এক চিলতে আবেগ কলমে আমাতুল্লাহ ফাতেমা

এক চিলতে আবেগ

এক চিলতে আবেগ
আমাতুল্লাহ ফাতেমা

পরীক্ষার হলে এক অনুচরী  আজ বাসে এক মজার ঘটনা ঘটেছে বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। এমন সময় আমি  মার্ক শীটের কার্যাদি শেষ করার কাজে মন দিচ্ছিলাম। অন্যদিকে গল্পটি শুনতে ইচ্ছে করছিল।মার্কশীটের কাজে মনোযোগী হওয়ায় অনুচরী আমাকে তা শুনাতে উদগ্রীব হয়ে বলতে লাগল শুনবেন না সেই মজার গল্প।কাজ শেষে মনোযোগী হলাম গল্প শোনার কাজে।যদি ও গল্প  করা অনুচিত পরীক্ষার হলে।

সে বলতে ও আমি শুনতে শুরু করলাম।

—বাসে আমি লেডিস সিটে বসেছিলাম।পিছনে সিট ফাঁকা হওয়ায় পিছনে গিয়ে বসলাম।পাশে একজন মহিলা ও এক পিচ্চি  কথা বলছে।

পিচ্চি: আমি স্কুলে পড়ব না, মাদ্রাসায় পড়ব।

মহিলা: কেনো স্কুলে পড়বে না বলো তোহ?

পিচ্চি: স্কুলে স্যার ছাত্র কেউ নামাজ পড়ে না।তাই পড়ব না।

মহিলা:কে বলছে?  স্যারেরা নামাজ পড়ে না?

পিচ্চি : না পড়ে না।আমি দেখেছি।মাদ্রাসার সবাই নামাজ পড়ে। সবাই অনেক ভালো হয়।আমি মাদ্রাসায় পড়বো।

 অনুচরী: বাচ্চা টা তো অনেক বুঝদার। পিচ্চি টাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করে দিতে পারেন তোহ্।সে অনেক ভালো মানুষ হবে।মহিলার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি কপলে কিসের জেনো ফোটা দেয়া।জিঙ্গাসায় বলল 

চন্দনের তিলক।হাতের দিকে তাকিয়ে দেখি শাখা পড়া। আমি তো আশ্চর্যান্মিত।আমাকে জানতেই হবে আসল বিষয় কি? হিন্দু মহিলার ছেলে মাদ্রাসায় পড়তে চায়!

আমি: গল্পের মাঝে হু হা উচ্ছাস চলছে।কিন্তু হিন্দুধর্মী শুনে আশ্চর্যান্মিত হয়ে শুনতে লাগলাম।কিন্তু তাতেই অনুচরীর ফোন বাজলে ফোনালাম শুরু হয়ে গেল।ফোনালাপ চলতে চলতে ফোন বন্ধ হয়ে গেল।ফোন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছুটা আতস্ত হলাম এবার  বাকিটুকু জানতে পারব।না। তা হলো না।বলল-ফোন চার্জে দিয়ে ভাবীর সাথে ইম্পর্টেন্ট কথা সেরে আসি।

তারপর চলতে লাগল-

– আপনি কি হিন্দু?

-হুুম

আর বাচ্চা?

-মুসলমান।

-হ্যাঁ, মুসলমান!হিন্দুর ঘরে মুসলমান ছেলে।

বিষয়টা আমাকে খুব ভাবিয়ে তুলল।

আরো পড়ুনঃ  সুবিধা ভোগী কলমে বখতিয়ার উদ্দিন

অনুচরী আমাকে বলে আমার আগ্রহ আরো বাড়াতে একটু  দীর্ঘ নি:শ্বাস ছাড়ল।আমার তাড়া পেয়ে আবারো বলা শুরু করল।

মহিলা:সে আমার নাতনী। তার বাবা আমার বাসায় কাজ করতো।আমি এই ছেলেটাকে অনেক আদর যত্নে পালন করি। চাই সে স্কুলে পড়ুক।এর বাবা মা অনেক দরিদ্র।  বড় হয়ে ডক্টর, ইঞ্জিনিয়ার হইলে বাবা মা  একটু সাবলম্বী হতে পারবে।আর মাদ্রাসায় পড়ে নিজেই চাহিদা মেটাতেই হিমসিম খেতে হবে।

অনুচরী : আপনি ওর ইচ্ছে গুলো পুরণ করুন । ওর অনুভুতিগুলো নষ্ট হতে দিয়েন না। দেখবেন ও অনেক বড় মানুষ হবে।

মহিলা:মহিলাটি হিন্দু হইলেও গোড়া না। মন মানসিকতা উন্নত। বিষয়টি ভেবে দেখবে বলে আতস্ত করল।

অনুচরী দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার খাতিরে বললেন: যে, যে ধর্মেই থাকুক না কেনো,প্রত্যেকেরই সত্য অন্বেষণ করা উচিত।

আল্লাহ পিচ্চিটাকে অটল-অনড় থাকার ও মহিলাকে দ্বীনের প্রতি পা বন্দি করার তৌফিক এনায়েত করুন।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *