রং বদল

রং বদল
মাহিম শাহারিয়ার হামিম

বাড়ি ভর্তি লোকের সামনে আমার স্বামী আমাকে থাপ্পড় মারলো। থাপ্পড় খেয়ে আমি যেনো থ হয়ে গেলাম। আমার অপরাধটা কোথায়?আমার শ্বশুর, শাশুড়ি আর স্বামী কথা বলছে আমি শুধু সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। তখন ই শাশুড়ি চেঁচিয়ে বললো কী গো তোমার সব কাজকর্ম রেখে এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কোন আক্কেলে? তোমাকে না কতবার বলেছি বাড়ির বউরা এইভাবে দাঁড়িয়ে কথা শোনতে নেই।
শাশুড়ির কথা শোনে আমি বললাম আম্মা আমার তো সব কাজ শেষ। ঘরে একা। তাই আপনাদের কাছে আসলাম।

আমার কথা শেষ হওয়ার আগে তিনি চিৎকার করে বললেন রেজওয়ান (আমার স্বামীর নাম) তোর বউয়ের সাহস দেখছিস। আমার মুখের ওপর কথা বলছে।
তখন আমি বললাম আম্মা আমি কী এমন বললাম যেই কারণে এত জোরে চেঁচাচ্ছেন। আমার কথা বলা শেষ হওয়ার আগে রেজওয়ান আমাকে থাপ্পড় মারে। রেজওয়ানের থাপ্পড় খেয়ে আমি অবাক।রেজওয়ান এই তুচ্ছ কারণে আমার গায়ে হাত তুলতে পারলো। যেখানে আমার কোনো দোষ ই নেই।

ইন্টার পাস করার পর বাবা-মা ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেয়। কিন্তু আমার একটাই সিদ্ধান্ত আমি পড়বো। আর চাকরি করবো। আমি এইএসসি তে ভালো রেজাল্ট করার পরও রেজওয়ানের পরিবার আমাকে অনার্সে ভর্তি হতে দেয় নি। অবশ্য রেজওয়ান ও চায় না আমি লেখাপড়া করি।রেজওয়ান আমাকে ডিগ্রি তে ভর্তি করিয়ে দেয়।আমি তাও কিছু বলি নাই। আমি জানি এখন আর কিছুতে ই কাজ হবে না। কিন্তু আমাকে ভালো করে পড়তে হবে। রং বদল করতেই হবে। তাই পড়াশোনায় মনযোগী ছিলাম।

—–একদিনের কথা আমি রেজওয়ানের সাথে বাহিরে যেতে চাইলাম। কিছু কেনাকাটা করার জন্য।কিন্তু শাশুড়ি এসে বললো বাড়ির বউয়েরা বাহিরে কেনো যাবে? আর তোমার শ্বশুরের সাথে কী কোনোদিন আমি বাহিরে গিয়েছিলাম?আমাদের কী দিন কাটে নি? এখনকার বউয়েরা ও পারে বটে।
সেইদিন শাশুড়ির কথা শোনে আমার বাহিরে যাওয়ার স্বাদ মিটে গেলো। সেইদিন খুব কেঁদেছি।কিন্তু মনকে শক্ত করে নিয়েছি।

আরো পড়ুনঃ  নিম্নমধ্যবিত্ত কলমে মুসাইবা আলম হৃদিমা

ছয় বছর পর,,,,,,,
আজ আমি কলেজের প্রভাষক।শ্বশুর বাড়িতে আমার কত সুনাম,কত সম্মান। যেই শাশুড়ি এক সময় আমাকে কোনো কথা বলতে দিতো না। আজ তিনিই প্রত্যেকটা পরামর্শ করেন আমার সাথে। যিনি আমাকে বাড়ি থেকে বের হতে দিতেন না আজ তিনিই আমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।

যেই স্বামী আমাকে পড়তে দিতে চাইতো না আজ সেই স্বামী তার বন্ধু-বান্ধবের কাছে আমার কথা কত ই না প্রশংসা করে। আর দিন শেষে আমাকে বলে তোমার কারণে আজকে আমাকে সকলে কত সম্মান করে।সত্যি তোমার কোনো তুলনা নেই।
আমি শুধু হাসি আর বলি দুনিয়াটা ভারি অদ্ভুত। তাই না!!

#সমাপ্ত

 

লেখক পরিচিতি

মাহিম শাহারিয়ার হামিম ২০০৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বদরখালী গ্রামে মৌ: মোক্তার আহমেদ ও উম্মে আয়মন ছিদ্দিকার কোলে জন্ম গ্রহণ করেন । কবি প্রাথমিক ও ধর্মীয় জ্ঞান তার পরিবার থেকে লাভ করেন। কবি আজম নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি, আল-আজহার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি,চকরিয়া কোরক বিদ্যাপীঠ থেকে এসএসসি পাস করে বর্তমানে সাতকানিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে বর্তমানে ইন্জিনিয়ারিং প্রিপারেশন নিচ্ছেন।লেখক ছোট বেলা থেকে লেখালেখি ও মুক্তিবুদ্ধির অধিকারি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *