দিপন মন্ডল এর সেরা ২টি কবিতা

ভালোবাসা মরে গেছে
দিপন মন্ডল

সে বলেছিল,
ভালোবাসা মরে গেছে।
আমি অবাক হয়ে শুধু শুনেছি কিছু মিথ্যা বাক্যালাপ।
আমি জানি না– যে মরে যেতে পারে
তার নাম কিভাবে ভালোবাসা হয়?
সময় তবু নিরন্তর ব্যস্ততার অজুহাতে
হেঁটে চলে যায় বহুদূর।
মানুষের মনের মধ্যে যদি মানুষই না থাকে
তবে কিভাবে ভালোবাসা হয়?
সে আরো বলেছিল,
এখন আর মনে পড়েনা কিছুই।
আমি তখনো অবাক হয়ে শুনেছি কিছু মিথ্যা বাক্যালাপ।
যে ভুলে যেতে পারে
যে অনুভূতিগুলো মরে যেতে শুনেছি,
আসলে তারা কখনোই জীবিত ছিল না।
আর যাই হোক তাকে ভালোবাসা বলা চলে না।
তবু আমরা মিথ্যা প্রতিশ্রুতির জালে জড়িয়ে
আবেগের ভুল সংঙ্গাকে বুকে আকড়ে ধরে
ছুটে চলেছি অনন্তকাল।
আসলে কিছুই সত্য না
আবার কোনো কিছুই মিথ্যা নয়।
সত্য এবং মিথ্যা সবই আপেক্ষিক।

ঈশ্বর আমার প্রতিবেশী
দিপন মন্ডল

এখনো জ্বলছে আগুন
পুড়ছে ঘর,পুড়ছে মানুষ।
এখনো মাঝরাতে মৃত আত্মার মিছিল নামে শহরের অলি গলিতে।
এখনো হয়তো শব্দহীন অস্তিত্ব গুলো
শব্দের খোঁজে ঘুরে ফেরে মাঝরাতের ভয়ংকর অন্ধকারে।
এখনো হয়তো শহীদের খুলি ঝুলতে থাকে
ছদ্মবেশী সান্তাক্লোজের ঝুলিতে।
বাক স্বাধীনতা এখানে বাকরুদ্ধ।
প্রতিবাদের ভাষা গুলো
প্রবাহমান নদীর স্রোতে ডুবতে থাকে রোজ।
এখানে ঈশ্বর আমার প্রতিবেশি,
আমি নির্দিধায় গল্প জমাই তার সাথে।
সম্পর্কের টানাপোড়নের আশঙ্কা নেই।
কারণ তিনি মানুষ নন।
শুনেছি মানুষ মানুষের প্রতিবেশি হলে
সম্পর্কের অবনতি হয়।
এখনো আমার হাতে পরাধীনতার শেকল
আমি দিগন্ত ছেড়ে দিগন্তে উড়তে পারিনা।
যে মানুষগুলো দেশের জন্য জীবন দিয়েছিল
তারা আজও আমার চারিপাশে ঘুরে বেড়ায়।
আমি তাদের দেখতে পাই
আমি তাদের কথা শুনতে পাই
শুধু স্পর্শ করতে পারি না।
কারন আমি মানুষ,ঈশ্বর নই।
মাঝরাতে অনুরুদ্ধ ডেকে ছাদে নিয়ে যায় আমাকে
পড়ো বাড়ির ছাদ
এখানে এখনো রক্তচোষা শকুনের পদচিহ্ন ভেসে ওঠে।
হঠাৎ নারী কন্ঠের আর্তনাদ।
সে বিভৎস চিৎকার ভেদ করে আমার শ্রবণশক্তির দেয়াল।
আমি শূন্য ছাদের কার্নিশে মুখ লুকাই।
চিলেকোঠায় ঝুলতে থাকে রক্তাক্ত সাদা শার্ট।
আমি সবই দেখতে পাই
শুধু স্পর্শ করতে পারি না
কারণ আমি মানুষ,ঈশ্বর নই।
মানুষের সাথে মানুষের সম্পর্কের অবনতি হয়
আমার তবু দিব্বি কাটে দিন
দিনশেষে আবার আড্ডা জমে
প্রতিবেশি ঈশ্বরীর সাথে।

আরো পড়ুনঃ  বন্ধু কলমে মোঃ রহমান উদ্দিন

সংক্ষিপ্ত পরিচিতিঃ দিপন মন্ডল, বাগেরহাট জেলার মোংলা উপজেলার হলদিবুনিয়া গ্রামে ২৭শে নভেম্বর জন্মগ্রহণ করেন।তিনি পেশায় একজন শিক্ষক।তার প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থসমূহ হলো: রুপালি চাঁদের আয়না,মেঘ বালিকা এবং জীবনের জলছবি।

 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *