মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছোটগল্প অপেক্ষা
কলমে মুহাম্মদ আল ইমরান
নদীর এক তীরে ছৈলা বাগানের কিছুটা পরেই স্কুল। অন্য তীরে খেয়া ঘাটে খোকন হাওলাদারের দোকান। সেখানে বসে রেডিওতে খবর শুনছে জহির, সবুজ, রঞ্জন ও সোহেল নামের মধ্য বয়সের কয়েকজন। কিছুক্ষণ পরেই সেই কন্ঠ ভেসে উঠে, যেই কন্ঠ শুনেছিল ৭ই মার্চে। পরের দিন রাস্তা দিয়ে অতি তাড়াতাড়ি ফসলের মাঠের দিকে আসলো রাজ্জাক মাস্টার। তার ডাক শুনে জহির ও সবুজ এগিয়ে এলো। তিনি বললেন, “তোমরা শুনেছো ঢাকাতে কাল রাতে মিলিটারিরা আক্রমন করেছে।” জহির অতি চিৎকার দিয়ে বলে, ”এইবার আর চুপ কইরা থাকলে চলবো না। এইবার কিছু একটা করতেই হইবো।” সবুজ বলে, ”৭ তারিখ শেখ সাহেবে কইছে কি মনে আছে তো? আমাগো যা আছে তা লইয়া মিলিটারির মোকবেলা করতে কইছে।” রাজ্জাক মাস্টার বলল, ”আমাদের সকলেরে এক হতে হবে।” ”সবাইরে খবর দিতে আছি।”- বলল জহির। ”আচ্ছা তোমরা আমার বাড়িতে আসো তবে।’- এ কথা বলে রাজ্জাক মাস্টার বাড়ি গিয়ে রেডিও শুনতে বসে গেল। সকলে আসার পর দিক নির্দেশনা দিচ্ছিল মাষ্টার। আমরা সবাই স্বাধীনতার অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু আর অপেক্ষা নয়, শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষনা দিয়েছেন। এখন আমাদের লক্ষ থাকবে নিজের দেশকে শত্রু মুক্ত করা। তাই আমাদের সকলকে তৈরি হতে হবে। কথার শেষে জয় বাংলা স্লোগানে মুখরিত সারা বাংলা। দুঃসাহসিকতার সাথে এগিয়ে যেতে থাকলো। আয়েজ উদ্দিন ও তার ছেলে (যে কিনা নবম শ্রেণিতে পড়ে) তারা দুজনে চলে এলো দেশকে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করার জন্য। রঞ্জন বলল, ”আয়েজ ভাই আম্মে থাহেন কিন্তু পোলাডারে বাড়ি পাডাইয়া দেন।” নবম শ্রেণি পড়ুয়া আবুল হোসেন কোন মতেই বাড়ি ফিরে যাবে না। প্রয়োজন হলে জীবন দিবে দেশের জন্য। এদিকে জহির খবর নিয়ে আসলো- মিলিটারি নাকি স্কুলে আস্থানা করেছে। গ্রাম লুটপাট শুরু হইছে। রাজ্জাক মাষ্টার সকলকে নিয়ে তৈরি যুদ্ধের জন্য। কিশোর আবুলকে কেউ রাখতে পারলো না। যুদ্ধে গেল। আবুলের মা আসার সময় বলেছিল, ”বাবা তুই দেশকে মুক্ত করে ফিরে আসবি। আমি তোদের জন্য অপেক্ষা করবো।” দেশ বিজয়ের মুখ দেখলো। দিন যায়, রাত আসে আবার রাত্রি-দিন। এভাবেই চলতে থাকে। আবুলের মায়ের অপেক্ষার প্রহর আর কাটলো না।
শিক্ষার্থীঃ নাট্যকলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.