ্বেতশুভ্র ইমানটুকুও হারিয়ে ফেলার সম্ভাবনা । অতঃপর , হারাতে হারাতে দ্বিগুণে তেজে ফিরে পাওয়ার প্রস্তাবনা । পৃথিবীর অসংখ্য মানুষের অগণিত ধারণার সংমিশ্রণ খুঁজে পাবেন এখানে । সবশেষে, পাবেন নির্ভুল এক পথে নিশ্চিন্ত মনে ব্যক্তিগত জীবন দর্শনে ফিরে যাওয়ার অনুপ্রেরণা ।
❐ পাঠ অনুভূতি :
“পীরে কামেল” বইয়ের নাম প্রথম যেদিন দেখেছিলাম, সত্যি বলতে সেদিন অতোটাও আগ্রহ পেয়েছিলাম না । তাই আর এই বই নিয়ে ঘাটাঘাটি করিনি । পরবর্তীতে, একদিন উপন্যাসের কাটিং একটা অংশ পড়ে এই বইয়ের ব্যাপারে খোঁজ নিয়েছিলাম । আশ্চর্যজনকভাবে , মূল বইয়ের রিভিউগুলো ছিল অসাধারণ । বলা হয়ে থোকে , এটি উর্দু ও ইংরেজী ভাষায় লেখা উপন্যাসগুলোর মাঝে জনপ্রিয়তার শীর্ষে । তারপর আর কী ! বইটা কেনার আগ্রহ হয় । বিপত্তি ঘটেছিল তখন, যখন জেনেছিলাম অসম্পূর্ণভাবে কেবলমাত্র এক খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে তখন । তাই , আপাতপক্ষে ঔ বইয়ের চিন্তা মাথা থেকে ঝেঁড়ে ফেলি । কেননা, আমি খুব ভালো করেই জানি যে একবার নেশা উঠলে দ্বিতীয় খণ্ড ছাড়া আমায় আধপাগলা হয়ে থাকতে হবে । তারপর, এক রকম ভুলেই গিয়েছিলাম এর কথা ।
কিন্তু, হঠাৎ করে আবার একদিন বইটা সামনে আসে । অনলাইন জগৎ বইয়ের হওয়ার ফলাফল ! তবে, এবার জানতে পারি যে, ২য় খণ্ড প্রকাশিত হচ্ছে । আর , প্রকাশনী ডিসকাউন্টে প্রি-অর্ডার নিচ্ছে । খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, দাম নাকি আবার বাড়বে । তাই আর কি করার ! ফাঁকা পকেটের কথা চিন্তা করে দিয়ে দিলাম অর্ডার । কিন্তু , এবার অর্ডার করি হিউরার আইডি থেকে । চুরি আরকি ! কোনো রিস্ক নেই নি ! কত্ত ঝামেলা ! এবার সব ঝামেলা ঐ মহাশয়াই সামলিয়েছে ।
সেদিন বিকেলে এসে জনাবা বই দিয়ে যায় । তখন ছিল তীব্র শীত । লেপের নিচে কভার খুলে একবার নতুন বইয়েন ঘ্রাণ নেই । আহহ ! চুরি করা জিনিস নাকি স্বাদের !
দু’খণ্ড, মোট ৬১৯ পৃষ্ঠা । সন্ধ্যা পর শুরু করলাম , ফজরের আগেই শেষ । উফ ! বই বন্ধ করার পর তাল মাতাল লাগছিল । ধূরু ! শেষ কেন হলো ?
সত্যি হলো , বই নিয়ে কাহিনীর প্রেক্ষাপট দেখে ভেবেছিলাম, নসীম হিজাজীর বইয়ের মতো হবে । কিন্তু, উমেরা আহমেদের লেখা আর সাদমান সিদ্দীক ভাইয়ের শব্দ শৈলী একটি বারের মতোও থামতে দেয়নি আমায় । মনেই হয়নি যে এটা অনুবাদ করা বই । বই পড়তে গিয়ে কিছু কিছু জায়গায় রাতে মাঝে মাঝে ভয় পেয়ে ভেবেছি যে , এখন যদি হেসে ফেলি, তাহলে নিশ্চিত কপালে দুঃখ আছে । আহ ! সব অনুভূতিরই সংমিশ্রণ ছিল । তাই, পাঠিকাদের উদ্দেশ্যে বলবো যে, চোখ বন্ধ করিয়া আমার মতো টুক্কুস করে নিতে পারেন বইখানা । বুঝলেন ?
এবার বলি ক্ষুব্ধজনিত কথা । মাঝরাতে মেজাজ সপ্তমে পৌঁছেছিল তখন , যখন দেখি বইয়ের ৩ জায়গায় ১/২ করে না ১০/১৫ পৃষ্ঠা করে নেই । পড়তে সমস্যা হয়নি । কিন্তু, কষ্ট লাগছিল ভীষণ । বরাবরই আমি বইয়ের ব্যাপারে ভীষণ খুঁতখুঁতে । রাত ২টায়ই ভেবেছিলাম যে, ফজরের সালাত শেষেই আগে ইজরা পাবলিকেশন্স কে নক করে রাগ ঝাড়বো । কিন্তু, নিজেকে বহুত কষ্টে বুঝিয়েছিলাম , “এতে ওনাদের কোনো হাত নেই । ভুলবশত ভুলটা আমার নিকটই এসেছে ।” তবুও, ইজরার প্রতি কৃতজ্ঞতা, বইয়ে অনুবাদকের অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য । আমার স্পেশাল বইগুলোতে থাকে বরাবরই অটোগ্রাফ থাকে । অটোগ্রাফটা বইয়ের পূর্ণতা !
ক্রোধের ফলশ্রুতিতে বই পড়াকালে ভেবেছিলাম যে রিভিউ দিব যে, বই ভালো , তবে অতোটাও না ! কিন্তু, বই শেষে আমি তৃপ্তির শ্বাস ফেলেছিলাম । গভীর প্রশান্তির !
সুতরাং, দৃঢ় ও প্রশান্তি চিত্তে এই বলেই সমাপ্তি টানছি যে,
“পীরে কামেল” বই পড়ে আমি সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত !
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.