

রাত্রির উপাসিকা
কলমে ফক্বিহা
রাতটা অদ্ভুত নীরব।
বাড়ির পাশের পুরনো শিরীষ গাছটাও যেন আজ ক্লান্ত—
পাতাগুলো নিঃশব্দে মাটিতে ঝরে পড়ছে,
যেন সময়ের হাতছাড়া হয়ে পড়া কোনো স্মৃতি।
রুহিনা জানালার পাশে বসে।
চুলে জমে আছে রাতের অন্ধকার, চোখে জমে আছে নীরব চিৎকার।
বহুদিন পর আজ আবার সে লেখার টেবিলে ফিরে এসেছে।
কাগজগুলো আগের মতোই সাদা, কিন্তু এখন সাদা মানে আর নির্দোষ নয়—
সাদা মানেই বোবা, ভয়হীন, অথচ আহত।
একসময় এই কাগজেই লিখত চিঠি—
কারো কাছে নয়, নিজের ভেতরের অচেনা মেয়েটির কাছে।
যে মেয়েটি একদিন স্বপ্ন দেখত মদিনার আকাশে হাঁটবে,
যে নামাজে কাঁদত, বইয়ের পাতায় ভালোবাসা খুঁজত,
আর রাতে জানালায় তাকিয়ে বলত,
“হে আমার রব, কেন কিছু কিছু ভালোবাসা এত দেরিতে জন্ম নেয়?”
কিন্তু তারপর জীবন তাকে অন্য খাতায় লিখে দিল।
রুহিনা এখন একা—
তবু একা নয়,
কারণ একা মানুষই তো নিজের ভেতরে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ভিড় নিয়ে বাঁচে।
রাত বাড়ে।
দূরের মসজিদ থেকে ফজরের আগের বাতাস ভেসে আসে—
আলতো ঠান্ডা, ধীরে ধীরে যেন আত্মাকে ছুঁয়ে যায়।
রুহিনা বুঝে যায়, সময় বদলায় না, বদলায় শুধু উপলব্ধি।
সে কলম তোলে,
এক লাইন লেখে—
“যে মেয়েটি আলো চেয়েছিল, আজ সে নিজেই অন্ধকারে আলো।”
এই এক লাইনেই যেন তার পুরো জীবন বাঁধা পড়ে যায়।
কারণ সে জানে,
রাত্রি যতই গভীর হোক, কোনো না কোনো সূর্য
সবসময় একা মেয়েদের বুকের ভেতরেই জন্ম নেয়—
নিঃশব্দে, অনুচ্চারিত, অথচ জ্বলন্ত সত্যের মতো।
জানালার পাশে বসে থাকা রুহিনা হাসে।
সে জানে, আজও মানুষ তাকে বলবে “নীরব”,
কিন্তু আসলে সে হলো এক “রাত্রির উপাসিকা”—
যে অন্ধকারের মাঝেই নিজের আলোর ইবাদত করে যায়।
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.