ভালোবাসার রঙ
বখতিয়ার উদ্দিন
(নাটিকা)
চরিত্র
শুভা- ছাত্রী
নাবিল :- ছাত্র
রিয়া – ছাত্রী
শুভ – ছাত্র
ক্যাটরিনা – ছাত্রী
হিরু – ছাত্র
আবিদ – শিক্ষক
১ম অংক,১ম দৃশ্য
শুভা আর রিয়া হেঁটে কলেজে যাচ্ছে। রাস্তায় পাশের দোকান থেকে গান ভেসে আসছে।…..আমি সাগরে ফুল ফোঁটাবো,শুধু তোমায় নিয়ে।
দূরে গিয়ে শুভা আর রিয়া হেসে উঠে।
রিয়া:- সাগরে ফুল ফোঁটাবে না, ছাই ফোঁটাবে।বিয়ে করতে গেলে ছাগল হয়ে যাবে।
শুভা:- ঠিক বলেছিস, দোস্ত। আমি ছেলেদের একদম বিশ্বাস করি না।
রিয়া:- কেন?ছেলেদের থেকে কোন ছ্যাকা খেলি নাকি?
শুভা:- আরে না।ছ্যাকা খেতে যাবো কেন?
রিয়া:- কোন বিশ্বাস আছে নাকি?কখন কি খেয়ে বসিছ।
শুভা:- তুই না একটা।
(তারা কথা বলতে বলতে কলেজে ঢুকে পড়ে।)
২য় দৃশ্য
শুভ আর নাবিলের মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে কথা হচ্ছে।
শুভ :- জানিস দোস্ত, কলেজে অনেক সুন্দরী একটা মেয়ে ভর্তি হয়েছে।
নাবিল :- ( দূরে শুভার দিকে ইঙ্গিত করে) ঐ মেয়েটার কথা বলছিস?
শুভ :- দেখছি আমার চেয়ে তুই বড় লুইচ্ছা।কোন মেয়ে বেশি সুন্দর আগে থেকে জানিস।
নাবিল :- এতে লুইচ্ছামীর কি আছে? সুন্দরকে তো সুন্দর বলতে হবে।
শুভ :- দূর! এই একটা সুন্দর মেয়ে হলো?জীবনে মনে হয় আর কোন মেয়ে দেখিসনি।
নাবিল :- যা ব্যাটা!সব কথা তুই বলিস। একটা পাগল। তোর থেকে তো কাজের বুয়া ক্যাটরিনাকে ভালো লাগে।
৩য় দৃশ্য
নাবিল, শুভ,হিরু ক্লাস শেষ করে বসে আছে।
শুভ :- দোস্ত, আজ আবিদ স্যারের ক্লাসটা দারুণ হয়েছে।
নাবিল :-হ্যাঁ।
শুভ :- স্যার নাকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করে এসেছে।
হিরু:- আমারো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার ইচ্ছে আছে।
শুভ :- ডেকসী মাজতে পারবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া এতো সহজ না।
( তাদের সামনে রিয়া আর শুভা আসে)
রিয়া:- আরে দোস্ত, তুই এই কলেজে?
শুভ :- আমি তো এই কলেজে ভর্তি হয়েছি।তুইও ভর্তি হয়েছিস নাকি?নাকি কোন বয় ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এলি?
রিয়া:- তুই আগের মতো রয়ে গেছিস।কারো সাথে দেখা করতে আসবো কেন?আমি এই কলেজে ভর্তি হয়েছি।
শুভ :- তুই কোন গ্রুপে?এতো দিন দেখিনি যে?
রিয়া:- কেন?বিজ্ঞানে।তুই মানবিকে চলে গেছিস নাকি?
শুভ :- হ্যাঁ।
রিয়া:- অহ!(নাবিল আর হিরুর দিকে)এরা কারা?
শুভ :- এরা আমার বন্ধু।আমাদের ক্লাসে পড়ে। (শুভার দিকে) তুর পাশেরটা কে?
রিয়া:- আমার বান্ধবী শুভা।
শুভ :- কি বলিস দোস্ত! শুভ – শুভা মিলে গেল রে।
রিয়া:- দূর দুষ্ট! তুই আগের মতো দুষ্ট রয়ে গেছিস। একটু পরিবর্তন হলিনা।
৪র্থ দৃশ্য
শুভ, নাবিল আর হিরুর মধ্যে কথা হচ্ছে।
শুভ :- জীবনে পেয়ে গেলামরে দেস্ত!
নাবিল :- কি পেয়ে গেলি?
শুভ :- কেন!শুভ-শুভা।কি যে চুপচাপ আমার দিকে তাকিয়েছিল।তারপর কি একটা মুচকী হাসি।
নাবিল :- হাসিতে বিষ ছিল না?একটু খেয়ে মরে যেতি।
শুভ :-দূর শালা!বিষ খেতে যাবো কেন।কি যে চুপচাপ!!
নাবিল :- চুপচাপ মানি বোমা ফাঁটানো।এই সব বাদ দিয়ে ভালো করে পড়াশোনা কর।তখন সামনে কত এসে চুপচাপ হাসবে।
২য় অংক, ১ম দৃশ্য
রিয়া আর শুভর সাথে কথা হচ্ছে।
রিয়া:- আচ্ছা, তোমার বন্ধ নাবিল না বলেছিলে?ও এতো চুপচাপ থাকে কেন?
শুভ :- কেন?তোর পছন্দ হয়েছে নাকি?
রিয়া:- এই সব কি বলিস?
শুভ :- ও কিন্তু এমনে চুপচাপ থাকে যে।কিন্তু সুযোগ পেলে ঠিকই শব্দের হাঁড়ি ভাঙ্গে।
রিয়া:- তাই নাকি?ওর ফেইসবুক আইড়িটা আমাকে দিস তো।
শুভ :- দিব, তবে তোর বান্ধবী শুভার আইড়ি আমাকে দিতে হবে।
রিয়া:- ও ফেইসবুক ব্যবহার করে না।
শুভ :- দূর শালা।আইড়ি খুলে দিবি।
রিয়া:- ঠিক আছে।
২য় দৃশ্য
নাবিল, শুভ আর হিরু বসে আছে। হিরুর হাতে একটি ফুল। হিরু ফুলটি বারবার নাড়াচাড়া করছে।
হিরু:- আসে না কেন ক্যাটরিনা।
(আবিদ স্যার তাদের সামনে দিয়ে কলেজে আসে)
শুভ :- এই ফুল লুকিয়ে ফেল।আবিদ স্যার আসতেছে।
হিরু:-(স্যার সামনে আসতে ফুল লুকিয়ে ফেলে)
শিক্ষক আবিদ:- তোমাদের কি খবর?
শুভ :- ভালো স্যার!
শিক্ষক আবিদ :- ঠিক আছে। ভালো করে পড়াশোনা কর। বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করো।
শুভ :- দোয়া করবেন স্যার!
শিক্ষক আবিদ :-অবশ্যই।
(শিক্ষক আবিদ চলে যায়)
নাবিল :- আমাদের আবিদ স্যার অনেক ভালো রে।
হিরু:- আমার ক্যাটরিনা আসতেছে।
নাবিল :- তোর ক্যাটরিনা রাখ।এখন ক্লাসে চল।স্যার কি বলেছে শুনিসনি।বাবা-মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে হবে।
৩য় দৃশ্য
নাবিল আর শুভর মধ্যে কথা হচ্ছে।
শুভ :- দোস্ত, আমাদের মাঝে সব হয়ে গেছে।
নাবিল :- কি হয়ে গেছে?
শুভ :- শুভার সাথে আমার সম্পর্ক।
নাবিল :- আমি জানলাম না তো।
শুভ :- গতকাল সব হয়ে গেছে। তাকে একটা ফুলও দিয়েছি।
নাবিল :- নিয়েছে?
শুভ :- নিবে না মানি।তার চৌদ্দ গোষ্ঠী এসে নিবে।আমার মতো ছেলে পাবে কোথায়?
নাবিল :- অহ! তাহলে এই খবর।
৪র্থ দৃশ্য
রিয়া আর শুভার মধ্যে কথা হচ্ছে।
রিয়া:- তোমার নাকি শুভর সাথে সম্পর্ক হয়ে গেছে?সেই দিন দেখলাম রিক্সা করে দুই জনে যাচ্ছ।
শুভা:- (রেগে)তোমরা না, কোন কিছু পেলে সারা রাজ্য করে ছাড়ো।আমি কি তোমাকে বলেছি শুভর সাথে আমার সম্পর্ক হয়েছে?
রিয়া:- কলেজের সবাই বলতেছে তাই বললাম আর কি?
শুভা:- কলেজের সবাই বললে কি তুমিও বলবে?আজকাল তো কথা লম্বা করার মানুষের অভাব নেই। কারো কোন কিছু পেলে তো লেগে থাকবে।
রিয়া:- আমি এই সবের কি জানি বাবু!
শুভা:- এখন তো কচি খুকি হয়ে যাবে।তুমি কি কোন দিন দেখেছ আমি শুভর সাথে রিক্সায় ছড়েছি?
রিয়া:- বাহ রে!একটু বললাম তাই বলে কি এতো রাগ করতে হবে?
শুভা:- একটু একটু বলে তো সারা জীবন বিরক্ত করতে থাকবে।
রিয়া:- ( মাথা নিচু করে)আমাকে ক্ষমা করো।
শুভা:- কোন মেয়ের ব্যাপারে কোন কিছু বলার আগে ভাবা উচিত যে,মেয়েরা পারিবারিক, সামাজিক ভাবে কতটা অপমানিত হয়।
৩য় অংক, ১ম দৃশ্য
হিরু ফুল হাতে নিয়ে ক্যাটরিনার দিকে ছুটে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে ফুলে চুমা দিচ্ছে। ক্যাটরিনার সামনে আসতে ক্যাটরিনা হিরুর গালে এক থাপ্পড় মারে।থাপ্পড় খেয়ে হিরু মাটিতে শুয়ে থাকে।
২য় দৃশ্য
শুভ আর রিয়ার সাথে কথা হচ্ছে।
রিয়া:-আসলে শুভা কিছুতেই রাজী হচ্ছে না।
শুভ :- কি বলিস দোস্ত!ও রাজী না হলে আমি মরে যাবো।
রিয়া:- তোরা যে কি!একটু কিছু হলে মরে যেতে চাস কেন?ও এমন মেয়ে নয়।জীবনেও প্রেম ট্রেম করবে না।
শুভ :- তোর নীতি জ্ঞান বাদ দেয়। কিছু একটা উপায় বের কর।
রিয়া:- ঐ মেয়ে ছাড়া আর কোন মেয়ে দেখিস না?কত মেয়ে তো তোর জন্য পাগল।
শুভ :- ( চুপ করে থাকে)
রিয়া :- কিছু বলছিস না যে, আচ্ছা দোস্ত, হিরু নাকি আমাদের ক্যাটরিনার পিছু লেগেছে?
শুভ :- হুম।সেই দিন তো ফুল একটা হাতে নিয়ে ক্যাটরিনার সামনে গিয়ে বলে, আমি সালমান খান।বলতে না বলতে মুখে এক থাপ্পড়।
রিয়া:- (হেসে)কি বলিস দোস্ত! তোরা সম্পর্কের জন্য এতো অপমানিত হোস।তবুও তোদের শিক্ষা হয় না?
শুভ :- আমরা থাপ্পড় খেলে কি হবে?তোরা তো ভিতরে ভিতরে কান্না করে মরে যাস।
রিয়া:- আমরা এসে তোদের বলছি তো!এই দোস্ত, দেখ দেখ হিরু ক্যাটরিনার পিছু ছুটতেছে।যেন পাগল একটা।
৩য় দৃশ্য
ক্যাটরিনা হেঁটে যাচ্ছে। তার পিছু পিছু হিরু ফুল একটা নিয়ে হাঁটছে।
ক্যাটরিনা:- আবার কি থাপ্পড় খাবে?
হিরু:- তোমার যত থাপ্পড় খাবো তত হবো ধন্য।আমি এসেছি শুধু তোমার জন্য।
ক্যাটরিনা:- কলেজে সবাই তোমাকে পাগল বলে। সত্যি আজ পাগলের পরিচয় দিলে।
হিরু:- আমাকে পাগল বললেও সবাই তোমাকে বলে কাজের বুয়া। আরো তোমার নাম রেখেছে ক্যাটরিনা।
ক্যাটরিনা:- আমাকে অপমান করছো কেন?
হিরু:- অপমান করার ধর্ম আমার নয়।একটি সুন্দর সম্পর্কে যাওয়া আমার ধর্ম।
ক্যাটরিনা:- লাথি মেরে মেরে মিষ্টি দান।তোমার অপমানিত সম্পর্কের গোষ্ঠী খিলায়।
হিরু:- এমন করে বলে না ক্যাটরিনা।এক বার হলে ফুলটি হাতে নাও।
ক্যাটরিনা:- নিতে পারবো না।
হিরু:- এমন করে বলো না।খুবই কষ্ট পাবো।
ক্যাটরিনা:- ঠিক আছে। দাও।(হিরু ক্যাটরিনার হাতে ফুল দেয়, ক্যাটরিনা ফুল হাতে নিয়ে) এই যাবৎ বারোটি ছেলে থেকে গোলাপ পেলাম।
৪র্থ দৃশ্য
নাবিল আর শুভর সাথে কথা।
নাবিল :- তুই এতো মিথ্যা কথা বলিস কেন?
শুভ :- কি মিথ্যা কথা বলি?
নাবিল :- তোর সাথে শুভার সাথে সম্পর্ক, এই সব আজেবাজে কথা।
শুভ :- তোর গা জ্বলে কেন?
নাবিল :- আমার গা জ্বলবে কেন?
শুভ :- কচি খোকা সাজো!তুমি তো শুভাকে পছন্দ করো মনে হয়!
নাবিল :- সত্যি বলছি, আমার গা জ্বলবে কেন?আর শুভাকে আমি পছন্দ করতে যাবো কেন?
শুভ :- তাহলে আমার জন্য কিছু একটা কর।
নাবিল :- আচ্ছা দেখি।
৫ম দৃশ্য
রিয়ার সাথে শুভার কথা হচ্ছে।
রিয়া:- সত্যি কি শুভকে তোর একদম ভালো লাগে না।
শুভা:- একই কথা বারবার বলবো কেন? তাকে দেখলে আমার গা জ্বলে।
রিয়া :- তুই এমন কেন!
শুভা:- এমন হবো কেন!আরো কত শান্ত, ভদ্র ছেলে আছে। ধর নাবিল কত ভদ্র ছেলে।
রিয়া:- অহ!নাবিলকে তোর ভালো লাগে?
শুভা:- তোমারা না।মুখ থেকে কোন কিছু পড়ার সাথে সাথে গিলে নাও।
রিয়া :- কোন কিছু বললে দোষ।
শুভা:- দোষ হবে কেন?কোন কিছু বলার আগে হিসাব করলে তো হয়?
রিয়া :-ঠিক আছে বাবা, আর কোন কিছু বলবো না।
৪র্থ অংক, ১ম দৃশ্য
সবাই ক্যান্টিনে বসে চা পান করচ্ছে। নাবিল, শুভা,রিয়া,শুভ,হিরু আর ক্যাটরিনা।
শুভ :- (হিরুকে উদেশ্য করে)কিরে দোস্ত, সম্পর্ক কেমন চলে?
হিরু :- দারুণ!
ক্যাটরিনা:- ( হেসে শুভকে উদ্দেশ্য করে) তুমিও কোথায় দৌড় দাও।
শুভ :-(শুভার দিকে তাকিয়ে)দৌড় তো দিতে চাই।
শুভা:- রিয়া চল।এখানে বসে আমার মাথা ঘুরতাছে।
(সবাই চুপ থাকে। রিয়া আর শুভা উঠে চলে যায়।)
২য় দৃশ্য
একটি ছেলে এসে নাবিলের হাতে একটি চিঠি দেয়। নাবিল চিঠি খোলে পড়ে……।
নাবিল,
শুভেচ্ছা নিও।আশা করি ভালো আছো?আমি কাউকে বিশ্বাস করতে পারছি না তাই তোমাকে লিখলাম।আমি পরিবারের সাথে কানাডা চলে যাচ্ছি। কাউকে কিছু বলে যেতে পারিনি বলে দুঃখীত।এমন কি আমার কাছের বন্ধু রিয়াও এই ব্যাপারে কিছু জানে না।ভালো থেক।হয়তো জীবনে আর কোন দিন দেখা হবে না।
ইতি
শুভা
(নাবিল চিঠি পড়ে চুপ করে থাকে)
৩য় দৃশ্য
রিয়া আর শুভর সাথে কথা হচ্ছে।
রিয়া :- পাখি তো উড়ে গেছে। এখন কি করবি?
শুভ :- কি আর করবো?তুই তো আছিস?
রিয়া :- আমি কি করবো?
শুভ :- আমার সাথে রিলেশন করবি।
রিয়া :- ( লজ্জা পেয়ে) সত্যি!
শুভ :- আমি তো কত কাল থেকে তোকে বলতে চাচ্ছি। কিন্তু খিয়াল করিস না।
রিয়া :- কি খিয়াল করবো?
শুভ :- কিছু না।