অন্যরকম তুমি, ৭ম পর্ব

অন্যরকম তুমি
  জান্নাতুল ফেরদৌস তারিন
৭ম পর্ব

আহির: আপনি ঘুমিয়ে পড়েন,,নিশ্চয় অনেক ক্লান্ত হয়ে আছেন,,,আমি অন্যরুমে গিয়ে ঘুমাচ্ছি,,
তুবা:অন্যরুমে কেনো?এখানে কী সমস্যা?
আহির:একটা বেডে আমরা একসাথে কীভাবে ঘুমাবো
তুবা:কেনো আমরা তো স্বামী স্ত্রী একসাথে ঘুমালে সমস্যা কী?
আহির একটু হেসে
আহির:স্বামী স্ত্রী,,, আমি আপনাকে স্ত্রী বলে মানি না,,আমি বিয়েটা করতে চায় নী কিন্তু আব্বুর জন্য বাধ্য হয়েছি,,যাই হোক আপনি ঘুমান আমি অন্যরুমে যাচ্ছি
তুবা:আপনি স্ত্রী হিসেবে মানেন না মানে?বিয়ে করতে চাননি তাহলে আমাকে বলতেন?এভাবে কারো জীবন নিয়ে খেলা করার কী দরকার ছিলে?
আহির:দেখুন আপনার সাথে এখন এতো কথা বলার মতো অবস্থায় আমি নেই,,আমি ঘুমাতে যাচ্ছি
তুবা:দাঁড়ান,,আপনার সাথে আমার সম্পর্ক যেমনই হোক সেটা বাহিরের মানুষ যাতে না জানতে পাড়ে,,আপনি এখন বাহিরে ঘুমালে সবাই নানান কথা বলবে,,আপনি এখানেই ঘুমিয়ে পড়েন,,
আহির:কিন্তু আপনি?
তুবা:আমার কথা না ভাবলেও হবে
আহির অন্যপাশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে
এদিকে তুবা তো মুখের ভাষা হারিয়ে পেলছে,,,সে ভাবতে পাড়ে নী তার সাথে এমন কিছু হবে,,,
এই রাত নিয়ে কত কী স্বপ্ন ছিলো তার,তার জীবনসঙ্গী নিয়ে কত পরিকল্পনা ছিলো,একসাথে নামাজ পড়বে,কুরআন পড়বে,একে অপরকে জানবে,গল্প করবে,ইত্যাদি কিন্তু আজ কিছুই হলো না
এসব ভাবতে ভাবতে তুবা চেয়ারে বসে টেবিলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়ে,,
রাত ৩টায় হঠাৎ তুবার ঘুম ভেঙ্গে যায়,,তুবা ফ্রেশ হয়ে ওজু করে তাহাজ্জদ নামাজ পড়ে নিলো,,আল্লাহর কাছে কান্নাকাটি করতেছিলো,,,নামাজ শেষ করে তুবা বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে,আর চোখ বেয়ে পানি পড়ছে,,,
কিছুক্ষণ পর ফজরের আজান দিলো তুবা নামাজ পড়ে কুরআন তিলাওয়াত করতেছিলো,,তুবার কুরআন তিলাওয়াত শুনে আহির ঘুম থেকে উঠে গেলো,,আহির ছুপ হয়ে শুনে আছে কিছুক্ষণ পড় সে আবার ঘুমিয়ে পড়ে,,তুবা কুরআন তেলাওয়াত শেষ করে বসে আছে,,,তুবার খুব বিরক্তি লাগছে কী করবে বুঝতে পাড়ছে না,একা একা ভোর হচ্ছে
কিছুক্ষণ পড় তাসনুবা আসলো,,
তাসনুবা :বাবি ঘুম থেকে উঠেছো তোমরা,,বাবি,, ওবাবি
তুবা দরজাটা খুলে দিলো
তুবা:আসো ভিতরে আসো
তাসনুবা :বাবি তোমার কিছু লাগবে,,কোন সমস্যা হচ্ছে না তো?
তুবা:না না ঠিকাছে সব,,আচ্ছা তোয়া কোথায়,,কী করে ও
তাসনুবা :ও ঘুমাচ্ছে এখনো কাল তো অনেক পরিশ্রম করছে ও,,থাক ঘুমাক
তুবা: আচ্ছা,,,,,তাসনুবা আম্মু কী করে
তাসনুবা :নাস্তা তৈরি করে
তুবা:আচ্ছা চল আম্মুর কাছে যাবো
তাসনুবা তুবাকে রান্নাঘরে নিয়ে গেলো
তাসনুবা :আম্মু দেখো কে আসছে
আছিয়া বেগম:আরে তুবা তুমি উঠে গেছো,,,আচ্ছা বস আমি নাস্তা দিচ্ছি
তুবা:আম্মু আমাকে দাউ আমি সাহায্য করতেছি
আছিয়া বেগম:আরে দেখ পাগলী মেয়ের কান্ড,,,আগে দেখ আমি কীভাবে কী করি,,আস্তে শিখে তারপর না হয় কাজ করবে এখন বস,,
তুবা:সমস্যা নেই আম্মু আমি পাড়বো
তাসনুবা তুবাকে দেয়ারে বসিয়ে দিলো,,,
আছিয়া বেগম তুবার সামনে নাস্তা দিয়ে বল্লো নাস্তা করে নাউ তুবা,,
তুবা:না আম্মু আমার এখনো খীদা লাগে নী,,পরে খাবো,,
তাসনুবা :তুমি কী ভাইয়ার সাথে খাওয়ার জন্য অপেক্ষা করতেছো,,হিহি,,,ভাইয়া ১১টায় ঘুম থেকে উঠবে,আর আজ তো অফিস নেই তাই আরো দেরিতে উঠবে
তুবা:না না আমি এমনি খাবো না
আছিয়া বেগম:এতো লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই মা,,এটয় তো তোমার বাড়ি যখন মন চায়বে তাই খানে,, নাউ এবার খেয়ে নাউ
তুবা:আম্মু তুমি খাবে না?
আছিয়া বেগম:আমি আরো পরে খাবো তোমার আব্বু হাঁটতে বাহির হয়েছে আসলে খাবো
তুবা:আচ্ছা আমিও তখন খাবো সবাই একসাথে খেতে ভালো লাগে
আছিয়া বেগম:আচ্ছা ঠিকাছে,,,
কিছুক্ষণ পর সোহরাব হোসেন আসলে সবাই নাস্তা করতে বসে,,,বাসার মেহেমান রা সবাই চলে গেছে একটু আগে এখন কেউ নেই,,আহিরের ছোট ভাই মাদ্রাসায় থাকে তাই সে বিয়ের দিন চলপ গেছে
এদিকে তোয়াও ঘুম থেকে উঠে গেছে,,সবাই নাস্তা করতে বসে,,সোহরাব হোসেন হঠাৎ বলে উঠলো আহির কোথাই,,
তাসনুবা :এখনো ঘুমে
সোহরাব হোসেন ঘুমে মানে,,ডেকে আনো,,সবাই নাস্তা করতে বসছে ওকেও আসতে বল,,,
তাসনুবা ডাকতে গেলে ১ম এ আসতে চায় নী পরে বাবার কথা শুনে আসতে বাধ্য হলে,,,এসে সবাই মিলে নাস্তা করলো,,,
নাস্তা শেষ করে তুবা রুমি গিয়ে মোবাইল হাতে নিয়ে দেখে তৃণার অনেক গুলা ফোন,,,তুবা এখন তৃণাকে ফোন দিলো,,
তুবা:আসসালামু আলাইকুম
তৃণা:ওয়া আলাইকুমুস সালাম,,বাহ!একদিনেই ভুলে গেলি আমাকে,,কয়টা ফোন দিয়েছি দেখ,,,
তুবা:সরি দোস্ত মোবাইল আমার কাছে ছিলো না,,,
তৃণা:আচ্ছা বাদ দে,তোর কী খবর বল,,,হিহি দুলাভাই তুকে কী দিলো রে বল না
তুবা মনে মনে বল্লো আমাকে জীবনের সেরা উপহার টায় দিলো,
তুবা:আরে তুই আসলে ঠিক হলি না,,বাদ দে,, আচ্ছা তোর কী খবর বল
তৃণা:আমার আবার কী খবর,, সব খবর তো তোর কাছে,,আচ্ছা কলেজ কখন আসবি আর
তুবা:জানি নারে,,যায়লে বলবো তুকে,,আচ্ছা এখন রাখিরে পরে কথা বলবো আবার ইনশাল্লাহ
তৃণা:আচ্ছা আল্লাহ হাফেজ

আরো পড়ুনঃ  পানের রসে মায়ের নেশা কলমে আজাদ বুলবুল

 

এভাবে কাটতে লাগলো সময় গুলা,,আছিয়া বেগম এর আগে বিয়েতে আপত্তি থাকলেও এখন আর আপত্তি নেয়,,তুবার ব্যবহার দেখে সে তুবাকে ভালোবেসে পেলছে,,তুবাকে এখন সে মেয়ের মতোই জানে।
আহির আর তুবার বিয়ে হয়েছে যে প্রায় ২০-২৫ দিন কিন্তু আহিরের কোন পরিবর্তন নেই,,সে ঠিক করে বাসায়ও আসে না,,বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়,ঠিক করে অফিস যায় না।

এতদিন পর তুবা কলেজ যাবে আজ, তৃণার সাথে দেখা হবে তাই আজ তার মন অনেক ভালো।
কলেজে যাওয়ার সময় তুবা তার শশুড়কে বলতে আসলে শশুড় আহির কে বলে অফিস যাওয়ার সময় তুবাকে দিয়ে আসতে তাই আহিরও দিয়ে আসতে বাধ্য হয়।
তৃণা কে দেখে তুবা এক লাফে মোটরসাইকেল থেকে নেমে তৃণাকে জড়িয়ে ধরলো। আহির তুবাকে দিয়েই চলে গেলো। তৃণা আহির কে খুঁজে আর পায় না,,তার সাথে পরিচিত হতে।

 

আরো পড়ুনঃ- দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *