অন্যরকম তুমি
জান্নাতুল ফেরদৌস তারিন
তৃৃৃৃৃতীয় পর্ব
এভাবে হাসিমঝা করে তাদের দিন কাটতে লাগলো,,
একদিন কলেজে দুপুরবেলা নামাজ পড়ার জন্য ওজু করতে গেলো তুবা আর তৃণা,,,তুবার হাতে মেহেদী দেখে তার কিছু কলেজ ফ্রেন্ড বলে উঠলো
কলেজ ফ্রেন্ড :আচ্ছা তুবা তোর হাতে প্রায় সময় মেহেদী দেখি,,,কিন্তু মেহেদী দিয়ে কী লাভ তুই তো হাত মোজা পা মোজা পড়ছ তাহলে তোর এত সুন্দর হাতে সুন্দর মেহেদী কে দেখে,,হাহাহা বলে সবাই হেসে দিলো,,,
তুবা একটু মুচকি হেসে বল্লো
তুবা:মেহেদী আমার খুব প্রিয়ো তাই মেহেদী দিতে আমার প্রচুর ভালো লাগে,,,আর মেহেদী দিলে আমার মনটাও ভালো থাকে,,
আর তুরা কী জানস না মেয়েদের সৌন্দর্য বাহিরে প্রকাশ করা হারাম,,,আর মেয়েদের হাত সবসময় মেহেদী দিয়ে রাঙিয়ে রাখা ভালো,,,
আর কিছু হাদিস শুনানোর পর সবাই চুপ হয়ে যায়,,,
কলেজ থেকে বাসায় আসার পর থেকে তুবার প্রচুর মাথা ব্যাথা,,এই ব্যাথা মনে হয় মৃত্যুতুল্য যন্তণা,,, ডাক্তার বল্লো তুবার মাইগ্রেন এর ব্যাথা,,,তাই মাঝে মাঝে প্রচুর যন্তণায় ভুগে তুবা,,,কিন্তু সব সহ্য করে নেয় তুবা,,,আল্লাহ তাকে প্রচুর ধৈর্য দিয়েছে আলহামদুলিল্লাহ,, কিন্তু আজ এতটায় ব্যাথা যে ও রাতের নামাজ টা শেষ করে আর বসে থাকতে পাড়ে নী,,জায়নামাজে শুয়ে পড়েছে,,,তার প্রচণ্ড মন খারাপ হচ্ছে আজ সে সূরা মূলক পড়তে পাড়ি নী বলে,,,কারন সে প্রতিরাতে ঘুমানোর আগে সূরা মূলক পাঠ করে,,,
আজ তুবা মাথা ব্যাথার ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে,,,
।
.সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে কুরআন শরীফ পড়ে নিলো,,,
সে প্রায় সকালে ছাদে হাঁটতে যায়,,আজও গেলো,,, ভোরের আবহাওয়া তুবার প্রচুর ভালো লাগে,, আর ছাদে পুঁটে থাকা বিভিন্ন ফুলের ঘ্রাণ তুবার মনটা আনন্দে ভরিয়ে দিলো,,,,
তুবা কিছুক্ষণ পর বাসায় চলে গেলো,,,
নাস্তা করে কলেজ এর জন্য তৈরি হচ্ছে,,,
তৃণার ফোন পেয়ে তুবার কলেজ এর জন্য রওয়া হলো,,,
কলেজ যাওয়ার পথে তোয়ার ইস্কুল তাই তোয়া-কে ইস্কুলে দিয়ে তারা কলেজ চলে গেলো,,,,
.
.
.
এদিকে আহির হলো সৌহরাব হোসেন এবং আছিয়া বেগম এর বড় ছেলে,,,
আহির পড়ালেখায় আনেক ভালো,তাকে ইস্কুল -কলেজে সবাই এক নামে চিনে,ভার্সিটির সিনিয়র, জুনিয়র সবার খুব প্রিয় আহির,,,,,
আহিরের মা, বাবা এবং ছোট ভাই ইমতিয়াজ ও ছোট বোন তাসনুবা কে নিয়ে তাদের সুখের সংসার,,,
তাসনুবা তোয়ার ক্লাসমেট,, তারা অনেক ভালো বন্ধু,,,
ইমতিয়াজ কোরআনি হাফেজ,,,
আহিরের বাবা সোহরাব হোসেন একজন বড় ব্যবসায়ী,,
কিন্তু আহির একজন সামান্য বেসরকারি চাকরি জীবি,,,,আহির চায়লেই অনেক বড় চাকরি করতে পাড়তো কিন্তু করেনী,,কারণ বড়,সরকারি চাকরির জন্য ঘোষ দিতে হবে,,,আহির চায় না সে অন্যায়ভাবে চাকরি করুক,,,
আজকাল যৌগ্যতা দিয়ে চাকরি হয় না,,,
“রেজাল্ট কখনো কারো ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে না,,
আহির মাস শেষে যে টাকা পায় তা দিয়ে তার দিব্যি চলে যায়,,কারন তাকে পরিবারের টাকা দিতে হয় না,,,তার বাবার যা ব্যবসা তা দিয়ে আরো ১০ টা পরিবার কন্ট্রোল করার সাধ্য তাদের আছে,,,,
কলেজ শেষ করে তুবা তৃণা কে তোয়ার ইস্কুলের সামনে দাঁড় করিয়ে বল্লো
তুবা:চল দোস্ত তোয়া কে নিয়ে একসাথে যায়,,ওর আমাদের একটু পড়েই ছুটি হয়,,,একটু দাঁড়িয়ে গেলে একসাথে যেতে পাড়বে,,
তৃণা:আচ্ছা চল,,,,,
এদিকে আহিরও অফিস শেষ করে বাসা যাচ্ছিলো তাই ভাবলো তাসনুবা কে নিয়ে একসাথে যাবে,,তাই সে তাসনুবার ইস্কুলের দিকে রওনা হলো,,,
তুবা আর তৃণা ইস্কুলের ভিতর গিয়ে দেখে সব একদম নিস্তব্ধ,,, দারোয়ান ইস্কুলের ভিতরে হাঁটতেছে,,,
তুবা:আসসালামু আলাইকুম আংকেল,,
দারোয়ান :ওয়া আলাইকুমুস সালাম,, আপনেরা কী কাউকে খুঁজিতেছে,,??
তুবা:জ্বী,,,ইস্কুল কী ছুটি হয়ে গেছে?
দারোয়ান :জ্বী মেডাম,, কিছুক্ষণ আগে ছুটি হলো,,
তুবা:আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ, আসসালামু আলাইকুম
দারোয়ান :ওয়া আলাইকুমুস সালাম
তুবা আর তৃণা ইস্কুল থেকে বাহির হচ্ছিলো ঠিক তখন আহির ডুকতেছিলো,,
আহির ইস্কুলের দিকে তাকিয়ে তুবাকে প্রশ্ন করলো
আহির: হাই,,,,আচ্ছা ইস্কুল কী ছুটি হয়ে গেছে?
তুবা:আসসালামু আলাইকুম, জ্বী ইস্কুল কিছুক্ষণ আগে ছুটি হলো,,
আহির সালামের জবাব দিয়ে বল্লো,
আহির:ওহহ আচ্ছা,,ধন্যবাদ,, তাহলে আজ আসি,,আল্লাহ হাফেজ
তুবা:আল্লাহ হাফেজ
আহির আরেকটা কাজে কোথাই যেনো যাচ্ছিলো। তুবা আর তৃণা বাড়ির উদ্দেশ্যে হাঁটছে।
তারা কিছুক্ষণ যেতেই দেখলো কিছু পথশিশু ক্ষুধায় কাতর হয়ে আছে। রাস্তার একপাশে বসে আছে।
তুবা তৃণাকে থামিয়ে বললো।
তুবা:দোস্ত তোর কাছে কত টাকা আছে রে?
তৃণা:আজ তো বেশি টাকা আনি নাই,,কেনো রে কিছু খাবি?
তুবা:না,,,, কত আছে বল?
তৃণা: ২০০-২৫০,,কিন্তু কেনো রে
তুবা:আমার থেকে ৩০০ আছে,, তাহলে চল..
তৃণা:কোথাই?
তুবা:আরে চল না
এই বলে তারা একটা খাবারের দোখানে গেলো,কিছু খাবার নিয়ে রাস্তা পাড় হচ্ছে..
তৃণা:আরে তুবা আস্তে হাঁট,,আচ্ছা তুই আমার হাতটা ধর আমি তুকে নিয়ে যাচ্ছি,,,
তুবা তৃণা হাত ধরে রাস্তার পাড় হলো,,,
সব পথশিশুদের একসাথে বসিয়ে তুবা খাইয়ে দিচ্ছে।
তৃণা তুবার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,,তৃণা তুবার হাত ধরে বললো
তৃণা:তোর মতো মানুষ হয় নারে দোস্ত,,,,তুই আসলে আমার জীবনে আল্লাহর। দেওয়া সেরা গিপ্ট এ বলে তৃণা তুবাকে জড়িয়ে ধরে বল্লো,” তুকে এজন্য এতো ভালোবাসি,,,লাভিউ দোস্ত,,,,
তুবা: হয়েছে হয়েছে এভার থাম,,,,সবাই তাকিয়ে আছে তোর পাগলামি দেখে সবাই কী বলবে গাদী,,
আমিও তুকে অনেক ভালোবাসি,,,তুকে আল্লাহর জন্য ভালোবাগি দোস্ত,,,
তুবা আর তৃণা কে একটা পথশিশু বলে উঠলো:
পথশিশু:আফা আফা আংগৌরে এক্কান ফডু তুলে দেন না,,,কত কত লোকে ফডু তুলে,, কইলে তুলে দেয় না,,আংগৌ বহুত মন চায় এক্কানা ফডু তুলতে।
তুবা ওর মুখ আলতো করে ধরে বল্লো ঠিখাছে তোমরা দাঁড়িয়ে থাকো আমি তুলতেছি,,,
এই বলে তুবা সবাইকে ছবি তুলে দিলো আর তুবা আর তৃণাও ওদের সাথে কয়েকটা ছবি তুললো, রাস্তা থেকে সব আহির দেখে আছে,,আহির গাড়িতেই ছিলো,,,কিন্তু রাস্তায় হঠাং জ্যাম হওয়ার কারণে থেমে যায়,,আর বাহিরে তাকাতেই তুবা আর তৃণার সব কিছু তার চোখে পড়লো,,,সে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে,,আর ভাবছেন,, এখনকার যুগেও এসব মানবতা আছে বলেই পৃথিবী টা এত সুন্দর,,,
আহির তাদের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলো,,,
আরো পড়ুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য