ব্যাচলার জীবন
বখতিয়ার উদ্দিন
(নাটকা)
চরিত্র
ইকবাল -ম্যাচ প্রধান
আহাদ _ ম্যাচ সদস্য
ফাহাদ – সদস্য
রাসেল – সদস্য
মিলা – ছাত্রী
ছাদেক – বাসার মালিক
১ম অংক, ১ম দৃশ্য
ব্যাচলার রুমে ইকবাল আর আহাদের মধ্যে কথা।
আহাদ ভালো করে সাজতেছে।
ইকবাল :- এতো সেজেগুজে কোথায় যাচ্ছ?
আহাদ :- টিউশনতে যাচ্ছি ভাইয়া।
ইকবাল :- টিউশনীতে ছাত্রী নাকি?
আহাদ :- জ্বি ভাইয়া।
ইকবাল :- তাই!এতো সাজতে হয়?
আহাদ :- একটু সুন্দর করে যাচ্ছি ভাইয়া। টিউশনীর পর একটা কাজে যাবো তো।
ইকবাল :- আচ্ছা, ছাত্রী কোন ক্লাসে পড়ে?
আহাদ:- নাইনে।
ইকবাল :- ঠিক আছে ( ১০০ টাকা দিয়ে) এই নাও।রাতের জন্য কোন তরকারি নেই। ইচ্ছে মতো তরকারি নিয়ে এসো।
আহাদ:- (মুখটা মলিন করে)ঠিক আছে ভাইয়া।
২য় দৃশ্য
টিউশনী থেকে ফেরার পথে আহাদ আরাম করে হেলেদুলে তরকারি ছাড়া বাসায় চলে আসে।বাসার দরজার কাছে আসতে ম্যাচের তরকারি আনার কথা মনে পড়ায় মাথায় হাত দিয়ে বসে থাকে।অনেক ক্ষণ বসে থাকার পর আবার এক দৌড়ে বাজার থেকে তরকারি এনে বাসায় ফিরে।
৩য় দৃশ্য
রাসেল উঁচু স্বরে মোবাইলে গান শুনতেছে।ফাহাদ পাশে ঘুমাচ্ছে। আর ইকবাল বই পড়ছে।
ইকবাল :- রাসেল, মোবাইলে হেডফোন ব্যবহার করো।মোবাইলে যখন কোন কিছু শুনতে ইচ্ছে হবে তখন হেডফোন ব্যবহার করবে।
রাসেল :- হেডফোন নষ্ট হয়ে গেছে ভাইয়া।
ইকবাল :- তাহলে গান শুনা বন্ধ রাখ।কাল হেডফোন কিনে আনিও।এটা মনে রাখবে।এখন তোমার গান শুনার মোড় আছে কিন্তু বাকিদের মোড় নাও থাকতে পারে। এমনকি এতে অন্যের ক্ষতিও হতে পারে।
রাসেল :- জ্বি ভাইয়া।
৪র্থ দৃশ্য
আহা ঘুমাচ্ছে। রাসেল মোবাইল টিপতেছে।ইকবাল শুয়ে আছে। ফাহাদ পড়তাছে।
ইকবাল :- ফাহাদ, এখন কয়টা বাজে?
ফাহাদ :- রাত একটা বাজে।
ইকবাল :- লাইট বন্ধ করে ঘুমাও।
ফাহাদ :- ভাইয়া, আমার ঘুম আসে না।
ইকবাল :- দিনের বারটার আগ পর্যন্ত ঘুমালে তো সারা রাত ঘুম আসবে না।আর তোমার জন্য তো আমাদের ঘুমের ক্ষতি হচ্ছে। লাইট বন্ধ করে শুয়ে পড়ো।
ফাহাদ :- জ্বি ভাইয়া।
২য় অংক, ১ম দৃশ্য
আহাদ,ফাহাদ,রাসেলের মধ্যে শার্ট নিয়ে কথা হচ্ছে।
আহাদ:- ফাহাদ, রাসেল, আমার শার্ট কোথায়?
ফাহাদ:- কোন শার্ট?
আহাদ:- কমলা রঙের শার্টটি।
ফাহাদ :-অহ!ওটা!! ওটা তো ইকবাল ভাই পড়ে বের হয়েছে।
আহাদ:- ( কান্না করে) আমি টিউশনিতে কি পড়ে যাবো ?কত কষ্ট করে শার্টি ধোঁয়ে আয়রন করে রেখেছি।
রাসেল :- ইকবাল ভাই সব বিষয়ে নাক গলায়। এখন ছোট ভাইদের শার্ট পড়া শুরু করে দিয়েছে।
২য় দৃশ্য
ইকবাল বাসায় আসে।ফাহাদ দরজা খোলে দেয়।
ইকবাল :- ফাহাদ, রান্না – বান্না কিছু হলো?
ফাহাদ:- ( মাথা চুলকায়ে)না ভাইয়া।
ইকবাল :- (রান্না ঘরে গিয়ে) ফাহাদ, আমি চাউল ধোঁয়ে চুলায় বসাচ্ছি। তুমি আলু গুলো কেটে রাখ।আজ আলু আর ডিম রান্না হবে।
ফাহাদ :- জ্বি ভাইয়া।
ইকবাল :- আহাদ আর রাসেল কোথায়?
ফাহাদ :- আহাদ মনে হয় টিউশনিতে গেছে। আর রাসেল কোথায় গেছে জানি না।
ইকবাল :-রাত দশটা বাজে।এতো রাত পর্যন্ত আহাদ টিউশনিতে কি করে? আর দশটা পর্যন্ত রাসেল বাহিরে কেন?
ফাহাদ:- ভাইয়া,রাসেলকে ছাদে না উঠার জন্য বাসার মালিক এসে নিষেধ করেছে।ফ্যামিলীর মেয়েরা ছাদে যখন উঠে তখন রাসেল ছাদে উঠে যায়।
ইকবাল :- তুমি নিষেধ করে দিও।রাসেল আজকাল কথা কম শুনে। টিউশনি করে না।সারাদিন কোন কাজ কাম করে না।সারাদিন ঘুরে ঘুরে বাপের টাকা বসে বসে খায়।আর কোন দিন তো রান্না করার জন্য চুলার কাছে পর্যন্ত আসেনি।আমরা কখন রান্না করে রাখবো তার জন্য বসে থাকে। আর মোবাইল ফোনে সারাক্ষণ কথা বলতে থাকে। কোন দিন বার্থরুম পরিষ্কার করে না।রুমের জিনিস পত্র গুছিয়ে রাখে না।ব্যাচলার ম্যাচের নিয়ম কানুন মেনে চলে না।সেই দিন কি করেছে জানো?
ফাহাদ:- কি ভাইয়া?
ইকবাল :- তিন তলার মেয়ে একটা স্কুলে পড়ে,তার পিছু পিছু স্কুল গেইট পর্যন্ত চলে গেছে।
ফাহাদ:- আমিও দুই এক বার দেখেছি ভাইয়া।
ইকবাল :- এই সব মানা করে দিও।আর ও কি কলেজে পড়ে? কোন দিন তো কলেজে গেছে দেখিনি।বাসায় তো কোন দিন পড়ালেখা করেনি।
ফাহাদ :- তার টেবিলেও বেশি বই নেই।
ইকবাল :- যা আছে তা তো পড়তে হবে।পড়ালেখা করে পাশ তো হতে হবে।শুধু শুধু বাবা-মায়ের এতো টাকা অপচয় করে কি লাভ?
৩য় দৃশ্য
সবাই ম্যাচের খাবার খাচ্ছে। ব্যাচলারদের খাবার খাওয়ার বিভিন্ন দৃশ্য। (এক তরকারি, বাসন কম হওয়ায় একজন ডেকসী করে ভাত খাচ্ছে। গ্লাস নেই। শুধু পানির বোতল।)
ইকবাল, আহাদ,ফাহাদ,রাসেল খাবার খাচ্ছে।
ইকবাল :- ফাহাদকে একটু বেশি তরকারি দাও।ও আজ অনেক কষ্ট করে রান্না করেছে।
ফাহাদ :- আমার বেশি লাগবো না ভাইয়া।
আহাদ:- লবণের প্যাকেটটা দাও তো।
ইকবাল :- আহাদকে লবণ দাও।রাসেল ভাত মুখে নিয়ে বসে আছে কেন?মজা হয়নি বুঝি?কাল তেলাপিয়া মাছ আনতে হবে।
রাসেল :- মজা হয়েছে ভাইয়া।
ইকবাল :- লবণ কম হলে লবণ দিয়ে খাও।
৪র্থ দৃশ্য
রাসেল রাতে ঘুম থেকে উঠে কান্না করতে থাকে।
ইকবাল :- (রুমের লাইট জ্বালিয়ে) রাসেল, কি হয়েছে?
রাসেল :- (কান্না করে)প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করতাছে।
ইকবাল :- (ব্যাগ থেকে একটি ট্যাবেলেট বের করে) ধর, নাপাটা খেয়ে ঘুমিয়ে পড়।
রাসেল :- পানি।
ইকবাল :- (পানির বোতলটি এগিয়ে দেয়।)
ট্যাবেলটটি খেয়ে রাসেল একটু পর ঘুমিয়ে পড়ে।
৩য় অংক, ১ম দৃশ্য
শিক্ষক আহাদ ছাত্রী মিলাকে পড়াচ্ছে।
মিলা:- স্যার, এই শার্ট কার?( আহাদের গায়ে শার্ট দেখে)
আহাদ:- কেন?আমার শার্ট!কোন সমস্যা!!
মিলা:- অন্য এক জনের গায়ে দেখছিলাম।
আহাদ:- কার গায়ে দেখছিলে?
মিলা:- সব আপনাকে বলতে হবে কেন?আবার ফকিন্নির মতো অন্য জনের শার্ট গায়ে দিয়ে টিউশনি করতে আসেন।
আহাদ:- আমি ফকিন্নি না,তোমার চৌদ্দ গোষ্ঠী ফকিন্নি। এই মাসের টাকা ঐ মাসে দাও।
মিলা:-( চোখ বড় বড় করে) কি বলেছেন আবার বলেন তো।
আহাদ:- না মানি।বিশ্বাস করো,আমাদের বাসার বড় ভাই গতকাল আমার শার্টটি পড়ে বাহিরে গিয়েছিল।তাই গতকাল তোমাকে পড়াতে আসতে পারিনি।
মিলা:- গতকাল আপনি আসেননি?আমি তো বাসায় ছিলাম না।কোচিং ছিলাম।
আহাদ:- তুমি আবার কখন কোচিং শুরু করেছ?
মিলা:- না, মানি।আচ্ছা, আপনার বাসার বড় ভাইয়ের নাম কি?
আহাদ:- ইকবাল।
মিলা মাথায় হাত দিয়ে চুপ করে থাকে। আর কোন কথা বলে না।
২য় দৃশ্য
আহাদ আর রাসেলের সাথে কথা হচ্ছে।
আহাদ:- ইকবাল ভাই কি কান্ড করে জানিস?
রাসেল :- কি কান্ড?
আহাদ:- আমার ছাত্রী মিলার সাথে দেখা করতে যায়।
রাসেল :- কি বলিস?
আহাদ:- শুধু দেখা না, সাথে প্রেমও করে।
রাসেল :- এই ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারবো না ভাই।তোরা যা ইচ্ছে কর।
ইকবাল :-দুনিয়াটা এমন কেন রে ভাই।
৩য় দৃশ্য
ফাহাদ সাতদিন গ্রামের বাড়িতে থাকার পর ম্যাচে আসে।
ফাহাদ:- ইকবাল ভাই কোথায়?
রাসেল :- জানি না।
ফাহাদ:- ( রাসেলকে পিঠা দিয়ে) বাড়ি থেকে মা পিঠা বানিয়ে দিয়েছে।খাও।
রাসেল :- ( পিঠা খেয়ে) আন্টি কেমন আছে?
ফাহাদ :- ভালো।
রাসেল :- পিঠা অনেক মজা হয়েছে।আন্টি বানিয়েছে বুঝি।
ফাহাদ:- হাঁ!মা তোমাদের জন্য বানিয়ে দিয়েছে।
৪র্থ দৃশ্য
মিলা আর ইকবালের সাথে কথা হচ্ছে।
মিলা:- তুমি এই কাজ করবা?
ইকবাল :- আমাকে ক্ষমা করে দাও জান।
মিলা:- জামা কেনার টাকা না থাকলে আমাকে বলতে।
ইকবাল :- এবার ক্ষমা করে দাও।আর ভুল হবে না জান।
মিলা:- আমার সাথে আর কোন দিন কথা বলবে না।আমার সাথে আমেরিকান ছেলের সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
ইকবাল :- এমন করে না মিলা।
(মিলা রাগ করে চলে যায়।)
৫ম দৃশ্য
বাড়ির মালিক আর ইকবালের সাথে কথা হচ্ছে।
ইকবাল :- আংকেল, কিছু বলবেন?
মালিক :- শুন,তোমরা আমার ছেলের মতো।তবুও বলছি,তোমারা আগামী মাস থেকে বাসা ছেড়ে দিবে।আমরা ফ্যামালী বাসার ভিতর আর ব্যাচলর ভাড়া দিবো না। আর তোমারা বাসার নিয়ম কানুন মেনে চলে না।ঠিক মতো বাসা ভাড়া পরিশোধ করো না।
ইকবাল :- কি বলেন আংকেল! বাসা ভাড়া তো কোন মাসের দশ তারিখ থেকে এগারো তারিখ হয়না আমাদের।
মালিক :- আমি এতো সব শুনতে চাই না।বাসা ছেড়ে দিতে বলছি তাতে বাসা ছেড়ে দিবে।আর তোমরা বাসা পরিষ্কার করে রাখো না।সব সময় নোংরা করে রাখ।অকারণে যখন তখন বাসায় ঝগড়া করো।সারা রাত বাতি জ্বালিয়ে রাখ।ফ্যামিলীর মেয়েদের ডিস্টার্ব করো।
ইকবাল :- আমরা এমন না।আমরা কোন দিন এমন কাজ করেনি আংকেল।
মালিক :- আমি আর কোন কিছু শুনতে চাই না।আগামী ত্রিশ তারিখ বাসা ছেড়ে দিবা।
৪র্থ অংক, ১ম দৃশ্য
ম্যাচের সবাই জরুরী মিটিং করতেছে।
রাসেল :- আমরা কোন কিছু বললে দোষ। ব্যচলার বলে কি বাসা ভাড়া নিতে পারবো না।
ফাহাদ :- যত দোষ তোমার জন্য।বাসার মালিক তোমার ব্যাপারে এর আগে অনেক বার সতর্ক করে দিয়েছে।
আহাদ:- কি জানি বাপু।কোন দোষ না করা শর্তেও বাসা ছেড়ে দিতে হচ্ছে।
ফাহাদ:- এই শহরে বাসার অভাব আছে নাকি?কাল আবার বাসা খোঁজতে বের হবো।
ইকবাল :- এতো রাতে আর কথা বলতে হবে না।লাইট বন্ধ করে ঘুমাও।দেখি, আগামীকাল কি করা যায়।
২য় দৃশ্য
নতুন বাসায়। রাসেল ফোনে গার্ল ফ্রেন্ডের সাথে কথা বলতেছে।
ফাহাদ:- রাসেল, বাহিরে গিয়ে কথা বলো।তোমার জন্য আগের বাসা ছাড়তে হয়েছে।আবার কোন বাসা নিলে সেখানে তোমাকে আর তুলবো না।
(রাসেল ফোনে কথা বলতে বলতে বাহিরে চলে যায়)
(ইকবালের মোবাইলে মিলার ফোন। ইকবাল ঘুম থেকে মিলার ফোন ধরে।)
ইকবাল :- হ্যালো, জান।
মিলা:- জান, আমি বিকালে দেখা করতে পারবো না। বাসায় আব্বু থাকবে।বের হওয়া যাবে না।
ইকবাল :- কি বলো জান।
মিলা:- সত্যি বলছি জান।
ইকবাল :- ঠিক আছে।
৩য় দৃশ্য
ইকবাল গোসল করতে বার্থরুমে ঢুকেছে।
ইকবাল :- কি হলো! বার্থরুমে পানি নেই কেন?কি যে বাসা ভাড়া নিলাম।ঠিক মতো পানি থাকে না। আগের বাসা ভাড়া ছিল। যত সব খারাপ বাসা ব্যাচলরদের ভাড়া দেওয়া হয়।
৪র্থ দৃশ্য
মিলা আর আহাদ পার্কে ঘুরতেছে।ইকবাল দূর থেকে তা দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।
মিলা:- আজ বাসায় অনেক কাজ ছিল। ম্যানেজ করে এসেছি।
আহাদ :- পড়াতে গেলে তো আমরা মোটেই কথা বলতে পারি না।
মিলা:- তা ঠিক।পাশের মা বসে সব কথা শুনে ফেলে।( ইকবালকে দেখে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে )।
আহাদ:- কি হলো?
মিলা:- আমার মাথা ঘুরতাছে বাসায় চলে যাবো।