চলো না হারিয়ে যাই গল্পের ১ম পর্ব

চলো না হারিয়ে যাই ১ম পর্ব

” মাঝরাতে মিষ্টি আপুর সাথে ভয়ঙ্কর অন্যয় করার সিদ্ধান্ত নিলাম।চু’মু খাওয়ার থেকেও ভয়ঙ্কর কাজটা আজ রাতেই করবো “

চিন্তাভাবনার এই পর্যায়ে ফোনটা বেজে উঠলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম মিষ্টি আপু কল করেছে।মিষ্টিকে আপু বলছি কারণ মিষ্টি আমার এক ব্যচ সিনিয়র।রিসিভ করতেই ফোনের ওপাশ থেকে রাগী হুংকার ভেসে এলো

” এ পিচ্চির বাচ্চা!কই তুই? “

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সুন্দরী একটা মেয়ের মুখে এরুপ কথা শুনে আমার কিঞ্চিৎ মন খারাপ হলো।মৃদু স্বরে বললাম

” আমি পিচ্চি না। কলেজে পড়ি “

আরো কঠিন স্বরে জবাব এলো ” সারাদিন ধরে ফোন করছি, ফোন বন্ধ কেন? সমস্যা কি তোর? “

আমার মনে মনে ভিষণ রাগ হতে লাগলো।এই মেয়েটা কি সত্যিই বুঝেনা আমার সমস্যা কি?সব কথা কি বলে বুঝাতে হবে?।
রাগ সামলে বললাম ” চার্জ ছিলো না “

” আজ আমায় দেখতে আসবে এটা তুই জানতিস না?তোকে কাল কতবার করে বললাম আসার জন্য! আসলি তো না’ই,তার উপর ফোনটাও সারাদিন বন্ধ করে রেখেছিস।তোর হাতে আর ১৫ মিনিট সময় আছে।এরমধ্যে তোকে আমার সামনে দেখতে চাই “

এতটুকু বলেই মিষ্টি আপু ফোন কে’টে দিলো।আমি মাঝরাস্তায় মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইলাম।সৃষ্টিকর্তা এই মেয়েটাকে রুপ আর রাগ দুটোই একসাথে উপুড় করে ঢেলে দিয়েছেন।

১৫ মিনিটের মধ্যে ওর সামনে না গেলে আমার কপালে যে ভয়ঙ্কর কিছু অপেক্ষা করছে সেটা বেশ বুঝতে পারছি।পরিস্থিতি আগের মতো হলে এতোক্ষণে আমি দৌড় লাগাতাম।কিন্তু আজ তেমনটা করলাম না।

পরিস্থিতি আগের মতো নেই কারণ মিষ্টি আপুকে আজ ছেলেপক্ষ দেখতে এসছে।ছেলেটা মিষ্টি আপুর কলেজের লেকচারার।যত সম্ভব বিয়ে এতোক্ষণে ঠিক হয়ে গেছে।কারণ মিষ্টি আপুর সাথে ওই লেকচারারের আগে থেকেই পরিচয় আছে।প্রেমের পরিচয় বলা যায়।অথচ তার পিছে ঘুরঘুর করে ঘুরতে থাকা আমি যে তাকে মন দিয়ে বসে আছি সে বিষয়ে তার বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই!

আরো পড়ুনঃ  উপন্যাস বেরঙিন পথে শুরু হলো কথা পর্ব ৩য় 

আর ঠিক এই কারণেই ঠিক করেছি মিষ্টি আপুর সাথে আজ রাতে ভয়ঙ্কর একটা অন্যায় করবো।যেটা গালে চু’মু খাওয়ার থেকেও ভয়ঙ্কর।যেটা করলে মিষ্টি আপু একান্তই আমার হয়ে থাকবে।যদিও পরিবারের সবাই জানতে পারলে কেলেঙ্কারি ব্যাপার হয়ে যাবে,তবে এতে ক্ষতি নেই।ভালোবাসায় কেলেঙ্কারি থাকাটা দোষের কিছু না।

রাত বাজে ১১টা।মিষ্টি আপুর পরিবারের সবাই এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে নিশ্চয়ই।আমি দাঁড়িয়ে আছি তাদের বিশাল বড় গেইটের সামনে।দারোয়ান হাই তুলতে তুলতে বললো

” আপনের জইন্য ঘুমাইতে পারতাছি না “

বিষ্মিত হয়ে বললাম ” আমি কি করলাম? “

দারোয়ান বিরক্তি নিয়ে বললো ” ম্যাডাম বইলা দিছে আপনে আইবেন।হের জন্যই তো জাইগ্গা আছি “

আর কিছু না বলে বাড়ির ভেতরে ঢুকলাম।মিষ্টি আপু যথেষ্ট রেগে আছে বুঝতে পারলাম।দরজার সামনে এসে কলিংবেল চাপলাম।ভাবতে লাগলাম ভয়ঙ্কর কাজটা কোথা থেকে শুরু করবো।মনের মধ্যে একটা শিহরণ কাজ করতে লাগলো।গা ছমছমে একটা ব্যাপার।

দরজা খুললো মিষ্টির মা।আমাকে দেখে তিনি অসহায় ভঙ্গিতে বললেন ” তোমার কপালে আজ খুব দুঃখ আছে “

আন্টির কথায় আমার তেমন ভাবান্তর হলো না।কারন আজ আমি যা করবো তাতে  দুঃখটা আমার না,মিষ্টির কপালে নাচছে।আন্টিকে বললাম

” খুব রাগ করে আছে নাকি? “

উনি গম্ভীর স্বরে বললেন ” যা কিছু হয়ে গেলো! রেগে তো থাকবেই “

আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ” যা কিছু ” টা আসলে কি।জানার চেষ্টাও করলাম না।আন্টিকে বললাম ” আন্টি যাই, মিষ্টি আপুর সাথে দেখা করে আসি “

একথা বলে সিড়ি বেয়ে মিষ্টির ঘরের দিকে গেলাম।দরজার কাছে দাড়িয়ে বড়বড় নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে হালকা করে নিলাম।তারপর দরজায় টোকা দিলাম।

খানিক্ষন বাদেই দরজা খুললো।দরজার ওপাশে ঘুমঘুম চোখে দাঁড়িয়ে আছে মিষ্টি।কি আশ্চর্য্য! ঘুমন্ত অবস্থায় মিষ্টিকে একদম রাজকুমারীর মতো লাগছে।অমিল শুধু  একটাই।রাজকুমারীদের চোখের কাজল লেপ্টে যায় না,আর মিষ্টির কাজল লেপ্টে আছে।ঘুমের কারণেই বোধহয় লেপ্টে গেছে।তাছাড়া শাড়িটাও এলোমেলো।পাড়ের কাপড়টা আর একটু উপরে উঠলেই হাঁটু দেখা যাবে এমন অবস্থা।পে’টের বেশিরভাগ অংশ দৃশ্যমান হয়ে আছে।মিষ্টির লম্বাটে গর্তের না”ভিটার থেকে চোখ সরাতে আমার বেশ কষ্ট হলো।

আরো পড়ুনঃ  উপন্যাস বেরঙিন পথে শুরু হলো কথা, পর্ব ৪

মিষ্টি আপু ঘুম জরিত স্বরে বললো ” ঘুম পাচ্ছে।এখন যা “

একথা বলে দরজা বন্ধ করবে তার আগেই আমি দরজা ঠেলে মিষ্টির শ’রীর ঘেঁষে ভেতরে ঢুকলাম।মিষ্টি আপু অনেকটা হকচকিয়ে গেলো।এতো শ’রীর ঘেঁষে রুমে ঢোকায় মিষ্টির চোখের ঘুম যেন উধাও হয়ে গেলো।

মিষ্টি আপু চোখ সরু করে বললো ” তোকে রুমে ঢুকতে বলছি? এভাবে হুটহাট রুমে ঢুকে পড়িস কেন? “

আমি মুচকি হেসে বললাম ” তোমার রুমে ঢুকতে আবার পারমিশন লাগে নাকি? “

মিষ্টি কিছু বললো না। রাগান্বিত চোখে শুধু বারবার দেখতে লাগলো।

রাত এখন ১২টার কাছাকাছি।এরমধ্যেই মিষ্টির রাগ গলে জল হয়ে গেছে।এই মেয়েটা যত দ্রুত রাগে তার থেকেই দ্রুত সময়ে সেই রাগ চলে যায়।কত অদ্ভুত সব বিষয় এই মেয়েটার মধ্যে আছে!

এই মুহুর্তে মিষ্টি আমার সামনের সোফায় দুই পা তুলে খিলখিল করে হাসছে।আমি ওকে নাটকের রাজকুমারের অভিনয় করে দেখাচ্ছি।রাজকুমারের এই চরিত্রটা তেমন হাসির না,তবুও মিষ্টি খুব হাসে।ওর হাসি দেখে আমারও হাসতে ইচ্ছে করলো।

ঠিক করলাম ভয়ঙ্কর অন্যায় কাজটা এখনই করবো।একপা একপা করে মিষ্টির কাছে এসে দাঁড়ালাম। মিষ্টি হাসি থামিয়ে বললো

” কি হলো থামলি কেন? “

” আপু আমি তোমার সাথে একটা অন্যায় কাজ করবো।ভয়ঙ্কর অন্যায় “

মিষ্টি আপুর ঠোঁ”টে এখনো হাসি লেগে আছে।সে এখনো বুঝতে পারছে না আমি কোন অন্যায়ের কথা বলছি। বললো

” কি অন্যায়? “

আমি মিষ্টি আপুর আরো কাছাকাছি এসে দাঁড়ালাম।ওর ডান হাতে আমার হাত রাখলাম।বললাম

” অনেক অপেক্ষা করেছি আর সম্ভব না।তোমায় নিজের করে নিতে এই অন্যায়টা আমার করতেই হবে “

একথা বলে মিষ্টি আপুর কো”মরে হাত রাখলাম।মুহুর্তেই আমার সারা শ”রীর শিউরে উঠলো।আকষ্মিক যে ব্যাপারটা ঘটলো সেটায় আমি প্রচন্ড ধাক্কার মতো খেলাম।আমার মাথা শূন্য হয়ে গেলো,দেখলাম মিষ্টি……

আরো পড়ুনঃ  উপন্যাস বেরঙিন পথে শুরু হলো কথা ৫ম পর্ব

চলবে?

>> চলো না হারিয়ে যাই গল্পের সকল পর্ব
লেখকঃ জয়ন্ত কুমার জয়

Facebook Golper Group
>> ফেসবুকে সকল গল্পের লিংক পেতে জয়েন করুন

 

1 thought on “চলো না হারিয়ে যাই গল্পের ১ম পর্ব”

  1. Pingback: চলো না হারিয়ে যাই গল্পের সকল পর্বের লিংক » Chirkute Sahitto

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *