পড়া মনে রাখার সাইন্টিফিক ও কুরআনিক উপায়। The scientific and qur’anic way to remember reading.
ক্লাস শুরু হতে না হতেই আমাদের মধ্যে কৌতূহল জাগে কিভাবে বইগুলো শেষ করা যায়?সেই কৌতূহল থেকে রূপধারণ করে ডিপ্রেশন। যখন অর্ধবার্ষিক কিংবা মিড টার্ম পরীক্ষা আসে তখন এক ধ্যানে পড়া ছাড়া উপায় থাকে না। কিন্তু এটা কি আদৌ কার্যকরী উপায় কয়েকদিনে সব বই শেষ করে দিতে? না-কি প্রতিদিনের পড়া প্রতিদিন শেষ করে মনে রাখার মাধ্যমেই সুফল ভোগ করা যায়? যদি এটাই হয়ে থাকে তাহলে পড়া মনে রাখার উপায় কী? আর বিজ্ঞান ও কুরআনের কোনো সমঝোতা আছে কি এ বিষয়ে?
প্রথমে আমি আলোচনা করবো ৪ টা গুরুত্বপূর্ণ সাইন্টিফিক মেথড নিয়ে। ফাইনম্যান পদ্ধতি, পোমোডোরো পদ্ধতি,নেমোনিক পদ্ধতি।
পদার্থবিদ রিচার্ড ফাইনম্যান প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। কোনো কিছু শেখানোর সময় আপনাকে সেই পড়াটি নিজের মতো গুছিয়ে সংক্ষেপ করে নিতে হয়; করতে হয় আলোচনাও। এরপর যখন তা আপনি অন্যকে বুঝাতে যাবেন সহজে তা আপনার মধ্যে মনে থাকার পার্সেন্টিজ বাড়িয়ে দিবে কয়েক গুন বেশি।
পড়াশোনার মাঝখানে মুঠোফোন হাতে নিয়ে ফেসবুক, ইউটিউবে ঢুঁ দেওয়া কিংবা অন্যমনস্ক হয়ে যাওয়া আমাদের এক নিত্য সমস্যা। যার ফলে পড়াশোনায় ব্যাঘাত ঘটে এবং পড়া ঠিকমতো না হওয়ায় তা মনে থাকার সম্ভাবনাও বেশ কমে যায়। এর থেকে রেহাই পেতে হলে আমাদের যে পদ্ধতি অবলম্বন করতে হবে সেটাই হলো পোমোডোরো পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একজন মানুষ মোট ২৫ মিনিট সময় নিয়ে কোনো একটি কাজ করবেন এবং কাজ শেষে ৫ মিনিটের বিরতি নেবেন। ওই পঁচিশ মিনিট নিজেকে অন্য সবকিছু থেকে দূরে রাখতে হবে। আর বিরতির পাঁচ মিনিটকে বেছে নিতে হবে অন্য যে কোনো কাজ কিংবা বিশ্রামের জন্য। এতে করে মূল কাজের প্রতি মনোযোগ বাড়ে, কাজের প্রভাবও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এই পদ্ধতি পড়াশোনায় প্রয়োগ করলে পড়া হবে আরও কার্যকর, আর মনেও থাকবে লম্বা সময় পর্যন্ত। এ পদ্ধতি -টি ১৯৮০ সালের শেষের দিকে ফ্র্যাঞ্চেস্কো নামের এক উদ্যোক্তা এই পদ্ধতি আবিষ্কার করেন।
অনেক ছোট তথ্য মনে রাখার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয়। ছড়া, গল্প, ছবি, ইত্যাদির মধ্যে তথ্য যুক্ত করে মনে রাখাকে আরও সহজ করাই হচ্ছে এই পদ্ধতির মূল বৈশিষ্ট্য। যেমন আপনি একটি সাল মনে রাখবেন বা কতক সাল মনে রাখা প্রয়োজন আপনি সেটা আপনার অনুকূলে আনতে পারতেছেন না, তখন কিভাবে মনে রাখবেন? বিভিন্ন কবিতা বা ছন্দের মাধ্যমে সেটা আপনি মনে রাখতে পারেন। ইংরেজির যেমন প্রেপজিশন অনেক কিভাবে মনে রাখব? যদি একটি পৃষ্ঠায় ছবি একে সেই রুলসগুলোর মূল পয়েন্ট ছবি আকারে রেখে দেন তাহলে যেকেনো সময় এক পৃষ্ঠার দিকে তাকালে এক টপিক ইজিলি শেষ হবে। আর এই নীতি অনেক দরকার হয়ে থাকে।মূলত ভোকাবুলারি, বিভিন্ন বছর বা যে কোনো ছোট কিছু তথ্য মনে রাখার। এই কৌশল হয়ে উঠতে পারে বেশ কার্যকর। আর এটার নামই হলো নেমোনিক পদ্ধতি।
আমরা সকলেই জানি আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাতে তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। এক্ষেত্রে আমরা নিন্মোক্ত দু’আটি পাঠ করতে পারি-
رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
বাংলা উচ্চারণ : রাব্বি যিদনি ইলমা
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ১১৪)
তাছাড়া জিকির বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন…। (সুরা কাহাফ, আয়াত : ২৪)
তাই আমাদের উচিত জিকির, তাসবিহ (সুবহান আল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবির (আল্লাহু আকবার)- এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করা।
দোয়াটি হলো (আরবি) :
ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴﻢُ
বাংলা উচ্চারণ : সুবহানাকা লা ইলমা লানা ইল্লা মা আল্লামতানা, ইন্নাকা আনতাল আলিমুল হাকিম।
অর্থ : (হে আল্লাহ) আপনি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে আপনি আমাদিগকে যা শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় আপনিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, হেকমতওয়ালা। (২/৩২)
কোরআন-সুন্নাহর আলোকে এখানে কয়েকটি দোয়া ও আমল বলা হয়েছে—
এক. ইখলাস বা আন্তরিকতা
যেকোনো কাজে সফলতা অর্জনের ভিত্তি হচ্ছে ইখলাস বা আন্তরিকতা। আর ইখলাসের মূল উপাদান হচ্ছে বিশুদ্ধ নিয়ত। নিয়তের বিশুদ্ধতার গুরুত্ব সম্পর্কে উস্তাদ খুররাম মুরাদ বলেন, ‘উদ্দেশ্য বা নিয়ত হলো- আমাদের আত্মার মতো অথবা বীজের ভিতরে থাকা প্রাণশক্তির মতো। বেশিরভাগ বীজই দেখতে মোটামুটি একইরকম, কিন্তু লাগানোর পর বীজগুলো যখন চারাগাছ হয়ে বেড়ে উঠে আর ফল দেওয়া শুরু করে তখন আসল পার্থক্যটা পরিস্কার হয়ে যায় আমাদের কাছে। একইভাবে নিয়ত যত বিশুদ্ধ হবে আমাদের কাজের ফলও তত ভালো হবে।’
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের এছাড়া কোনো নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামাজ কায়েম করবে এবং জাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম।’ (সুরা আল-বায়্যিনাহ, আয়াত : ০৫)
তাই আমাদের নিয়ত হতে হবে এমন যে, আল্লাহ আমাদের স্মৃতিশক্তি যেন একমাত্র ইসলামের কল্যাণের জন্যই বাড়িয়ে দেন।
দুই. দোয়া করা ও জিকির করা
আমরা সকলেই জানি আল্লাহর সাহায্য ছাড়া কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এজন্য আমাদের উচিত সর্বদা আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাতে তিনি আমাদের স্মৃতিশক্তি বাড়িয়ে দেন এবং কল্যাণকর জ্ঞান দান করেন। এক্ষেত্রে আমরা নিন্মোক্ত দু’আটি পাঠ করতে পারি,
رَّبِّ زِدْنِي عِلْمًا
বাংলা উচ্চারণ : রাব্বি যিদনি ইলমা
অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি করুন। (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ১১৪)
তাছাড়া জিকির বা আল্লাহর স্মরণও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘…যখন ভুলে যান, তখন আপনার পালনকর্তাকে স্মরণ করুন…। (সুরা কাহাফ, আয়াত : ২৪)
তাই আমাদের উচিত জিকির, তাসবিহ (সুবহান আল্লাহ), তাহমিদ (আলহামদুলিল্লাহ), তাহলিল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ) ও তাকবির (আল্লাহু আকবার)- এর মাধ্যমে প্রতিনিয়ত আল্লাহকে স্মরণ করা।
ইলমের নূর পেতে হলে আরেকটি দিক আমাদের মেইনটেইন করতে হবে।
প্রতিনিয়ত পাপ করে যাওয়ার একটি প্রভাব হচ্ছে দুর্বল স্মৃতিশক্তি। পাপের অন্ধকার ও জ্ঞানের আলো কখনো একসাথে থাকতে পারে না।
ইয়াহইয়া বিন ইয়াহইয়া বলেন, “এক ব্যক্তি মালিক ইবনে আনাসকে প্রশ্ন করেছিলেন, ‘হে আবদ-আল্লাহ, আমার স্মৃতিশক্তিকে শক্তিশালী করে দিতে পারে এমন কোন কিছু কি আছে? তিনি বলেন, যদি কোন কিছু স্মৃতিকে শক্তিশালী করতে পারে তা হলো পাপ করা ছেড়ে দেয়া।” (আল-জামি : ২/৩৮৭)
যখন কোনো মানুষ পাপ করে এটা তাকে উদ্বেগ ও দুঃখের দিকে ধাবিত করে। সে তার কৃতকর্মের ব্যাপারে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। ফলে তার অনুভূতি ভোঁতা হয়ে যায় এবং জ্ঞান অর্জনের মতো কল্যাণকর ‘আমল থেকে সে দূরে সরে পড়ে। তাই আমাদের উচিত পাপ থেকে দূরে থাকার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করা।
অবশ্যই ভালো খাদ্য গ্রহণ করতে হবে-
পরিমিত ও সুষম খাদ্য গ্রহণ আমাদের মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্য একান্ত আবশ্যক। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ আমাদের ঘুম বাড়িয়ে দেয়, যা আমাদের অলস করে তোলে। ফলে আমরা জ্ঞানার্জন থেকে বিমুখ হয়ে পড়ি। তাছাড়া কিছু কিছু খাবার আছে যেগুলো আমাদের মস্তিষ্কের জন্য খুবই উপকারী। সম্প্রতি ফ্রান্সের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যয়তুনের তেল চাক্ষুস স্মৃতি (visual memory) ও বাচনিক সাবলীলতা (verbal fluency) বৃদ্ধি করে। আর যেসব খাদ্যে অধিক পরিমাণে Omega-3 ফ্যাট রয়েছে সেসব খাদ্য স্মৃতিশক্তি ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপের জন্য খুবই উপকারী। স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধির জন্য অনেক ‘আলিম কিছু নির্দিষ্ট খাদ্য গ্রহণের কথা বলেছেন।
ইমাম আয-যুহরি বলেন, ‘তোমাদের মধু পান করা উচিত কারণ এটি স্মৃতির জন্য উপকারী।’ মধুতে রয়েছে মুক্ত চিনিকোষ যা আমাদের মস্তিষ্কের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া মধু পান করার সাত মিনিটের মধ্যেই রক্তে মিশে গিয়ে কাজ শুরু করে দেয়। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি হাদীস মুখস্থ করতে চায়, তার উচিত কিসমিস খাওয়া।’
সাইন্টিফিক মেথড ও কুরআনিক টিপস গুলো যদি আমরা রিসার্চ করি তাহলে দেখতে পাই এই বিষয়গুলোর প্রতি কেউ গুরুত্ব দিলে অবশ্যই সে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ করবে ইন শা’ আল্লাহ। আল্লাহ আমাদের উনার ইবাদাত পালন করার সাথে সাথে সঠিক নিয়ম পালন করার তাওফিক দান করুন।
লেখক নাম-
মোঃ রিয়াদ হাসান
পড়ালেখা-
আন্তর্জাতিক ইসলামী ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম
ডিপার্টমেন্ট – কুরআনিক সাইন্স এন্ড ইসলামিক স্টাডিজ
কন্টাক্ট ইমেইল-
riadsdream@gmail.চম
নিয়মিত পড়ুন এবং লেখুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য