ঝরে যাওয়া প্রাণ
মার্জিয়া আক্তার রজনী
জবা খুব ভালো মেয়ে। পড়া শুনায় ও ভালো। ঘরের কাজ কর্মে-কে তাকে পিছনে ফেলবে। একটা বাঙ্গালী মেয়ে যেসব গুনে টুইটুম্বুর থাকে সে কোনো অংশে কম ছিলো না। সংসার সামলিয়ে তার স্কুলে যেতে হতো। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ভালো ছিলো না। তার মা ঢাকায় থেকে ছোট্ট একটা চাকরী করে সংসার চালাতো। তার বাবা মানুষের জমিতে কাজ করে এভাবেই তাদের সময় পার হতো। জবা ৭ম শ্রেণী থেকে ৮ম শ্রেণীতে পা বাড়ালো। পড়া শুনায় সে ক্লাসে এক নাম্বার ছিলো। গ্রামের কিছু দুষ্ট ছেলে জবাকে রাস্তায় বিরক্ত করা শুরু করে। এভাবে অনেকদিন চলতে থাকলে জবা তার বাবার কাছে বলে। তার বাবা গ্রামের মোড়লের কাছে গেলে তেমন কোনো আশা পায়নি। এক পর্যায়ে জবার পড়াশোনা এখানেই শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তার পরিবার। জবা জানালার পাশে বসে ঝড়ে থাকা শিউলি ফুল গুলোকে বলে আমিও তোমাদের মতো। অনেক স্বপ্ন ছিলো বড় হবো কিন্তু আমাকেও ঝড়ে যেতে হলো। তার অজান্তেই চোখের কোনে জ্বল চলে আসলো। হাজার ইচ্ছে থাকা সত্বেও বাবা মা কে বলতে পারছে না আমি পড়াশুনা করবো। জবা স্কুলে যায় না তার বন্ধুরা বাড়িতে আসে। এসে সবকিছু জেনে স্কুলের স্যারদের জানায়। একজন স্যার তার বাবাকে বুঝায় আর ওই দুষ্ট ছেলেদেরও বুঝায়। তার বাবা রাজি হয়। খুশিতে জবার চোখ জলজল করছে। সে আবার স্কুলে যেতে শুরু করলো। প্রতিদিনের মতো জবা রান্না বান্না করে স্কুলে যায়, তবে এ দিনটা যে তার জীবনের সবচেয়ে কালো দিন ছিলো। ওই ছেলে গুলো তার মুখে এসিড ছুড়ে দেয়। তার শ্যাম বর্ণের হরিনী চোখ দুটোকে জ্বলসে ফেলে। সুস্থ হয়ে সে বাড়িতে আসে। বাশের পালায় লাগানো ছোট্ট আয়নাটাকে ছুড়ে ফেলে দেয়। শত চেষ্টা করেও তাকে বাহিরে বের করা যেত না। ঘরের কোনে একা বসে তার স্বপ্ন ভেঙ্গে যাওয়ার কথাই ভাবতো। মানসিক দুশ্চিন্তায় তার জীবন শেষ হয়ে যাচ্ছিলো। বছর পাঁচেক এভাবেই চলে যায়। মানুষের মুখে বলাবলি এ মেয়েকে বিয়ে দেয় না কেন। জবা আরো বিষন্নতায় ভুগতে থাকে। সে ভাবে আমার এই জ্বলসে যাওয়া চেহারা দেখে কে বিয়ে করবে? আমার সুন্দর একটা মন আছে এটা তো কেউ দেখবে না। সমাজের কথা চিন্তা করতে করতে অবশেষে জবা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। অনেক চিকিৎসা করা হয় ভালো হয়নি।
নিয়মিত কবিতা, গল্প পড়তে চোখ রাখুন চিরকুটের সাহিত্য প্লাটফর্মে |
সম্পাদক ও প্রকাশক মোঃ নাহিদ হাসান প্রধান
Copyright © 2024 Chirkute Sahitto. Powered by Chirkute Team.