রামাদান অনুভূতি
শুচি রহমান (শাফি)
রমাদান, রহমত বরকতের মাস।তাকওয়া অর্জনের মাস।পুরো মাস জুড়ে বাতাসে এক অন্যরকম সুঘ্রাণ।এ যেন মুমিনদের হৃদয়ে প্রচন্ড উত্তাপ শেষে এক পশলা বৃষ্টি। শীতল বাতাস হৃদয়ে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়।মৃদুমন্দ বাতাসে প্রকৃতিও দোল খায়।মহানবী (সা.) রমাদানকে এরকম মৃদুমন্দ বাতাসের সাথে তুলনা করেছেন যে বাতাস আমাদের অন্তরের সমস্ত বিষণ্ণতা, মলিনতা দূর করে দেয়।আমার প্রিয় মাস রমাদান!অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকি কবে রমাদান আসবে,নিজেকে আবার সাজিয়ে নেওয়ার সুযোগ আসবে।
অফুরন্ত কল্যাণ ও অজস্র সওয়াবের মৌসুম পবিত্র রমযান মাস মুমিনদের জন্য শ্রেষ্ঠ উপহার। এ মাসে জান্নাতের দরজা খোলে দেওয়া হয়।রোজাদার ব্যক্তিরা রাইয়্যান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে।নেয়ামতের যেন শেষ নেই!“আল্লাহ বলেছেন,বনি আদমের সকল আমল তার নিজের জন্য, শুধু সিয়াম ছাড়া।নিশ্চয়ই তা আমার জন্য আর আমিই এর প্রতিদান দেব।”
রমাদানের আগমনে বাড়ির অন্দরমহলে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়।পিচ্চিরা সিয়াম রাখার প্রতিযোগিতায় নেমে পড়ে।এদের দেখে আমার শৈশবস্মৃতি মনের কোণে উঁকি দেয়।সেই সময়গুলো কত দ্রুত হারিয়ে গেলো!
এবারের রমাদান আমার কাছে একটু বেশিই স্পেশাল। ভাইয়া আর নাকিবের বাইরে থেকে পড়াশোনার সুবাদে আমার ভাইদের ছাড়া একা রমাদান কাটতো। এবার আমরা পরিবারের সবার একসাথে রমাদান কাটানো হবে।অনুভূতি!!
পাঁচ রমযান রমাদান সমাবেশ হয়েছিল। রমযান বিষয়ক কুইজে আমি বিজয়ী হয়ে সুন্দর একটা নোটবুক পেয়ে গেলাম। চোখে মুখে তখন ছড়িয়ে গেলো এক চিলতে শুভ্র হাসি!!
ঘুমের অযুহাতে শেষ রাতের চাওয়া পাওয়া রাতের পর রাত মিস করছি।অথচ এই সময়টা কতটা মূল্যবান!রমাদান যেন শেষরাত্রিতে রবের সাথে সাক্ষাৎকারের সুবর্ণ সুযোগ। কল্পনায় এঁকে নিয়েছিলাম এই সুযোগ মিস দিবো না।জায়নামাজ বিছিয়ে বসে পড়ি রবের দুয়ারে।‘পাপ পঙ্কিলতার সাগরে ডুবে যাওয়া এই আমিটার দিকে রব যেন রহমতের হাত বাড়িয়ে দেন।’
সেহরির সময় শুরু হলে দূরে-কাছে মসজিদ থেকে ভেসে আসে তেলাওয়াত আর ইসলামি সংগীতের সুর।রমাদানের আমেজ!ঘুমে ঢুলুঢুলু হয়ে খাবার টেবিলে বসি।নিদ্রা তখন চোখে লেপ্টে আছে গভীরভাবে।খাওয়ার ফাঁকে ভাইবোনদের মুখ টিপে হাসা,আম্মুর ধমক‘ এতো অল্প খেয়ে সারাদিন অতিবাহিত হবে’ আব্বুর আহ্লাদ, সুন্দর কিছু মুহুর্ত।
রমাদানের বিকেলগুলো হয় অন্যরকম।সারাদিন রোযা রেখে বিকেলে চলে ইফতার তৈরির পালা।আমি আম্মুর কাজে টুকটাক হেল্প করি।টেবিল গোছানোর দায়িত্ব নেই।বাতাসে তখন ইফতারের মুগ্ধকর সুঘ্রাণ।রোজাদারদের দুটি আনন্দের একটি হলো ইফতার!আযানের কিছুক্ষণ পূর্বে আম্মু মনে করিয়ে দেন ‘ইফতারের আগে দোয়া কবুল হয়।’ওযু করে এসে খাবার টেবিলে বসে পড়ি।আব্বু মোনাজাত শুরু করেন “আল্লাহ আমাদের ইফতার, সেহরি,সিয়াম,ইবাদত কবুল করে নাও।”পরিবারের সবাই একসাথে ইফতারের মুহুর্ত কলমের কালিতে লিখে প্রকাশ করে যাবে না।কী সুন্দর অনুভূতি!
রমাদানে কিছু গোপন আমল থাকুক যা নিজস্ব। শুধুমাত্র রব জানুক!থাকুক না কিছু ব্যক্তিগত ইবাদত যা রবের একান্ত প্রিয়!
“বছরের প্রিয় মাসটা যেন হৃদয় জুড়ে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগিয়ে দেয়।”
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.