রোজা নিয়ে কিছু কথা
বহুসংখ্যক আয়াত আর হাদিস রয়েছে রোজার ফজিলত সম্পর্কে। রোজা একমাত্র ইবাদাত যা বান্দা আল্লাহর জন্য আদায় করে থাকে এবং এর সাওয়াব ও পুরস্কার একমাত্র আল্লাহ তা’লা বান্দাদের দিয়ে থাকবেন৷ এসম্পর্কে আল্লাহ তা’লা বলেন, রোজা ছাড়া আদম সন্তানের প্রতিটি কাজই নিজের জন্য । তবে রোজা আমার জন্য। আমি নিজেই এর পুরস্কার দিব। রোজা ঢালস্বরূপ। নিচে রোজা নিয়ে কিছু কথা বলা লেখা হয়েছে, যেগুলো পড়লে আপনাদের অবশ্যই ভালো লাগবে…
পবিত্র রমাদান
কলমেঃ মারিয়া ইসলাম
আসসালামু আলাইকুম সকল মুসলমান। বছর ঘুরে শবে বরাত বার্তা দিয়ে গেল পবিত্র রমাদান মাসের। বিশ্বজুড়ে সকল মুসলমানদের প্রতীক্ষিত সংযম, সাধনা ও পবিত্রতার মাস রমজান মাস। দ্বিতীয় হিজরীর শাবান মাসে পবিত্র মদিনায় আল্লাহ সুবহানাল্লাহ তা’লা ফরজ রোজা সম্পর্কে আয়াত নাজিল করেন। তিনি বলেন, “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হলো যেমন করে তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর। যাতে তোমরা সংযমী হও “। ( সূরা বাকারাহ, আয়াত-১৮৩)
রোজা ফারসি শব্দ। এর আরবি শব্দ সাওম বহুচনে সিয়াম। যার অর্থ বিরত থাকা। রোজার শাব্দিক অর্থ বিরত থাকা হলেও এর মানে শুধু পানাহার বা স্ত্রী সঙ্গ ত্যাগ করা নয়। ইসলামিক শরীয়াত মতে সকর প্রকাল হারাম ত্যাগ করে, আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় সকর প্রকার পানাহার বর্জন করে নিজেকে ইবাদতে মশগুল রাখা।
রোজাদারদের জন্য প্রতিদিন জান্নাত সজ্জিত করা হয়। রমাদান একমাত্র মাস যেই মাসে জান্নাতের সকল দরজা খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। রোজাদারদের জন্যই রয়েছে জান্নাতের রাইয়ান নামক একটি বিশেষ দরজা। যে দরজা দিয়ে শুধুমাত্র রোজাদাররাই প্রবেশ করতে পারবে। রমাদান মাস রাসূল (স.) এর উম্মাতের জন্য এক বিশেষ নিয়ামত। একমাত্র রাসুল (স) এর উম্মতের জন্যই রয়েছে লাইলাতুল কদরের পবিত্র রাত। যেই রাতে আসমানের ফেরেস্তাগন শান্তি নিয়ে জমিনে নেমে আসেন, আল্লাহ তার ঈমানদার বান্দাদের পাপ, গুনাহ ক্ষমা করে দেন।
এখন শাবান মাস চলছে, অল্প কিছুদিন বাকি আর রমাদানের। এখন মানুষিক ও শারিরীক প্রস্তুতি গ্রহণের সময়।নবী করীম (স) শাবান মাসের শেষ ১৫ দিন নফল রোজা রাখতে নিষেধ করে রমাদানের প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। এটা শারিরীক প্রস্তুতি আর নিয়ত করা মানুষিক প্রস্তুতি। নিয়ামতের উপর আল্লাহ বরকত দান করেন।
এই মহিমান্বিত পবিত্র রমাদান মাস আমাদের আত্মশুদ্ধির মাস। আল্লাহ সকল মুসলমানদের এই মাসের রহমতের অর্ন্তভুক্ত করুন। সকলকে রোজা রাখার এবং পরিপূর্ণ আমল করার তোফিক দান করুক।
মাহে রমজান
কলমেঃ নূরজাহান আক্তার শ্রাবন্তী
❝মাহে রমজান❞ এমন একটা মাস সেখানে পাপের কোনো জায়গা নেই। এই রমজান মাসে সবাই ৩০ টা রোজা, ৩০ টা সাহেরি, ৩০ টা ইফতার, ৩০ টা তারাবি নামাজ পড়ে। ❝মাহে রমজানের❞ অর্থ কি?
‘মাহে রমজান’ অর্থ রমজানের মাস। ‘রমজান’ শব্দটি আরবি ‘রময’ শব্দ থেকে এসেছে। ‘রময’ অর্থ দহন বা পোড়ানো। রমজান মাসে মাসে রোজা পালন করলে মানুষের মধ্য থেকে লোভ, লালসা, পাপ, হিংসা ও বিদ্বেশ দূর হয়। রোজা পালনকারী রমজানে তার সব পাপ মুছে ফেলার পবিত্র সুযোগ লাভ করেন। রমজান মাসে পালিত ইসলামিক উপবাসকে রমজানের রোজা বলা হয়। রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআন ও হাদিসের মাধ্যমে এর গুরুত্ব সম্পর্কে জানা যায়। এ মাসে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। বিশ্বাস মতে, প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এই বলে ঘোষণা দিতে থাকেন, ‘হে সৎকর্মের অনুসন্ধানকারী, তুমি অগ্রসর হও! হে অসৎ কাজের অনুসন্ধানকারী, তুমি থেমে যাও!’ এ মাসের প্রতি রাতে সৃষ্টিকর্তা জাহান্নাম থেকে বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।(সুবহানাল্লাহ) রমযান মাসকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়েছে। রমযান মাসের প্রথম দশ দিন রহমতে পূর্ণ থাকে। দ্বিতীয় দশদিন ক্ষমা লাভ এবং শেষ দশ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের উপায়। তবে এ সবকিছুই নির্ভর করে এই পবিত্র মাসের মাহাত্ম্য ও তাৎপর্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করার উপর।রমজান হলো দোয়া কবুলের মাস। বিশ্বাস মতে, এই মাসে প্রত্যেক মুসলিমের দোয়া কবুল করা হয়। রমজানের প্রতি রাতে ও দিনে সৃষ্টিকর্তা বহু মানুষকে মুক্তি দিয়ে থাকেন এবং প্রতি রাত ও দিবসে মুসলিমের দোয়া-প্রার্থনা কবুল করা হয়।আর রমজান মাসে আপনি যতো বেশি গরিবদের দান করবেন আল্লাহ তত বেশি আপনার উপর খুশি হবেন।তাই রমজান মাসে গরিবদের সাহায্য করার চেষ্টা করবেন নিজের সামর্থ অনুযায়ী। ❝মাহে রমজানে❞ সকল প্রকার খারাপ/বাজে আবার কে ত্যাগ করার জন্য একটু উপযুক্ত সময়। এই সময় রোজা রেখে আপনারা অনেক রকমের খারাপ অভ্যাস ত্যাগ করতে পারেন। যেমন : সিগারেট খাওয়া ত্যাগ করতে পারেন,গালিগালাজ দেওয়া ত্যাগ করতে পারেন ইত্যাদি। এই দিনগুলোতে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করতে হবে।আর মোনাজাতে দু হাত তুলে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে।তাহলেই আপনি পরকালে শান্তি ভোগ করতে পারবেন। আর ❝মাহে রমজান❞ যাওয়ার পর তো আমাদের জন্য আরও একটা আনন্দের দিন অপেক্ষা করছেই।সেটা হলো- ঈদ। এই দিনে ধনী-গরিবের মাঝে কোন ভেদাভেদ থাকে না। সবাই একসাথে আনন্দ করে।
রমজান মাসের অনেকগুলো ভালো দিক রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো:
১. কোরআন নাজিলের মাস
২. জাহান্নাম থেকে রক্ষার মাস
৩. আমলের প্রতিদান বৃদ্ধি
৪. জান্নাতে বিশেষ মর্যাদা
৫. ফেরেশতাদের দোয়া
৬. প্রতি রাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি
৭. আল্লাহ ভীতি অর্জনের মাস।
এই রমজান মাসে আমার এতগুলো নোক লাভ কতে পারি। রোজ এইটি ইমানের একটি অংশ। রমাজান মাসে ধনীরা গরিবের দুঃখ বুঝতে পারে তার কীভাবে না খেয়ে থাকে।
আমাদের প্রিয় নবি হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়েছে। রমজান এমন একটি মাস যেখানে শয়তান কোনো খারাপ কাজ করার সুযোগ পায় না। তাই আমাদের প্রত্যেক মুসলমানেরই ৩০ টা রোজা রাখা উচিত, কোরআন তিওয়ালাত করা উচিত, বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদত করা উচিত। সবাইকে মাহে রমজানের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।