
শেষ না হওয়া প্রতীক্ষা
উম্মি হুরায়েরা বিলু
নতুন দিনের ভোরে আজ পা রেখেছি অচেনা আঙিনায়।
চেনা হাসি, চেনা ভিড়—সবই ফেলে এসেছি গতকালের পাড়ে।
মঞ্চে আলো ঝলমল, চারপাশে অপরিচিত মুখের ঢেউ,
তবু আমার চোখ খুঁজে ফিরেছে একটিমাত্র চেনা ছায়া—
যে ছায়া একদিন আমার হাসির কারণ ছিল,
আমার কান্নার প্রথম শ্রোতা, আমার নীরবতার সাথী।
সভা শুরু হলো কুরআন তেলাওয়াত দিয়ে।
মন শুনতে চেয়েছিল পরিচিত সেই কণ্ঠস্বর,
কিন্তু না, তা আজ শোনা হলো না—সবই অপরিচিত।
সামনের সারি থেকে উঠে পিছনে চলে গেলাম,
কারণ মন তো পুরোনো স্মৃতির ভিড়ে হারিয়ে গেছে।
হৃদয়ের মধ্যে মিশে আছে উত্তেজনা আর এক অদ্ভুত শূন্যতা।
চারিদিকে খুঁজে ফিরি—নেই কোনো পরিচিত, আজ সবাই অপরিচিতা!
দরজার দিকে বারবার তাকাই—
এই বুঝি আমার চিরচেনা পরিচিত এসে দাঁড়াবে,
হাসিমুখে ডাক দেবে, “শোনো, আজও তো আমরা একসাথে আবার নতুন গন্তব্যের শুরু করবো, তাই না?”
কিন্তু দরজার ওপাশ থেকে
আসেনি কোনো পদধ্বনি—
শুধু বাতাসে উড়ছিল ঝুলতে থাকা বেলুনগুলো।
যেন তারা ফিসফিস করে বলছে—
কিছু প্রত্যাশা কখনো পূর্ণ হয় না।
অতীতের ছবিগুলো হঠাৎ ভেসে ওঠে চোখের সামনে—
ক্লাসের কোণে আমাদের অকারণ হাসি,
বৃষ্টির দিনে এক ছাতার তলায় ফেরা,
পরীক্ষার আগের রাতের ফিসফিস আলাপ।
সব স্মৃতি আজ যেন বুকের ভেতর দোলা দিয়ে উঠছে,
সেই মুহূর্তগুলো আজ আমার ভেতরে
এক অদৃশ্য ব্যথার তরঙ্গ তুলে যাচ্ছিল—
যা চোখে জল আনছিল,
তবু ঠোঁটে এনে দিচ্ছিল অদ্ভুত এক নীরব হাসি।
নবীন বরণের উজ্জ্বল সাজসজ্জা,
তবু আমার কাছে আজ সবই ধূসর—
কারণ এই উৎসবের ভিড়ে আমি একাই,
বন্ধুত্বের সেই পরিচিত হাতটি আর আমার পাশে নেই।
জানি, সময় বদলেছে, পথ বদলেছে,
তবু মনে হয়—
যদি আজ একবার দরজাটা খুলে
আমার বেস্টু এসে বলে,
“চলো, আবার শুরু করি।”
কিন্তু জীবন সবসময় সেই সুযোগ দেয় না—
শুধু মনে করিয়ে দেয়,
কিছু মানুষ দূরে চলে যায়,
তবু তারা থেকে যায়
আমাদের প্রতিটি নতুন পথের প্রতিটি দরজার ওপাশে,
এক অদেখা অপেক্ষার মতো।
দিনের শেষে ভিড় ধীরে ধীরে ফাঁকা হয়ে গেল।
আমি তখনও দরজার দিকে তাকিয়ে ছিলাম—
হয়তো তুমি আসবে,
হয়তো পুরোনো দিনের মতো
আমরা আবার নতুন পথের প্রথম পাতা লিখব একসাথে।
কিন্তু দরজাটা শেষ পর্যন্ত বন্ধই রইল।
তুমি আসোনি।
তবু আমার মনে হলো—
তুমি আছো
এই আঙিনার প্রতিটি বাতাসে,
প্রতিটি আলোছায়ার ভাঁজে,
আর আমার অপেক্ষার প্রতিটি দীর্ঘশ্বাসে।
স্মৃতি:১১-০৮-২০২৫