অনন্ত অসুখ
ফকির শাহিন শাহ্
আবহাওয়া গবেষকরা বলেছে। এ বছর নাকি আটা নব্বই সালে যে রকম পানি হয়েছিল। সে রকম পানি নাকি এ বছর হয়েছে বাংলাদেশে! সেই জন্যই মনে হয় এবার বর্ষায় চারিদিকে এত থইথই পানি।
মাথা ভরা চুল। নাসিকা বরাবর চুলের সিঁথি। চোখে চশমা। মুখ ভরা দাঁড়ি। গোঁফটা দুই দিকে উপর বাঁকানো জীবন মাহমুদের! জীবন মাহমুদ সবসময় এক রঙের পোশাক পড়তে পছন্দ করেন। তাই আজকেও তিনি এক রঙের কালো পাঞ্জাবি, পায়জামা ও চটি জুতা পড়েছেন। জীবন মাহমুদ এই ভরা বর্ষায় নৌকায় করে যাচ্ছে নানা বাড়ি। নানা অসুস্থ- নানাকে দেখতে যাচ্ছে নৌকায় করে। কবি মানুষ তো জীবন মাহমুদ- তাই চলন্ত নৌকায় বসে এত শাপলা ফুল দেখে মনটা আনন্দে ভরে যাচ্ছে! শাপলা ফুলের ঘাড়ে ধরে টান মেরে একটি শাপলা ছিঁড়ে শাপলার মুখে চুমু খেলো। চুমু খেয়ে মাঝিকে বললো, দেখেছ মাঝি প্রকৃতির কত রঙের মেলা?
— হ ভাইজান দেকছি তো।
— আরে শুধু দেখলেই চলবে? প্রকৃতির স্বভাবটা ধারণ করতে হবে না?
— কি কন ভাইজান! ফুলের স্বভাব ধারণ করা যায় নাকি?
— এই জন্যই তোমাদের আমি গর্দভ বলি। সৃষ্টিকর্তা প্রতিটা সৃষ্টির মধ্যেই আমাদের জন্য শিক্ষা রেখেছে এইটাও জানো না দেখছি।
— এইগুলানি আমার জাইন্না লাভ নাই ভাইজান। এইগুলা আমি বুজি না। আপনি কবি মানুষ। আপনি এইগুলানি বুজবেন ভালো। আফনেরে দিয়াই এইগুলানি মানাইবো।
— হয়েছে হয়েছে চুপ থাকো। তুমি তাড়াতাড়ি নৌকা বেয়ে যাও। সূর্য ডুবে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল আছে তোমার?
জীবন মাহমুদ থইথই পানিতে ফুটে থাকা শাপলা ফুল গুলোকে দেখছে। মুখে আনন্দের গোলাপি হাসি। নীরবে শুধু দেখে যাচ্ছে চারিদিকে তাকিয়ে।
নৌকা গিয়ে ভিড়লো নানা বাড়ির সামনে আম গাছের নিচে। জীবন মাহমুদ নৌকা থেকে নেমে দাঁড়ালো।
বাড়ির ভেতর থেকে উচ্চস্বরে দাদু দাদু দেখে যাও কে এসেছে। বলতে বলতে দৌড়ে এলো জীবন মাহমুদের সাত বছরের মামাতো ভাই সৌরভ। জীবন মাহমুদের নানিভাই এসে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো, এতদিন পর আমাদের মনে পড়লো ভাই? আয় ঘরে আয়। নৌকা থেকে দইয়ের হাঁড়ি ও মিষ্টি নিলো মামাতো ভাই সৌরভ।
নানাভাইয়ের সাথে দেখা করে। জীবন মাহমুদ বসে আছে বিল্ডিং এর সামনে মেরের উপর। এখান থেকে পুকুর ঘাট প্রজন্ত দেখা যায়। বর্ষার পানিতে এখন সব থইথই করছে। জীবন মাহমুদ দেখতেছে আম গাছের সাথে বাঁধা নৌকাটি।
এর মধ্যে বাড়ির বিপরীত পাশ থেকে হাসির শব্দ পেলো জীবন মাহমুদ। চমৎকার এই হাসির শব্দটা। মামাতো ভাই সৌরভ জিহ্বা দিয়ে চামচ চাটতে চাটতে এসে বসলো জীবন মাহমুদের পাশে। বললো ভাইয়া দই অনেক মজা। জীবন মাহমুদ হাসলো।
আবার পেলো ওই হাসির শব্দ। মনে হচ্ছে কি নিয়ে যেন বলাবলি করছে আর খলখল এমন হাসছে।
জীবন মাহমুদ সৌরভ কে জিজ্ঞেস করলো—
—ওইদিকে এই হাসির শব্দটা কার সৌরভ?
— মৃত্তিকা আপুর।
— আমাদের খালাতো বোন মৃত্তিকা?
— জ্বী ভাইয়া?
— ও কখন আসলো?
— আপু এখানেই থাকে ৯ মাস হলো। দাদুভাইয়ের দেখা শোনা করে। সময় মত ঔষধ খাওয়ায়।
জীবন মাহমুদ নীরবে উঠে গেলো বসা থেকে। সত্যিই তো মৃত্তিকা- সেই ছোট্ট মৃত্তিকা! ওরা হেসেই চলেছে। জীবন মাহমুদ কাছাকাছি দাঁড়িয়ে। ছোট্ট করে কাশি দিলো।
মৃত্তিকা ঘুড়ে তাকিয়ে জীবন মাহমুদকে দেখে। চুলের আড়ালে নিজের মুখটা একটু আড়াল করলো।
—জীবন মাহমুদ প্রশ্ন করলো, তুমি মৃত্তিকা?
— মৃত্তিকা মুখটা আড়াল করেই মাথা ঝাকুনি দিয়ে হুম বললো।
— আমাকে চিনছো? তোমাকে কত ছোট দেখেছি?
— হুম চিনেছি।
— তাহলে মুখ ঘুড়িয়ে আছো কেনো? আমার দিকে তাকাও।
জীবন মাহমুদ মৃত্তিকার চেহারা খানি দেখে।মৃত্তিকাকে লক্ষ্য করে একটি কবিতা বলতে শুরু করলো।
আমি যাকে ভালোবাসি, সে এক বালিকা
নব বালিকা – সে আমার মৃত্তিকা—
বয়স কেবল পনের কি ষোলো
এখনো সে কচি সবুজ পাতা।
তার আশা আছে হাজার বছর বেঁচে থাকার
আছে ভালোবাসার সুরা পাত্র—
সে দুরন্ত- চির মুক্ত স্বাধীন
সে হলুদ প্রজাপতির মতো পবিত্র।
মৃত্তিকা, সে আমার মৃত্তিকা
আমার এক জীবনের হাসি কান্না, দুঃখ সুখ—
জীবনের ডাইরিতে শুধু তার নাম
সে আমার ভালোবাসার অনন্ত অসুখ।
— এটার মানে কি কবি?
— এটার মানে তো তুমি, ঠোঁটে একটু হাসি দিয়ে বললো জীবন মাহমুদ।
— আমি ঠিক বুঝলাম না।
— ভালোবাসার জগতে মানুষ অবুজ থাকেনা। কাউকে ভালোবাসো, তখন ঠিক এই ভাষা বুঝতে পারবে।
— আপনাকে দেখে আমার ভয় করছে।
— কেনো? হাসতে হাসতে জিজ্ঞেস করলো জীবন মাহমুদ।
— আপনার এত বড় বড় গোফ দেখে।
— ওওহ তাই নাকি?
— মাথা ঝাঁকুনি দিয়ে হুম বললো মৃত্তিকা।
রাতে খেতে বসেছে জীবন মাহমুদ। সাথে নানা ও নানি। জীবন মাহমুদের প্লেটে তরকারি দিচ্ছে মৃত্তিকা। খাওয়া শেষ করে নানা নানি চলে গেলো রুমে। জীবন মাহমুদ বসে আছে সোফায়। সাথে সৌরভ, সৌরভ টিভিতে কাটুন দেখছে। জীবন মাহমুদ বাহিরে চলে এলো। টুক টুক করে বর্ষা কালের পাখিগুলো ডাকছে। জীবন মাহমুদ একটি সিগারেট ধরালো। হু শব্দ করে সিগারেটের ধোঁয়া ছাড়লো জীবন। আবার টানলো আবার ছাড়লো।
তার পরের দিন।
সাদা লুঙ্গি, সাদা গেঞ্জি ও গলায় একটি গামছা ঝুঁলিয়ে। সৌরভকে নিয়ে আম গাছের নিচে বাঁধা নৌকাতে গিয়ে বসলো জীবন মাহমুদ। জীবন মাহমুদ বৈঠা দিয়ে নৌকা বাইছে। সৌরভ শাপলা তুলতেছে নৌকায়। সামনে একটু উঁচু জায়গা আছে সেখানে যাবে। সব জায়গা তলিয়েছে ওই জায়গাটুকু তলায়নি বর্ষার পানিতে। নৌকা ভিড়িয়ে দিলো। সৌরভ নৌকা বাঁধলো একটি ডুমুর গাছের সাথে। জায়গায়টা সত্যি অতুলনিয়। একটি সিগারেট ধরালো জীবন মাহমুদ, সিগারেট খাচ্ছে আর চারিদিটা দেখছে। বাতাসে পাট পঁচা পানির গন্ধও আসছে।
— এখানে কি করবে ভাইয়া? বললো সৌরভ।
— কি করবো, চুপচাপ বসে থাকবো।
জীবন মাহমুদ আরও একটি সিগারেট ধরালো। সিগারেট শেষ করে বললো, চল এবার যাওয়া যাক।
আষাঢ় মাইষা ভাষা পানিরে, পুবালি বাতাসে,
বাদান দেইখা চাইয়া থাকি আমারনি কেউ আসে রে।
গানটি গাইতে গাইতে চলে এলো।
গত রাতের মত খাওয়া দাওয়া শেষ করে জীবন মাহমুদ বসে আছে সোফায়। মৃত্তিকা পাশের রুমে আয়না হাতে নিয়ে ক্রিম মাখছে মুখে! জীবন দড়জায় গিয়ে বললো, আসতে পারি? আয়নার দিকে তাকিয়ে থেকেই মৃত্তিকা হুম বললো। জীবন মাহমু একটা চেয়ার টেনে মৃত্তিকার পাশেই বসলো।
— মুখে কি দিচ্ছো এগুলো? বললো জীবন মাহমুদ।
— ক্রিম দিচ্ছি, ক্রিম ঘষতে ঘষতেই বললো মৃত্তিকা।
— বাহ্ বেশ তো।
মৃত্তিকার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসছে জীবন মাহমুদ।
— আপনি হাসছেন কেনো?
— আমার হাসির রহস্য তুমি বুঝবে না।
— পাগল আপনি?
মৃত্তিকা প্রেমে পরলে মানুষ পাগল হয় হ্যা? আমার হাসির রহস্য। এতটা কাছে থেকেও বুঝতে পারছো না। বুঝেছো জানি, তবুও বুঝতে দাওনা আমায়। আরে অপ্সরী তোমাকে ভালোবাসি। মৃত্তিকার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলছে জীবন মাহমুদ।
— উত্তর দিলেন না, পাগল আপনি?
— কেউ তো বলে না।
— আমি বললাম আপনি পাগল। এ বলে মৃত্তিকা নিজের পাঠ্য বইয়ে উপর আয়নাটা রেখে, চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। বইগুলো গুছাতে গুছাতে বললো, দেখুন তো এই বইটা কার?
— আমার! তুমি কোথায় পেলে?
— বড় আপুর কাছ থেকে।
— বাহ্ অপূর্ব।
— কি?
— না কিছু নয়। আচ্ছা আমাকে এক পেজ সাদা খাতা দেওয়া যায়?
— হুম দেওয়া যায়।
মৃত্তিকা এক পেজ সাদা খাতা ও কলম দিয়ে চলে গেলো নিজের রুমে। আর জীবন মাহমুদ লিখতে লাগলো।
জীবন মাহমুদ চিঠি লিখল। লিখা শেষে আর একবার ভালো করে লিখাটি নিজে পড়ে দেখলো। মৃত্তিকাকে ডাকলো জীবন মাহমুদ। মৃত্তিকাকে বললো, আর এক পেজ সাদা খাতা দাও। খাতা দিয়ে চলে গেলো মৃত্তিকা। জীবন মাহমুদ সাদা খাতা কেটে একটি খাম বানালো নিজ হাতে। খামের ভেতর চিঠিটা ভাঁজ করে রেখে। সুন্দর করে আঁটকে দিলো মুখটা। চিঠির উপর বড় করে আঁট কলম দিয়ে লিখে দিলো তোমার জন্য চিঠি!
চিঠিটা হাতে নিয়ে উঠে গেলো জীবন মাহমুদ মৃত্তিকার রুমে। মৃত্তিকা ঘুমিয়ে পড়েছে। তাই ডাকলো না জীবন মাহমুদ। চলে যেতে চেয়ে আবার থমকে দাঁড়ালো। পিছন ঘুড়ে খাঁটের কাছাকাছি এসে দাঁড়ালো। মৃত্তিকার মুখটা কী অদ্ভুতদর্শন। মৃত্তিকা বালিশের উপর দিয়ে পিছনে বিছিয়ে রেখেছে শীতলপাটির মত ঘন কালো চুলগুলো। বুক প্রজন্ত কাঁথা টেনে দিয়ে কী গভীর ঘুৃমে ঘুমচ্ছে। কী অদ্ভুত সুন্দর তুমি মৃত্তিকা। তোমার হলদে ত্বক যেন গোলাপি হচ্ছে! কী অদ্ভুত সুন্দর তুমি বললো জীবন মাহমুদ। বাহিরে এসে সিগারেট ধরালো জীবন মাহমুদ। জোছনার আলোতে যেন পৃথিবীটা পুড়ে যাচ্ছে! আম গাছের নিচে নৌকটি টুলটুল শব্দে টুলছে।
তার পরেরদিন সকালে।
সকালের নাস্তা করে বসে আছে সোফায় জীবন মাহমুদ। সামনের সোফায় বসা মৃত্তিকা ও তার সমবয়সী সুরভী। সেদিন ওরা দুজনেই কি যেনো বলছিলো আর অমন হাসছিলো।
— আপনি কবিতা কতগুলো লিখেছেন ভাইয়া? বললো সুরভী।
— না বেশি না। দুইটা পাণ্ডুলিপি তৈরী করেছি কেবল।
— আপনার আগের বইটা আমি পড়েছি।
— যাক ধন্য হলাম।
সামনে ডাইরির ভেতর থেকে চিঠিটা বের করলো জীবন মাহমুদ। মৃত্তিকাকে বললো, মৃত্তিকা তোমার জন্য চিঠি। মৃত্তিকা চিঠির উপরে বড় বড় করে লিখা তোমার জন্য চিঠি লিখাটি দেখে ধরলো না।
— কি হলো ধরো।
— না ওটা আমি ধরবো না।
— ঠিক আছে আমি তোমার বইয়ের মধ্যে রেখে দিচ্ছি পড়ে নিও।
— আমি ফেলে দিবো।
— না এ কাজ করো না। নিজ হাতে খাম বানিয়ে তোমার জন্য চিঠিটা তৈরি করেছি। একবার পড়েই দেখো।
চিঠিটা নিজ হাতে নিলো না মৃত্তিকা। জীবন মাহমুদ মৃত্তিকার পাঠ্য বইয়ের মধ্যে চিঠিটা রেখে নৌকোতে চলে গেলো।
— চিঠিটা পড়েই দেখ না মৃত্তিকা, বললো সুরভী।
— তুই গিয়ে পড়।
— আরে মানুষটি তোকে ভালোবাসে।
সুরভী বইয়ের মধ্যে থেকে চিঠিটি এনে খামটা ছিঁড়ল।
— নে পড়ে দেখ।
— না তুই পড় আমি শুনি।
— ঠিক আছে পড়ছি। পড়া শুরু করলো সুরভী।
প্রিয় মৃত্তিকা,
প্রথমেই দিলাম কবি মনের কবিতার সু রস। আশা করি খোদার রহমতে এই ভরা বর্ষায় ভালোই আছো। আমিও চাই তুমি ভালো থাকো।
আচ্ছা মৃত্তিকা, কল্পনাকাল আর মুহুর্ত কালের মধ্যে কী কোনো পার্থক্য আছে? এইযে আমি এখন তোমার পাশে আছি এটা মুহূর্ত কাল। আমি তোমার পাশে থাকবো না সেটা কল্পনাকাল। কেনো ওটা কল্পনাকাল? আমি তোমার পাশে থাকবো না ঠিক। কিন্তু তোমার মনে রয়ে যাবো। তুমি যদি একটু লক্ষ্য করো আমাকে দেখতে পাবে। কিভাবে হাঁটছি কিভাবে তোমার সাথে কথা বলছি। ওই দেখাটাকেই বলে কল্পনাকাল। তাই এই কল্পনাকাল তোমার পাশে থাকার জন্য, আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। জানো, সত্যি ভালোবেসে ফেলেছি। আমি তোমাকে আমার কবি মনের কবিতা বানাতে চাই। হাজার বছর দুজনে বেঁচে থাকার জন্য।
প্রিয় মৃত্তিকা,
এই পৃথিবীতে প্রতিটা পুরুষ হচ্ছে মাঝিহীন একটি নৌকা,
আর সেই নৌকার মাঝি হচ্ছে একটি নারী। তাই আমি মাঝিহীন নৌকায়, তুমি নামক মাঝিকে ভালোবেসে তুলতে চাই! এই পৃথিবীটা তো কিছু নয়, স্বপ্নের এক খেলা ঘর। চলো তুমি আর আমি একটা স্বপ্ন বাঁধি, এই স্বপ্নের বালুচরে বাঁধবো অনামের এক সুখের ঘর। সেই সুখের ঘরে প্রদীপ হয়ে জ্বলবে তোমার আমার ভালোবাসা। ভালোবাসি তোমায়।
ইতি
তোমার ভয় পাওয়া কবি
চিঠিটা শুনে মৃত্তিকা খলবলিয়ে হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে যেন কচি লাউয়ের মত শরীরটা হেলে পরছে।
— আরে তুই এমন হাসচ্ছিস কেনো?
— এটা হয় না সুরভী।
— কেনো হয় না?
— ও যে আমার খালাতো ভাই। আমি আত্মীয়র মাঝে আত্মীয়তা করতে চাই না।
— তাতে কি হয়েছে? দেখেছিস ও দেখতে কী সুদর্শন।
— আমি তো বলিনি সুদর্শনা। ওর চলন বলন সব কিছু আমার ভালো লাগে। আমি প্রথম দিন বুঝেছি ও আমাকে পছন্দ করে।
— তাহলে আর সমস্যা কি?
— ওইযে বললাম, আত্মীয় ও আমার আত্মীয়।
— তাই বলে ছেলেটাকে এই ভাবে কষ্ট দিবি?
— আমার আর কিছুই করার নেই। এ বলে উঠে গেলো মৃত্তিকা।
সুরভীর কাছ থেকে সব শুনেছে জীবন মাহমুদ। শুধু আত্মীয়তার দেয়াল সম্মুখে। না হলে জীবনকে ভালোবাসতো মৃত্তিকা। জীবন মাহমুদ চলে যাচ্ছে নিজ বাড়িতে। যাওয়ার আগে মৃত্তিকাকে বলে যাচ্ছে।
শোনো মৃত্তিকা জোড় করে ক্ষমতা পাওয়া যায় মন নয়। জোড় করে জমি দখল করা যায়, কিন্তু হৃদয় জমি নয়। তাই তোমাকে আমি জোড় করলাম না। তুমি আত্মীয়তার দেয়াল দাঁড় করালে ভালোবাসার সম্মুখে। তাই সেই দেয়াল আমি ভেঙ্গে দিলাম না। তবে আমার কল্পনার শূন্য ঘরে তুমি একটি ছবি হয়ে থাকবে। যখন আমি কবিতা লিখবো- সেই ছবির মুখে তাকিয়ে লিখবো। তোমার প্রতি শুভকামনা ও ভালোবাসা রইলো।
জীবন মাহমুদ নৌকায় করে চলে যাচ্ছে। নানা নানি হাত ইশারা দিয়ে বিদায় জানাচ্ছে। হাজার হাজার শাপলা ফুল ফুটে আছে বিলের মধ্যে! সূর্যটা লাল হয়ে আছে পশ্চিম আকাশে। বড় এক খণ্ড কালো মেঘ দাঁড়িয়ে আছে সূর্যটির পাশে! নানা বাড়ি থেকে নৌকা অনেক দূর চলে গেছে। মিলে গেলো জীবন মাহমুদ শাপলা ফুলের অন্তরালে।
সমাপ্ত….।
আরো পড়ুন এবং লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য