নারীর মর্যাদা
কলমে হাবিব বিন সুলাইমান
নারী জাতি হলো কৃত্রিম রুপে এক সুগন্ধি ফুল। যে ফুলের সুগন্ধি বিলুপ্ত করে দেয় দুর্গন্ধের চাদরে আবরণ থাকা সমাজকে। যার মর্যাদা দেখে হিংসার অগ্নিকুন্ডে জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় সুউচ্চ পর্বত সমূহ। এই নারী জাতিই চৈত্র মাসের মতো ঝড়ে পরা পুরুষ নামক বৃক্ষের বুকে বয়ে আনে বসন্তের সজীবতা। চিরন্তন সত্যি কথা বলতে, পৃথিবীকে প্রাণবন্ত করে তোলার জন্য খোদার তরফ থেকে এক পাওয়ারফুল উপঢৌকন হলো নারী জাতি!
তাই তো সোনালী যুগের দিকে দৃষ্টি ছুড়ে মারলেই সেটা দ্ব্যর্থহীন ভাবে বোধগম্য হয়। যে সোনালী যুগ শুরু হয় আসমানী ওহীর স্পর্শ পেয়ে,সেই ওহীর সূচনা লগ্নে কত বড়োই না অবদান ছিলো নারীর, যা ভাষায় ব্যক্ত করার মতো নয়।সর্বপ্রথম যখন ওহীর মাধ্যমে নবী করিম সাঃ কে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ এই বাণী সমগ্র পৃথিবীতে পৌছানোর জন্য আদিষ্ট করা হয়, তখন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দেহ মোবারক বরফের মতো শীতল হয়ে যেতে লাগে। প্রাণ পাখি যেনো দেহ প্রাচীর ভেঙে উড়ে যাওয়ার জন্য ভয়ানক যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে যায়।
আর এরূপ অবস্থা হবেই বা না কেন? যে সময় গোটা পৃথিবীর মানুষ কেউ তিন খোদা, কেউ দুই খোদা, কেউ বা হাজারো খোদার অস্তিত্ব বুকে লালন করে আসছে।সেই সময় বাকী খোদাকে ছুড়ে মেরে এক খোদার তরে আহ্বান জানানো কতোই না বিপ্লবী ঘোষণা!
যে বিপ্লবী ঘোষণা দেওয়া মানে নির্ঘাত নির্যাতন নামক ঝড়ের কবলে পড়া। অন্যের হাতে স্বীয় জানকে কুরবানির জন্য তুলে দেওয়া। ঠিক এমন এক ভয়ানক অবস্থায়, যে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর শীতল দেহে উষ্ণতার হাওয়া বয়ে এনেছে, সাহস যুগিয়েছে,প্রেরণা দান করেছে, এবং নিজের বিপদের কথা ভুলে গিয়ে এই বিপ্লবী কালেমার মালা গলায় জড়িয়ে নিয়েছে, তিনি হলো নারী জাতির এক উজ্জ্বল তারকা আম্মাজান খাদিজা রাঃ।
কতোই না চমৎকার উত্তর প্রদান করেছিলেন সেই সময়,যে সময় রাসুলুল্লাহ সাঃ আতংকের মাথা গাথা প্রশ্নের তীর ছুড়ে মেরে ছিলো খাদিজাতুল কুবরা রাঃ এর দিকে। হে খাদিজা আমি তো আমার নফসের উপর এরূপ আশংকা করছি যে, তারা আমার এই বিপ্লবী ঘোষণা শুনে আমাকে হত্যা করে ফেলবে,আমার দাওয়াত পশ্চাতে ছুড়ে মারবে,আমাকে দূরদূর করে তাড়িয়ে দিবে, হয়তো বা,তারা আমাকে মিথ্যাবাদী হিসেবে আখ্যায়িত করবে। ঠিক সে সময় পরশ মাখা সুর তুলে, ফুলের সৌন্দর্য চেহারায় ফুটে তুলে, স্পষ্ট ভাষায় উত্তর দিয়েছিলেন আম্মাজান খাদিজা রাঃ।
তিনি বলেছিলেন হে আমার প্রেমময় স্বামী! আপনি যা ভাবছেন তা কখনোই হতে পারে না। আপনি তো আত্নীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখেন, গরীব দুঃখীদের অন্ন বস্ত্র বাসস্থান যুগিয়ে দেন,বিপদগ্রস্ত মানুষদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন, মক্কা বাসি তো আপনাকে আল আমিন উপাধিতে ভূষিত করেছেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ তখন খাদিজা রাঃ এর এমন ঈমান দ্বীপ্ত কথা শুনে আবার নব উদ্যামে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ এই বাণী ছড়িয়ে দিতে প্রস্তুত হয়ে যান।এবং সফলতার উচ্চ আসনে আসন লাভ করেন। যার এই সফলতার পিছনে নারী খাদিজা রাঃ এর অবদান ছিলো অপরিসীম।
ঠিক তদ্রূপ ভাবে ইসলামের তরে নিজের জান কুরবানি দিয়ে সর্বপ্রথম যে শহীদী মর্যাদা লাভ করেন। তিনি ও হলেন নারী বাগিচার এক গোলাপ ফুল সুমাইয়া রাঃ। এরূপ হাজারো ঘটনা ইতিহাসের পাতায় ভিড় জমে আছে।
তাই হাজারো নিন্দা জানাই সেই প্রাচীন গ্রীক, রোমান,হামুরাবী,হিন্দু, ইহুদী, খৃষ্ট সমাজকে।যারা এই ফুল নামক নারী জাতিকে বানিয়ে রেখেছিল দাসীবাঁদী হিসেবে, ছিনিয়ে নিয়েছিল নারী জাতির সমস্ত অধিকার,শামিল করেছিল বন্য প্রাণীদের কাতারে, লুন্ঠন করে নিয়েছিল নারী জাতির মান সম্মান, ইজ্জত আব্রু,এবং মর্যাদা।
যারা বলতো “দশটি নারীর মাঝেও একটির বেশি আত্মা থাকেনা।তারা আরো বলতো ঘোড়া চটপটে বা অলস যায় হোক, তাকে চালাতে চাবুক ব্যবহার কর,আর নারী সতীই হোক বা অসতীই হোক তাকে ডান্ডা দিয়ে ঠান্ডা কর।
সেই অবহেলিত নারী জাতিকে তাঁর মর্যাদা, অধিকার, প্রাপ্য হক,ভিন্ন ভাবে শিক্ষার ব্যবস্থা,কর্মের ব্যবস্থা,এবং ধনী বানিয়েছে একমাত্র ইসলাম। যার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো নারী পিতার গৃহে থাকতে তাঁর সমস্ত দেখ ভাল,খরচ খরচা সবই বহন করতে হয় তার পিতাকেই।আর বিয়ার পর মৃত্যু পর্যন্ত তার স্বামীকে। এর পর ও সে মিরাছ পাই পিতার সম্পদের, স্বামী মারা গেলে স্বামীর। আল্লাহ আকবার! কতোই না মর্যাদা দিয়েছে নারী জাতিকে ইসলাম,যা অন্য কোনো ধর্ম বা সম্প্রদায় দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
কিন্তু আজ বড় আফসোস আর দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, আজকের এই প্রতিষ্ঠিত সমাজের কিছু নোংরা রুচির মানুষ তাদের খারাপ উদ্দেশ্য হাসিল করার জন্য মর্যাদার চাদরে জড়িয়ে থাকা নারী জাতিকে পাশ্চাত্যের আধুনিকতার গান শুনিয়ে, তাদের অসভ্য নারীদের গল্প শুনিয়ে, তাদের উলঙ্গ নারীদের চিত্র তুলে ধরে,নারীদের বিলাসে ভোগ করার জন্য মাতিয়ে উঠেছে।
আর কিছু চালাক নামক বোকা শ্রেণির নারীরা তাদের সেই নোংরা আহ্বানে রাস্তায় নেমে পুরুষের মতো রাস্তা ঘাটে, মাঠে ময়দানে চলাফেরা আর কাজ করার জন্য নারী স্বাধীনতার আন্দোলন করে বেড়াচ্ছে।
তারা আজ সাগরের সচ্ছ পানি ত্যাগ করে নর্দমায় জমা পঁচা দুর্গন্ধ পানিতে সাঁতার কাটার স্বপ্ন বুনছে। যার ফলে আজ নারী জাতি তাদের মান সম্মান,ইজ্জত আব্রু হারানোর দ্বার প্রান্তে পৌঁছে গেছে। দিনে রাতে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য খুন,গুম আর ধর্ষনের শিকার হচ্ছে হাজারো নারী। কি হবে আগামীতে এই ফুলের জাতি নারী জাতির?