আমাকেও টানে
শাহানা চৈত
বাড়ি ছেড়ে চলে আসার পর বাড়ির প্রতি একটা আলাদা অনূভুতি কাজ করে। তবে এটা অনুভব করি যেদিন নিজের বাড়িতে অতিথি হয়ে আসি।বিশেষ করে আমার মায়ের প্রতি আলাদা একটা অনূভুতি কাজ করে।
কিন্তু কেনো করে??
সে উত্তর আমার মনে জটলা পেকে আছে,তবে বহিঃপ্রকাশ করতে যেয়েও পারি নি। প্রেমিক থেকে কতো মানুষের প্রতি ভালোবাসা সাবলীল ভাবে প্রকাশ করেছি।কিন্তু মায়েরটা প্রকাশ করতে পারি নি। যেনো পৃথিবীর সমস্ত জড়তা আমার উপর ভর করে।বাবা হীন সন্তানদের উত্তাপ রৌদ্র থেকে রক্ষক একমাত্র মা-ই।যাকগে সে কথা।
এই মুহুর্তে খুব খুব খুব গ্রামে যেতে ইচ্ছা করছে৷ কান্নাও পাচ্ছে খুব৷
মনে পরে যাচ্ছে মায়ের কথা, কতদিন হলো মাকে দেখিনা! জরিয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে খুব৷
বলতে ইচ্ছা করছে মা আমি আপনাকে নিজের চেয়েও বেশি ভালোবাসি৷ আমার সবকিছুর বিনিময় আপনি আমার সাথে থাকুন। আমার কিছু চাইনা আপনাকে চাই৷
আমার জন্মের পর যেদিন আমার বাবা মারা গেলো,সেদিন থেকেই মা আমাকে নিয়ে দুঃখের বোঝা বইছে।আমি কোনো একদিন একটুখানি সুখ এনে দেবো এই ভেবে। রাগি ছিলো খুব কিন্তু আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে৷ কত স্মৃতি মনে পরে যায়, জমা হয়ে থাকে হৃদয়ের গভীরে৷
আজ হুট করে মনটা কেমন করছে৷ আমি খুবই স্মৃতিকাতর, স্মৃতি আমাকে খুবই টানে৷ কিছুদিন আগে বাড়ির ঘরের কাজ একটা গাছ কেটে ফেলতে হয়েছে। তখন আমি বাড়িতে ছিলাম না, বাড়িতে গিয়ে যখন এই দৃশ্য দেখি চোখ তখন জ্বলজ্বল করছে। মনে হচ্ছিলো আমি যেন খুব কাজের কোন বন্ধুকে হারিয়ে ফেলেছি৷ অথচ কত স্মৃতি এই গাছকে ঘিরে৷ ছোটবেলায় এই গাছে সবচেয়ে বেশি উঠেতাম মেহেদী পারার জন্য ৷
স্কুল মাঠেও কতগুলো গাছ ছিলো। ওদের আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমার কেন জানি খুব ইচ্ছা হচ্ছে স্কুল মাঠে গিয়ে যতগুলো গাছ আছে সবগুলোকে আদর করতে৷ হাত বুলিয়ে দিতে, জরিয়ে ধরে কান্না করতে৷ ওরা আমার শৈশব আমার বন্ধু। ওদের কে আমি হারাতে চাইনা ওরা থাকুক আমার সাথে, বড্ড ভালোবাসি ওদের। ছোটবেলা থেকে ওদের সাথে একসাথে বড় হয়েছি আমি।
কত লুকোচুরি খেলেছি ওদের পিছনে লুকিয়ে। আমার মাটি, আমার ঘর, কি-যে মায়া কি-যে টান বলে বুঝানো সম্ভব না৷
কোনদিন যেন আমি পাগল হয়ে যাই এসবের জন্য৷ আমি এই অশান্ত কংক্রিটের পরিবেশ থেকে মুক্তি চাই৷ একটু একা থাকতে চাই। আমার গ্রাম, বেড়ে উঠা সেই ভাঙা টিনের ঘর, ভাঙা স্কুল ঘরটার জন্যও আমার মায়া হয়।