শুক্রবার নিয়ে ছোটগল্প ও প্রবন্ধ নিয়ে আজকে আর্টিকেল টি সাজানো হয়েছে।
[caption id="attachment_12044" align="alignnone" width="1280"] মদীনায় এক জুমা | শুক্রবার নিয়ে ছোটগল্প[/caption]
মদীনায় এক জুমা
- শাহ্ কামাল
গত বাইশে মার্চ আমি মদীনায় অবস্থান করছিলাম। আগের রাতেই প্লান ছিল সেহরী খেয়ে ফজর নামাজ শেষে ঘণ্টা দুয়েক ঘুমিয়ে জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিবো। মোবাইলে এলার্ম দেওয়া হয়নি। একটু লেট হয়ে যায় ঘুম থেকে জাগতে। সকাল আটটা পঞ্চাশ মিনিটের সময় আমি সজাগ হই। ঘরে আমরা পাঁচ জন ছিলাম। দুজন চলে গেছে। আমরা তিনজন এখনো রয়ে গেছি। তাদের ডাকলেও তারা উঠেনি কেউ।
গোসল সেড়ে নতুন পাঞ্জাবি পরে সুগন্ধি দিয়ে বের হলাম। তখন সকাল নয়টা পঁচিশ মিনিট। হযরত বেলাল (রা) মসজিদের পাশ দিয়ে মসজিদে নববীর দিকে আমার যাত্রা। মুসল্লিদের ঢল দেখে মনে হলো বড্ডো দেরী করে ফেলেছি। আজ জুমা।রমজানের দ্বিতীয় জুমা। গরীবের হজের দিন। আল্লাহর পেয়ারা হাবীব রাসূলে আকরাম হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের রওজার পাশে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায়ে কী যে প্রশান্তি তা কলমের কালিতে মনের শব্দে প্রকাশ করা দূরুহ। অবশ্য আগে বহুবার মসজিদে নববীতে নামাজ আদায় করা হলেও আজকের বিষয়টা ভিন্ন।
মনে একটা অভূত শান্তি নিয়ে মসজিদে নববীর তিন নম্বর গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। ডান দিকে ঘুরে গেলেই চারটে ছাতা। ছাতার তলার সামনেই মসজিদে নববীর মূল অংশ যেখানে রওজা শরীফ এবং রিয়াজুল জান্নাহ। আমি বসার জায়গা খুঁজে পাচ্ছি না। কিন্তু এখানে না বসলে তৃপ্তি আসে না। এখানে বসলে কেন যেন মনেহয় প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমার আসেপাশে আছেন। আমার মতো অনেকেই জায়গা খুঁজে ক্লান্ত। প্রায় বিশ মিনিট ঘুরে দু’জনের মাঝে একটু ফাঁকা দেখে পিছন দিকটায় বসে পড়লাম। জামাতের জন্য দাঁড়ালেই জায়গা হয়ে যাবে। দু’রাকাত নামাজ আদায় করবো সে জায়গাটুকু নেই।
আমি বসে বসে আস্তাগফিরুল্লাহ আর দরূদ শরীফ পড়তে লাগলাম। জুমার দিনে দরূদ শরীফ পাঠের আলাদা ফযিলত আছে। সাড়ে বারোটায় জুমার আযান পড়লো। সে আযানের কী যে সুর লহরী তা কোন ভাষায় প্রকাশ করবো! মনেহলো জান্নাতের বারান্দায় বসে আছি। মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখি মসজিদে নববীর মিম্বরের পাশে একটা উঁচু মঞ্চে মুয়াযযিন আযান দিচ্ছে। মসজিদের সৌন্দর্য আর চাকচিক্যের সাথে মুয়াযযিনের আযানের ধ্বনি বড্ডো মানানসই একটা দ্যোতনা তৈরি করে হৃদয়ের অলিগলিতে। জানি না কোন ভালোবাসার টানে চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পরছে।হাজার হাজার মুসল্লি। কোন বিশৃঙ্খলা নেই। এমন বেহেশতী পরিবেশে ইবাদতের স্বাদ অতুলনীয়।
একটু পরেই খুৎবা শুরু হয়ে গেলো। আরবি তেমন না বুঝলেও সুললিত কণ্ঠের খুৎবা শুনে বুঝতে পারলাম মুসলিম উম্মাহ’র নানা সমস্যা এবং করণীয় নিয়ে বলা হচ্ছে। আমাদের দেশের মতো আলাদা করে কোন বয়ান হয় না সেখানে। মাঝে বিরতি দিয়ে দুটো খুৎবা শেষে ইকামাত শুরু হতেই সবাই সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেল। আমার জায়গা পেতে তেমন কোন সমস্যা হলো না। আল্লাহপাকের শুকরিয়া আদায় করে নামাজ শেষ করলাম। প্রায় তিন ঘণ্টা মসজিদে নববীতে অবস্থান করে একটি বারও মনেহয়নি আমি এখানে অনেকটা সময় ধরে অবস্থান করছি। উল্টো মসজিদ হতে বের হতে মন চায় না।
কয়েক লক্ষ হাজী সাহেবদের সাথে জুমার নামাজ আদায় করে যে জান্নাতী খুশবু হৃদয়ে লেগেছে তার প্রশান্তি যেন অনন্তকালের। রাসূল (সা) এর পদযুগলের দিকে নিজের অবস্থান কোনদিন ভুলবো না আমি। ফযিলতপূর্ণ জুমাকে গুরুত্ব দিয়ে যেন প্রতিটি জুমা’র মর্তবা রক্ষা করতে পারি সেই বাসনা নিয়ে মসজিদে নববী হতে নিজ কক্ষে চলে আসলাম।
মদীনায় গিয়ে রাসূল(সা) এর প্রেমের সুধা পান করে জুমা’র যে নির্যাস হৃদয়ে গেঁথেছি তা আমার দেশের মসজিদে নিয়ে যায় অবিরত।
[caption id="attachment_12045" align="alignnone" width="1280"] আফওয়ানের জুমার নামাজ! শুক্রবার নিয়ে ছোটগল্প ও প্রবন্ধ[/caption]
আফওয়ানের জুমার নামাজ!
উম্মে আইনাইন
ফজরের আজানের সাথে সাথে ই আজ ঘুম ভাঙলো আফওয়ানের। ঘুম ভাঙতেই মনে পড়লো আজ শুক্রবার! লাফ দিয়ে উঠে তাড়াতাড়ি শয্যা ত্যাগ করলো সে।
অপর দিনগুলোতে আফওয়ান ভোরবেলা আম্মুর ডাকে ঘুম থেকে জাগে। কিন্তু আজ তার ঘুম ভেঙেছে মায়ের আগেই! আজকে ঘুম ভাঙার পর থেকেই একটা চাপা আনন্দে নেচে উঠেছে তার ছোট্ট মন।
কারণ আজ জুমাবার!
আর জুমা বার মানেই মুসলমান দের সাপ্তাহিক ঈদের দিন।
গতকাল দুপুরে তার আব্বু তাকে কোলে করে পবিত্র জুমা বার সম্পর্কে অনেক কিছু ই বলেছেন।
শুক্রবারে মুসল্লী গণ একসাথে মসজিদে জড়ো হয়ে পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করেন, ইমাম সাহেব সমস্ত মুসল্লী দের মাঝে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বয়ান করেন এবং খুতবা দেন।
সে আব্বুর মুখে আরো শুনেছে, সপ্তাহের অপর দিনগুলো হতে শুক্রবার হচ্ছে শ্রেষ্ঠ দিন। পবিত্র জুমআর দিন গোসল করে সবার আগে মসজিদে যাওয়া সওয়াবের।
হযরত আউস বিন আউস সাকাফি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমআর দিনে ভালো করে গোসল করলো, দ্রুততর সময়ে মসজিদে গেলো ও (ইমামের) কাছাকাছি বসে মনোযোগ সহ (খুতবা) শুনলো, তার জন্য প্রতি কদমের বদলে এক বছরের রোজা ও নামাজের সওয়াব থাকবে।" (আবু দাউদ, হাদিস :৩৪৫)
শুক্রবারের বিশেষ আমল সমূহের মধ্যে আব্বু সূরা কাহাফ এর ফজিলত সম্পর্কে ও আলোচনা করেছেন।
আফওয়ানের আব্বু বলেছেন,
হযরত আবু সাঈদ খুদরি রা. থেকে বর্ণিত, রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "যে ব্যক্তি জুমা বারে সূরা কাহাফ পড়বে, তা দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে।
আর যে ব্যক্তি এই সূরার শেষ দশ আয়াত পাঠ করবে, অতঃপর দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। তারগিব১৪৭৩ আল মুসতাদরাক ২/৩৯৯)
সুবহানাল্লাহ।
এছাড়াও জুমার দিনে বেশি বেশি করে মায়ার নবীজি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এঁর প্রতি দরুদপাঠ করতে বলেছেন তার আব্বু। যাতে হাশরের দিনে প্রিয় নবীজী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের জন্য মহামহিম ""আল্লাহ"" পাক রাব্বুল আলামিনের নিকট সুপারিশ করতে পারেন।
প্রিয় আব্বুর মুখে পবিত্র জুমার এতো এতো ফজিলত মাখা কথা শোনে সাত বছর বয়সী আফওয়ান তো ভীষণ খুশি!
যদিও সে তার আব্বুর সবগুলো কথা অনুধাবন করতে পারেনি যথেষ্ট বয়সের অভাবে, তবুও বাবার প্রতিটি কথা-ই তার ছোট্ট হৃদয়ে ভীষণ দাগ কেটেছে।
সাথে অন্তরাকাশে জমেছে পবিত্র জুমা বারের প্রতি একরাশ ভালোবাসা!
তাই তো আফওয়ান আজ সকাল থেকে ই প্রস্তুত হয়ে আছে, খুব করে আতর মেখেছে, সবচেয়ে সুন্দর জুব্বা টা পড়েছে সে আজ! মাথায় বেঁধেছে আম্মুর দেওয়া সাদা পাগড়ি টা।আব্বুর সাথে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়বে বলে।
তারপর ইমাম সাহেবের জবানে খুতবা শুনে আব্বুর আঙুল ধরে দরুদপাঠ করতে করতে বাড়ি ফিরবে আফওয়ান!
[caption id="attachment_12046" align="alignnone" width="1280"] শুক্রবার নিয়ে ছোটগল্প ও প্রবন্ধ | পরের জুম্মা[/caption]
পরের জুম্মা
কলমে নারগিস খাতুন
আমি ফরিদা খাতুন জন্মের সময় মাকে হারিয়েছি। বাবা দিন মজুর দিন আনে দিন খায়। বাবা আমাকে বড়ো করতে অনেক পরিশ্রম করেছে। পরিবারে এখন বাবা আর আমাকে নিয়েই। আমার জন্মের সময় মায়ের চিকিৎসা করার জন্য সমস্ত জমি বিক্রি করে দিয়ে মায়ের চিকিৎসা করে তবুও মা কে বাঁচাতে পারেনি বাবা। আমার বয়স এখন সবে আঠেরো হয়েছে দেখতে সুন্দরী ও নামাজ রোজা এক কথায় পর্দার মধ্যে থাকতে আমি নিজেকে পছন্দ করি। তাই অনেক বড়ো বাড়ি থেকে আমার বিয়ের প্রস্তাব আসে। দেখতে দেখতে বেশ বড়ো ঘরে আমার বিয়ে দিয়ে দেয় বাবার শেষ ভিটা টুকু বেঁচে। বাবা কে বারণ করেছিলাম শেষ ভিটা বেঁচে দিলে তুমি কোথায় থাকবে। বাবা মুচকি হেঁসে বললো মা তুমি খুশি থাকলেই আমি যেখানে থাকি আমি খুশি থাকবো, আমাকে নিয়ে ভেবোনা। জাকির সেখের একমাত্র সন্তান সেলিম সেখের সাথে আমার বিয়ে হয়। আর্থিক সমস্যার জন্য আমি লেখাপড়া করতে পারিনি। সেলিম কলেজ শেষ করে একটা বড়ো অফিসে কাজ করে।
অনেক কষ্ট চোখের জল নিয়ে শ্বশুর বাড়ি এসেছিলাম। এখানে কোনো লোক নামাজ রোজা কোনো কিছুই করেনা, পড়ে থাকে গান বাজনা নিয়ে। আমি অনেক মানা করলে শোনেনা কোনো কথা। আমি রোজ নামাজ পড়তাম, এক জুম্মাতে আমাদের বিয়ে হয়, এই জুম্মা বিয়ের পর প্রথম। স্বামীকে অনেকবার বলেছিলাম জুম্মার দিনে অন্তত নামাজ পড়তে যাও, তবুও আমার কোনো কথা না শুনে নিত্য দিনের কাজ সেরে বাড়ি আসে গান বাজনার মেতে যেত।
এই ভাবে আমাদের বিয়ের এক বছর হয়ে যায় তবুও স্বামীকে এক দিনের জন্য নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়াতে পারিনি। পরিবারের কাওকে কোনো রকম পরিবর্তন করতে পারিনি। আল্লাহ কাছে শুধু কান্না করে গিয়েছি।
বিয়ের এক বছর পর হঠাৎ আমার স্বামী মারা গেলো। স্বামী মারা যাওয়াতে পরিবারে আমাকে চাকরের ঝির থেকেও বেশি খারাপ ব্যবহার করতে লাগলো আমার শ্বশুর বাড়ির লোকেরা। এই এক বছরের মধ্যেই আমার বাবাও মারা গিয়েছেন। আমি গরীব ঘরের মেয়ে বাবা মা কেও না থাকার কোথায় যাওয়ার জায়গা নেই আমার। স্বামীও মারা গেলো। গরীব বলে শাশুড়ি চুলের মুঠি ধরে কত মার মেরেছিল সেদিন কান্না করতে করতে বাবা মায়ের কথা খুব মনে পড়ছিল। তবুও সমস্ত কিছু ভুলে চাকর ঝির জায়গাতে আমাকে এখন থাকতে হয়, বাড়ির সমস্ত কাজের লোককে তাড়িয়ে দিয়ে আমাকেই এখন বাড়ির সমস্ত কাজ কর্ম করতে হয়। বিনিময়ে দুবেলা দু মুঠো ভাত এর আসায় স্বামীর স্মৃতি সেই বাড়িতেই লুকিয়ে আছে। স্বামী কে অনেক বার বলেছিলাম নামাজ পড়তে। মৃত্যুর ঠিক আগের দিন বলেছিল আমি পরের জুম্মা থেকে নামাজ পড়তে শুরু করবো আর আমার যদি কিছু হয়ে যায় তবুও তুমি এই বাড়ি ছেড়ে কোনো দিন যাবেনা। স্বামীর এই শেষ কথা মনে করে এই বাড়িতে থেকে যায়।
[caption id="attachment_12047" align="alignnone" width="1280"] শুক্রবারের গল্প[/caption]
শুক্রবারের গল্প
মল্লিক বাড়ির আদরের ছেলে আদিল। পড়াশোনা ছাড়া সকল কাজের কাজি সে।
ক্লাস ফাইভে পড়া আদিলের পড়াশোনার এত অমনোযোগী ভাব দেখে বাবা-মা বেজায় চিন্তিত। বাবা-মা বড় আপু শান্তা সবাই অনেক বকাঝকা করে। কিন্তু সে ওসব কথা কানে নেয় না। এক কানে আপলোড দিলেও অপর কান দিয়ে সাথে সাথেই ডিলেটিং চেপে বের করে দেয়।
বড় মিয়ার আম বাগানের কোন গাছটায় আম ধরেছে! আগামীকাল বনভোজনের করিম চাচার সবজি বাগান থেকে কিভাবে সবজি পাচার করা যায়! সবদুমিয়ার পুকুর থেকে কিভাবে মাছ তোলা যায়! এর সব কিছুই তার নখদর্পণে!
আজ শুক্রবার। স্কুল ছুটি। আজকের প্রোগ্রাম প্লানিং গতকালকেই সেরে ফেলেছে আদিল ও তার বন্ধুরা।
তনু, তাপস, রাশেদ আর আদিল একই ক্লাসে পড়ে। সেই ছোট্টকাল থেকেই তাদের বন্ধুত্ব। ভিন্ন দেহে এক আত্মার মতো তাদের বন্ধুত্ব।
তারা আজকে বেরিয়েছে এক দুঃসাহসী অভিযানে। বড় মিয়ার বাগানের পুরনো নারিকেল গাছটায় শালিক পাখির চারটা বাচ্চা ফুটেছে। বাচ্চা ফুটার প্রহর তারা দীর্ঘ মাস ব্যাপী গুনে আসছিল। বাচ্চা ফুটার বেশ কয়েকদিন হয়ে গেছে। এতদিনে বাচ্চাগুলোর ডানাপাখাও গুজিয়েছে বুঝি।
তনু তো চার পাঁচ দিন আগে থেকেই তাড়া দিচ্ছিল; আরে দোস্ত চলো বাচ্চাগুলো নিয়ে আসি।উড়া শিখে যাবে তো।পরে যখন দেখবি উড়ে গেছে তখন পস্তাবি কিন্তু।
আদিল বলল, আরে ধুর! এত তাড়াতাড়ি উড়া শিখে যায় নাকি! আগামী শুক্রবারে গিয়ে নিয়ে আসব। শুক্রবারে স্কুল বন্ধ থাকবে। বড় মিয়া সাহেবও আগেভাগেই মসজিদে চলে যাবেন। আমরা ঠিক বারোটায় সেখানে উপস্থিত হব।
আজ সেই প্রতীক্ষিত দিন। বাগানে এসে উপস্থিত তারা। সূর্য একদম মাথার উপরে। সূর্যের তীর্যক রশ্মি গাছের ঘন পাতার ফাঁক দিয়ে মুক্ত দানার মত ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। গাছের পাতার বিস্তর পুরো বাগান জুড়ে।
খুব সতর্কতার সাথে পা বাড়াচ্ছিল তারা। বাগানের পাশ ঘেঁষে নদী। অপরদিকে দুচোখ জুড়ায় মতন তেপান্তর।কিষান চাষির যষ্টি "সোনালী ফসল"। তবে সেখান থেকে বাগানের ভিতরের জনমানুষ চোখে পড়ার মতো না।
হাটি হাটি পা পা করে সেই গাছটার সামনে এসে উপস্থিত হল তারা। এখন গাছে ওঠার পালা। কিন্তু ইখতিলাফটা বাজলো এই জায়গাটাতে এসে।
গাছে কে উঠবে? চারজনের কেউই কোন মতেই রাজি হচ্ছিল না। ধরা খাওয়ার ভয়ে টিপ টিপ করছে সবার দেহ ও মন।
গাছে চড়তে পারে না এমন কেউ নেই। সবাই এ বিষয়ে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। কিন্তু বিপদের হাতছানি আছে। যদি বড়মিয়া এসে যায়। তাহলে তো সাবান ছাড়াই ধুয়ে ছাড়বে।
এক পর্যায়ে তিনজন বুদ্ধি করে আদিলের উপর চেপে বসলো। আজকে তোকেই গাছে উঠতে হবে। নাছোড়বান্দা তারা। আদিল আর তাদের কে সামলাতে পারলো না। অগত্যা গাছে উঠতেই হলো।
বিসমিল্লাহ পড়ে গাছে উঠতে শুরু করলো আদিল। পাখির বাসাটি ও ছিল একেবারে গাছের চূড়ায়। কাঠঠোকরা পাখির তৈরিকৃত গর্তে।
আদি বলল এই; ভয়ে যে আমার হাত পা কাঁপছে!নিচে থেকে সাহস জোগাচ্ছিল তাপস। ভয় করিসনে। আমরা তো আছি। আর তপু আর রাশেদ তো রাস্তার দিকে নজর রাখছে। কারো আগমনের বার্তা পেলেই আমরা ফুরুৎ ।
তুই চড়। আর একটু।
আদিল একেবারে চূড়ায় উঠে গেছে। পাখির বাসাটা ছুঁই ছুঁই। ঠিক এমন সময়ে রাশেদ আর তপু এক হাঁফ ছেড়ে দৌড়ে আসলো।
এই তাপস আদিল বড় মিয়া আসছে রে। জলদি ভাগো এখান থেকে। খবর পেয়ে গেছে বুঝি। লাঠি হাতে এদিকেই ধেয়ে আসছে।
একথা বলে তপু আর রাশেদ এরা একঝাপে বেড়া ডিঙিয়ে পাশের এক ধান ক্ষেতে ফুরুত।
আদিল আর নামার সুযোগ পেল কোথায়! গাছের মাথায় চড়ে নারিকেলের পাতা দিয়ে নিজেকে একেবারে গুটিয়ে নিল। সেই গাছটার নিচে এসে উপস্থিত রেশ ভারী সাদা চামড়ার মানুষটা। রেগে একেবারে অগ্নি শর্মা। চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে।
কোথায় গেল হারামজাদারা? কোথায় লুকালো। এত সাহস আমার বাগানে ঢুকে। আজকে হাতেনাতে পেলে হাড় গুঁড়ো করে তবেই ছাড়ব। কোথায় পালালি তোরা?
এদিকে আদিলের অবস্থা তো বারো অবস্থা। পায়ের তলায় মাটি তো নেই। আছে গাছ। তবে সেই গাছের তলায় যেন আর মাটি নেই।
এই বুঝি দেখে ফেলল বড় মিয়া সাহেব। দোয়ায়ে ইউনুস, ইস্তেগফার, মান্নত যা কিছু হতে পারে; তার কিছুই বাকি রাখলো না সে!
আল্লাহ এবারের মতো বাঁচাও। আর এমন ভুল হবে না। কশ্মিনকালেও হবে না।
মিয়া সাহেব যখন এদিক সেদিক খোঁজাখুঁজির পর কোথাও কোন হদিস পেল না। অগত্যা বাড়ির পথ ধরল।
ততক্ষণে সময়ের কাটাও সাড়ে বারোটায় গিয়ে পৌঁছেছে। আজানের ধ্বনিতে মুখরিত হতে লাগলো চারদিক। বড় মিয়া আবার হন হন করে বাড়ির পথে হাঁটা ধরলেন।
আদিল গাছ থেকে নামলো। এদিকে তনু তাপস রাশেদ পাশের কোথাও লুকিয়ে ছিল। তারাও ঘাঁটি থেকে বেরিয়ে আসলো।
আদিল বলল, বড্ড বাচা বাঁচলাম। আমার প্রান কন্ঠনালীতে চলেই এসেছিল।
রাশেদ বলে উঠলো,কই! বাচ্চা কই পারিস নি? আদিল বলল, আরো বাচ্চা বলছিস! আমাকে বিপদে ফাঁসিয়ে তোরা জান নিয়ে ফুরুৎ। আর এখন এসে বলছিস কিনা বাচ্চা কই? আমি আর তোদের সাথে নেই বন্ধু। তোদের তো বন্ধু বলাও চলে না। স্বার্থপর তোরা।
তোদের সাথে আজ থেকে আমার কোন বন্ধুত্ব নেই।এর চেয়ে বরং আমি বাসায় গিয়ে গোসল সেরে আব্বুর সাথে নামাজে যাই। আজ শুক্রবার।
আমি বলি কি; তোরাও এসব বাদ দে। চলো নামাজে যাই।আজ শুক্রবার। নামাজের দিন।
এ কথা বলেই আদিল বাড়ির পথে হাঁটা ধরল....!
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.