বাবা তুমি সফল
ছোট বেলা থেকেই বাড়ির পাশের একটি প্রাইমারি স্কুলে পড়তাম। কিন্তু স্কুলের পড়ার মান এবং শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কম হওয়াই তৃতীয় শ্রেণি পাস করার পর চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য আম্মু আমাকে বাড়ি থেকে দূরের একটি প্রাইমারি স্কুলে ভর্তির জন্য নিয়ে যান। পূর্বের স্কুলে আমার রোল নাম্বার তিন হলেও সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর ও শারীরিক গঠন ছোট হওয়াই পরবর্তী ক্লাসে আমাকে ভর্তি নিতে চাইছে না। তখন আম্মু, আব্বুকে কল দিয়ে স্যারের সাথে কথা বলিয়ে দেন। তখন স্যার আব্বুর কথা শুনে ভর্তি নিতে রাজি হয়। নতুন স্কুলে ভর্তির পর আম্মু আমাকে শিখাই দিয়ে ছিল যে কারো সাথে মারামারি করবি না। সবার সাথে মিলেমিশে থাকবি। সবকিছু সুন্দর ভাবে চলছিল কিন্তু ক্লাস অষ্টম শ্রেণিতে থাকা কালে একদিন আমি আমার নিজের মতো তাড়াতাড়ি হেঁটে চলে আসতে ছিলাম। কারণ বাবা সারাদিন দোকান করতেন। তাই বাবাকে দোকানের কাজে সাহায্য করার জন্য প্রতিদিনের ন্যায় ঐদিনও নিজের মতো তাড়াতাড়ি চলে আসতে ছিলাম।
কিন্তু আমার এই ভাবে প্রতিদিন তাড়াতাড়ি স্কুল থেকে বাড়িতে আসা আমার এক বন্ধুর ভালো লাগত না। আমি যখন একা একা তাড়াতাড়ি চলে আসছিলাম তখন আমার বন্ধু আমাকে পিছন দিকে জোরে একটা ঘুষি মারে। এবং গালি গালাজ করে। আমি তাকে কিছু বললাম না। বাড়িতে এসে আমার মুখ কালো দেখে আম্মু আব্বু বুঝে গেছে কিছু একটা হয়েছে। আম্মু জিজ্ঞেস করাতে বললাম কি কি হয়েছে। আব্বুও পাশে ছিল কিন্তু আব্বু কিছু বলল না। পরে আমার আব্বু তার আব্বুকে সব বলার পর এখন পর্যন্ত চোখ তুলে থাকানোর সাহস পায় নাই। আজ বাবা নেই ছয় বছর কিন্তু আব্বুর না থাকাইও আব্বুকে স্মরণ করি সবসময় । বছরের নির্দিষ্ট একটা দিন বাবা দিবস পালন করলেও আমার কাছে প্রতিটা দিনই বাবা দিবস। আব্বু কথাই নয়, কাজে বিশ্বাসী ছিলেন। তাই না বুঝে কোথাও কথা বলতেন না। পরিবারের মধ্যে বাবা একমাত্র শিক্ষিত ছিল। তাই বাবার সাথে সবার একটা ভালো সম্পর্ক ছিল।
বাবা থাকার কারণে অনেক কঠিন কাজও সহজ হয়ে গিয়েছিল। সেই ছোট বেলায় স্কুলে ভর্তি থেকে শুরু করে, সবার বদ নজর থেকে আমাকে রক্ষা করা সহ বাবা এক নিরব প্রতিসেধকের নাম ছিল। কার সাথে কীভাবে চলতে হবে, কথা বলতে হবে, সমস্যার সমাধান করতে হবে, কিভাবে হাজার সমস্যা মাথায় নিয়েও হাসতে হবে সব বাবার কাছ থেকেই শেখা। কিন্তু আফসোস বাবা নাই আজ ছয় বছর ধরে আজও প্রতিটা মুহুর্তে বাবাকে স্মরণ করি। বাবা যে একটা মাথার ওপর ছাদ ছিল সেটা বুঝতে পারি। এছাড়াও মানুষের ভালোবাসা কিভাবে অর্জন করতে হবে সেটাও বাবার কাছ থেকেই শেখা। আজও আমার মা, প্রতিটা কাজে বাবাকে স্মরণ করে। কথায় কথায় বাবার উদাহরণ দেয়। মা এখনো রাতের তাহাজ্জুদে ওঠে বাবার জন্য কেঁদে কেঁদে দোয়া করেন। বাবার ভালোবাসা বুকে নিয়েই তাঁর বাকি জীবন পার করে দিচ্ছেন। একজন মানুষ কতটা ভালোবাসলে এমনটা করতে পারে? বাবা তোমাকে কখনো কোনো দিন ভালোবাসি বলা হয় নি কিন্তু তুমি সবসময়ই মোনাজাতে ছিলে। স্ত্রী সন্তানদের ভালোবাসা, প্রতিবেশী আত্মীয় স্বজনের ভালোবাসা সর্বোপরি দেশের মানুষের ভালোবাসা এর চেয়ে জীবনে আর কি লাগে? এটাই তো জীবনের সফলতা। তাই আমি নির্দ্বিধায় বলব,বাবা তুমি সফল।
লেখকঃ ইয়াছিন আরাফাত
শিক্ষার্থীঃ অর্থনীতি বিভাগ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.