অন্ধকারে খুঁজি তোমায়
মাহী সুলতানা রুমা
চারদিকে কুয়াশা,শীত অধিবেশনের বিন্দু বিন্দু ফোঁটা শিশিরে ভেজা ঘাসের উপর প্রজাপতি উড়ে , রাত ঘনিয়ে ভোরের সকালের আলো একটু উষ্কু মেরে আলো পডলো মায়ার উপর।মায়া চোখ খুলে বাহিরের দৃষ্টিকে অনুভব করলো। মনে হয় অনেক দিন পর ভোরের আলো শিশির ,বিন্দু ,বিন্দু ফোঁটা দেখলো,অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসলো। মায়ার আলো এবং প্রকৃতির পছন্দ হলেও সে সব সময় অন্ধকারে থাকে । কারন মায়া একটি ছেলেকে ভালোবেসেছিল। ছেলেটির নাম কাব্য। মায়া তার কাব্য গ্রন্থের প্রেমে পড়ে গিয়েছিল, কিন্তু সেটা ছিলো এক মুহূর্তের ভালোবাসা।
কাব্য একজন কলেজের অধ্যক্ষ ছাএ,সে মায়ার প্রেমে মায়া জালে বন্ধি হয়।কাব্য মায়াকে ভালোবেসেছিল আর মায়া ও কাব্য কে ভালোবাসতো।একদিন কাব্য হিরোর মতো এন্টি নিয়ে মায়ার সামনে আসে মায়া কে প্রপোজ করে।
–তোমাকে প্রথম দেখাই মুগ্ধ হলাম , আর ভালোবাসলাম, আর তুমি কি আমাকে ভালোবাসো মায়া..!
মায়া বলে ,
আমাকে পাওয়া সহজ নয় ,আমার ভালোবাসা পাওয়া সহজ নয়,
ভালবাসলে মস্তিষ্কের গোটা শহরটা তোমাকেই লিখে দিবো। অন্ধের চোখে আলো যেমন দরকার, তুমি আমার অন্ধ চোখে আলোর পৃথিবী হবে।
ভালবেসে যদি দেওয়ার মতো কিছু দিতে চাও? তবে বিশ্বাস দিও।
যদি কখনো গড়তে চাও? তবে বুকটা লিখে দিও। বুকের নিজস্ব জমিন দলিল করে দিও। আমি গড়ে দিবো কুঁড়ে ঘরেও অট্টালিকার সুখ।
যদি আমাকেই চাও? তবে সমস্ত ইগো মাটিচাপা দিয়ে ডাক দিও। যদি কখনো ভাঙতে চাও? তবে অভিমানের সন্ধ্যায় শুষ্ক চুমুতে আমার নীরবতা ভেঙে দিও। আমাকে ভেঙো না।যদি ভালবাসো তবে অজুহাতে কাছে ভিড়ো না।
সব শেষে শুধু একটাই আবদার,
কখনো ভালবাসা-বাসি এসবের ভিড়ে ছেড়ে যেও না। ভালবাসা ছাড়াও মানুষ বাঁচে দিব্যি বাঁচে। তবে ভালবাসা পেয়ে হারানোর পর, মনের মরণ টের পায় মানুষ। আর মন মরলে মানুষ কেবল দেহেই বাঁচে।
এক নিশ্বাসে মায়া সব কথাই বললো, কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়েই ছিলো , যেনো কাব্য মায়া কে প্রপোজ করতে আসে নি মায়াই কাব্য কে প্রপোজ করতে আসছে।
কাব্য কে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মায়া বলে কি হলো।কাব্য থ হয়ে মায়াকে বলে কি-কিছুই না তো। তারপর মায়া চলে গেলো।এইভাবে কাব্য আর মায়ার প্রেমের কাহিনী চলতে থাকে।হঠাৎ ই মায়া কাব্যকে বলে আচ্ছা কাব্য! তুমি আমাকে কতোটুকু ভালো বাসো?কাব্য কিছুই বললো না সে হঠাৎ মায়াকে আর মেসেজ দেই না, সব যোগাযোগ বন্ধ করে দিলো। মায়া কাব্যকে অনেক খুঁজেছে কিন্তু পাইনি।মায়া অঝোর কেঁদেছে, রাত জেগে থেকেছে সারক্ষন কাব্যের স্মৃতিতে ডুবে মরেছে এবং বলেছে আমি কখনোই কারো জন্যই এতো চোখের পানি পেলি নি কাব্য ..!
দিন শেষে আমি যাকে চেয়েছি তাকে বিনা দোষে হারিয়েছি,সে আমার কাছে না থেকেও আমার হয়ে মনে আছে,এটাই কি এক তরফা ভালোবাসা..!
একদিন কলেজে মায়া যাচ্ছে তখন ই কাব্য কে দেখতে পেলো কাব্য তার বন্ধুদের সাথে মজা করছে । তখন মায়া তাকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে আর বলে কেনো এমন করলে কাব্য?কাব্য মায়াকে সবার সামনে মায়াকে ২ টা থাপ্পড় মারে। মায়া অসহায় দষ্টিতে কাব্যের দিকে তাকিয়ে আছে,আর চোখের পানি পেলছে।তখন কাব্য বলে দেখ মায়া আমি তোকে কখনোই ভালোবাসি নি আমার বন্ধুরা আমাকে বলেছে তুই আমাকে ভালোবাসিছ কিন্তু সেটা আমি বিশ্বাস করি নি তাই বন্ধুদের কথাই আমি তোকে প্রপোজ করি। পরে দেখলাম তুই সত্যিই আমাকে ভালোবাসিছ।তাই আমি আমার বন্ধুদের কাছে হেরে গেলাম।মায়া চুপ করে সব শুনছিল আর বলেছিলো__
তুমি কোনোদিন জানবে না কাব্য , তোমাকে ছাড়া আমার কেমন লাগে।
তুমি এসব কোনোদিন জানবে না,
যেমন করে আমি কোনোদিন জানবো না,
কোন পাপের ফসলে লোকে ভালোবাইসা এত দুঃখ পায়।
এই যে সব কিছু শুনতে গেলে কানে তোমার কণ্ঠস্বর বাজে, এই ভয়ানক যন্ত্রণা, এই অসহ্য রকম নীরব আর্তচিৎকার নিয়ে আমি কার কাছে যাবো?
জানিয়ে যেও …!
জানি কখনোই কিছু বলতে পারবে না ভালো থেকো।
তুমি আমার না হওয়া ভালোবাসা,তোমাকে কখনোই পাবো না জানি তাই
আমি না হয় অন্ধকারে খুঁজব তোমায়..!
মায়া কান্না করতে করতে চলে গেলো। আর কয়েকমাস যাওয়ার পর কাব্য শুনতে পেলো মায়া মারা গেছে কাব্য নিজেকে হারিয়ে পেলছে মায়ার মৃত্যু তে সে ভেঙে পড়েছে। আর বলছিলো_
তুমি যাবার আগে সে বলেছিল…
বেঁচে থাকলে আমাদের আবার দেখা হবে!
আমি বলেছিলাম_ আবার দেখা হলে তবেই তো বেঁচে থাকতাম।
এরপর আমাদের এক কোটি ক্ষণ দেখা হয় না,
কথা হয় না বহু বছর।
বেঁচে আছি কেবল বেঁচে থাকার নাম করে।
আসলে এভাবে কেউ বেঁচে থাকে না। আমিও এখন তোমাকে হারানোর পর থেকেই, “অন্ধকারে খুজি তোমায়”।
আমি ডুবতে ডুবতেও ডুবিনি।
তাই মৃত্যুর কাছাকাছি,
দাঁড়িয়ে বলতে পারি
আমি এখন তোমাকে ভালোবাসি।
আমার দু’চোখের ঘুম,
আমি আঁধারে ভাসিয়ে দিয়েছি।
আমি আঁধারকে ভালোবেসেছি।
আমি আঁধারেই আলো দেখেছি তোমার মাঝে।
তারাদের পানে চেয়ে চেয়ে..
আমি আলোর দিশা খুঁজেছি।
আমি অন্ধকারে খুঁজি তোমায়..!