আমার জন্মদিনে কলমে তাসনিয়া ইসলাম

আমার জন্মদিনে
তাসনিয়া ইসলাম

রঙবেরঙে বেলুন আর চকচকে কাগজে মোড়ানো উপহারের আনন্দে নয়, ছেলেবেলায় আমার জন্মদিন কাটতো বার্ষিক পরীক্ষার নীল আতংকের ঢেউ-এ সাঁতার কেটে। এখানেই শেষ নয়। জানি না কী করে, কাকতালীয় ভাবে বিশেষ এই দিনটির পরদিনই থাকতো গণিতের মতো খটমটে সাবজেক্টের এক্সাম। আর অংক মানেই আমার কাছে ছিলো ভয়ানক ত্রাস। পরীক্ষায় কোন মতে সত্তর আশি টেনে নিতে পারলেই নিজেকে দিগবিজয়ী আলেকজান্ডারের থেকে বৈ কম মনে হতো না। আর স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, বিদঘুটে এই সাবজেক্টের তিতকুটে নোনা গৌরব আমি আজো হিসাব বিজ্ঞানে সগৌরবে ধরে রেখেছি। তবে আমার এই হিসেব নিকেশের কারিশমার কথা কখনো ফাঁস করা হয় নি🥴। পাছে যদি উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া দক্ষতা বলে এতে তকমা সেঁটে দেয় তাই এই লুকোচুরি। সে যাই হোক। যা বলছিলাম, মায়ের কাছ থেকে শুনেছি,২০০১ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ আমার জন্ম হলেও ছোট বেলা থেকে আমার জন্মদিন পালন হত না, তবে কারো মস্তিষ্কে স্বভাবতই জমা রাখা মুশকিল নয় অসম্ভবও বটে। তাই সেই দিনগুলোতেও এমন মুহুর্তগুলো তখন ক্যামেরার জাদুকরী বদৌলতে ধরে রাখা হতো ৷ আমার বেলাতেও তেমনটি হয় নি। তবে বিপরীত হাওয়া বয়ে গিয়েছে এখানেও। কথিত আছে, সেই দিনের দায়িত্বপ্রাপ্ত চৌকষ ক্যামেরাম্যান নাকি ভুলে ক্যামেরার লেন্স কভার ওপেন করতে ভুলে যেত। আর ফলাফল হয়েছিলো মারাত্মক। জ্বলে যাওয়া ছবিগুলো দেখতে হত ঠিক একেবারে পোড়ো বাড়ির ভুতুরে নেগেটিভ এর মতোই।কখনও যদি বা পালন করা হয় অগত্যা, জীবনের প্রথমবারের মতো বৃহত্তর এই দিনটির উদযাপনের গল্প পরবর্তীতে ঠাকুরমার ঝুলিতে পড়া গল্পের মতোই কল্পনা করে নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে আমাকে😄। সত্যি, এমন যে আরো কতশত কাহিনী রয়েছে আমার জীবন নিয়ে তা বলা মুশকিলই বটে। তবুও একবারের কথা বলি। আর, দুর্ভাগ্য বশত সেই দিনটি ছিলো নভেম্বরের ২৯ তারিখ,২০১৬। আমি তখন এক ঝুটি বেঁধে নেওয়া নিতান্তই এক ছোট্ট বালিকা। যার কাছে জন্মদিন মানেই চোখের তারায় নেমে আসা রঙিন স্বপ্নের মতো। স্বাভাবিকভাবেই উচ্ছ্বসিত ছিলাম প্রচুর। তবে ম্যাথে একটু গরমিল হলেও উপস্থিত বুদ্ধিতে কম যেতাম না মোটেও। তাই সকাল থেকেই সবার আকার ইঙ্গিতে একটা খটকা বেঁধে গেলো মনে। আমাদের স্কুলে পুরাতন বিল্ডিং এক ছটাক বারান্দা তাতে করে বাহিরে উঁকি দিয়ে সহজেই বুঝা হয়ে গেলো, যথারীতি এবারো কিছু একটা গড়বড় হয়েছে। এবং সেটা ছোটখাটো কোন সমস্যা নয় বরং এর ব্যাপ্তিটা আরো বেশি। এটার ভয়াবহতা টের পেলাম, যখন দেখলাম বান্ধবীরা মিলে কিছু একটার গরমিল পাকাচ্ছে।? এত বড় অবিচারও কী সহ্য করা যায়? ব্যাপারটা হজম করা তখন আমার যখন নিতান্তই কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। আমার নাকে তোলা ফোঁস ফোঁস আওয়াজ কখন ঝড়ো বাতাসে পরিণত হলো, কে জানে? সবাই সামাল দিতে হিমশিম খেয়ে যাচ্ছিলো।তারা সবাই মিলে একটা কাপ কেক আর পাশে কিছু ওয়াইফার লাগিয়ে আমার জন্মদিন সেলিব্রেট করেছিল,দিনটা ভীষণ মনে পড়ে।বাসায় সেই বয়স অবধি কখনও জন্মদিন করা হয়েছে বলে মনে হয় না। কান্নার তোড় বুঝি বেড়ে গিয়েছিলো আমার।তবে আমাকে খুশি করবার জন্য আমার অতি সাবধানী এবং ভীতু টাইপ বান্ধবী ও সেই সময় এক দুঃসাহসী কাজ করে ফেললো। চরম ঝুঁকি নিয়ে তারা কিছু টাকা দিয়ে জন্মদিন করার জন্য মেতে উঠল। ঘরে যখন আসি আমার মনে পড়ে সেই সময় আব্বুর কাছে বায়না করছিলাম জন্মদিন নিয়ে আব্বু বলছিল এইগুলো করা গুনাহ যাক আর কী করার মন খারাপ করলাম আর চুপ করে রইলাম পরে দেখি কিছু চকলেট এনে খেতে দিত।আসলেই বাবারা হয়ও সুপারম্যান। কালো কাগজের ওপর কমলার কোয়ার ছাপ বসানো সেই স্বাদের মিঠে টুকরো বাচ্চাদের কাছে ছিলো এক হুলুস্থুলে ক্রেজের নাম। আমিও তার বাইরে ছিলাম না। তিন চারটে চকলেটের বার হাতে নিয়ে এবার আমার কান্না কিছুটা ধরে আসলো। তাতে বাড়ির সকলেরও বুঝি স্বস্তি মিললো। তবে সেই পানসে দিনের পানসে খুশিতে আরো চার চাঁদ জুড়ে গেলো সহসাই। মা, তার অসাধারণ ক্রিয়েটিভ শৈলীতে তার সেই হোম মেইড রেসিপি করে দিয়ে ওটাকে রূপ দিয়ে দিলো চমৎকার ভাবে। সত্যি বলতে কী, আজ এত বছর গড়িয়ে গেছে। এখন বড় হয়ে গেছি আজ জন্মদিনটা এখন আর আগের মতো উপলব্ধি দেয় না।
নামি দামী সব বেকারীর কত কেকই না আমি খেয়েছি। আর এমন করেই শৈশব, কৈশোর পেড়িয়ে জীবনের এই পর্যায়ে আসা পর্যন্ত আমার এই পয়দা দিবসের নানা কাহিনী জমেছে গল্প ঝুড়িতে। লিখতে গেলে বুঝি একটা রম্যরসে টইটম্বুর উপন্যাসই হয়ে যাবে আস্ত। তবে আজ ওপাটে আর যাব না।২০১৮ সালে তাও বেস্ট ফ্রেন্ডের নিয়ে কেক কাটা হয়েছিল ঘুরতে গিয়েছিলাম কলেজের নাম দিয়ে স্বাধীনতা কমপ্লেক্সে। ২০১৯সালে একইভাবে বন্ধু – বান্ধবদের নিয়ে চলে যায় উত্তর কাট্টলি বেরীবাধে ওইখানে একটা রেস্টুরেন্টে🤫। নাহলে বন্ধু- বান্ধবদের গাপুস গুপুস গালগুলো টমেটোর মতো লাল টুকটুকে হয়ে উঠবে আর বলবে কিপ্টামি করি😐।২০২০ সালে আমরা একসাথে জন্ম নেওয়া আমার ১০ মিনিটের ছোট কাজিন ওরে সহ নিয়ে ভাইয়ার আর মেজ আপু চলে এলো কেক নিয়ে,বরাবর কেক কাটলাম সবাই রাতে খাওয়া দাওয়া করলাম।তার পরের দিন বাসা থেকে বের হয়ে ঘুরতে গেলাম বান্ধবীদের নিয়ে সেইও এক কান্ড ঘটল আমাদের সেই চিকনা মার্কা বান্ধবীটা সমস্যা জোড়ালো।অর্ধেক সময়ে তার ছুটতে হলো বাসায় যাই হোক লিখতে গেলে ইতিহাসের পাতা ফুরিয়ে যাবে তবে কথা ফুরাবে না।🥴
আজকের দিনে এই লংকা কান্ড কোনমতেই ঘটতে দেওয়া যাবে না। তবে হ্যাঁ, এতটুকুই বলি, এমন খসখসে, রসকষহীন ভাবে উদযাপিত এই দিনটি তবুও আমার কাছে অনন্য এক ভালো লাগার দিন। সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে এই দিনে আমি পৃথিবীতে এসেছি। এই সবুজ ধরার বুকের আলো বাতাসের প্রসাধন মেখে আজ এই পর্যায়ে পৌঁছেছি। এমনটা ভাবতেই এক অদ্ভুত ভালো লাগায় মনটা ভরে ওঠে। কাগুজে বইয়ের প্রশ্নমালার অংকের উত্তর মেলাতে হিমশিম খেলেও জীবনের অংক মিলিয়ে নিতে আমার কখনোই সমস্যা হয় না মোটেও। হিসেবের জাবেদা মেলাতে গেলে কেবল প্রাপ্তিতেই ভরা। কী করে? বলছি সেই কথা। এটা তো বলবার প্রয়োজন নেই যে, মানুষের অস্তিত্বের সূচনাই হয় তার বাবা-মা থেকে। পরিবার থেকে। এই সুন্দর বসুধায় আসবার সৌভাগ্য সূচনা হয় আমাদের পিতামাতা হাত ধরেই। তবে কেবল জন্ম দিলেই হয় না, বাবা মা আসলে সফল হয় তখনই যখন সে অভিভাবক হবার সাথে সাথে তারা তাদের আদরের সন্তানের সবচেয়ে কাছের বন্ধু হতে পারে। আর এই অভিভাবকত্বের গম্ভীরতার সঙ্গে বন্ধুত্বের ছেলেমানুষি বাহানা মিশে গেলে সেখানেই ছলকে ওঠে জীবনের যত রঙ। এই সত্যটি আমি আমার জীবন থেকে বুঝে নিয়েছি খুব করে।হাজারো অপরাধের পরও বাবা- মা কখনও তার সন্তানকে দূরে ঠেলে দেয় না। তাই এত চমৎকার বাবা-মা কে আমার বন্ধু ও অভিভাবক হিসেবে উপহার দেবার জন্য মহান আল্লাহ পাকের দরবারে জানাই কোটিকোটি শুকরিয়া। একথা তো দ্ব্যর্থহীন যে, সুস্থ্য ও নিখুঁত ভাবে পৃথিবীতে জন্ম নেওয়াটা নিঃসন্দেহে এক বিশাল প্রাপ্তি। আলহামদুলিল্লাহ, আমি এই নিয়ামতেও সিক্ত হয়েছি। দিব্যি চলতে ফিরতে পারছি, সঠিক ভাবে ভাবতে পারছি, বুঝতে পারছি, যে কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারছি, জীবনে এর চেয়ে বেশি পাওয়া আর কী হতে পারে? এমন করেই পরম করুণাময়ের দেওয়া এই জীবনটার অনেকখানি সময় আজ পার করে নিয়েছি। হাসি, গান, আনন্দ, দুঃখ বেদনা এসব কিছুর মাঝে প্রতিনিয়তই জীবনের মানেটা নতুন করে শিখে নেবার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। চিরদেখা ঐ অবারিত নীল আকাশটা, জানালার ওপারে দাঁড়িয়ে থাকা চিরচেনা বৃদ্ধ আম গাছটা, প্রতি সন্ধ্যায় মূর্ছে যাওয়া সন্ধ্যামালতীর এক মাথা ঝাঁকালো ঝোঁপটাতে ফের পূর্ণতার রঙিন স্পর্শ খেলে যাওয়া… এই সমস্ত কিছুকে কেমন যেন অপরিচিত এক গল্প বলে মনে হয় আমার। চিরজানা, চিরজানা এই একই গল্প যেন রোজই আমি নতুন করে পড়ে নেই। কখনো জীবনকে খুঁজে নেই আমি ড্রয়ার বন্দী পুরোন ডায়েরীর পাতায় লেগে থাকা সোঁদা ঘ্রাণে, কখনো একে উপভোগ করি বইয়ের শুভ্র পৃষ্ঠার পরে। রংধনু জীবনটাকে কয়েদ করে রাখতে চাই, আমার দোয়াত-কালির মিতালি মায়াতে। ঘরের ঘুলঘুলিতে বাসা বাঁধা চঞ্চল চড়ুই দম্পতির চড়ুই ছানার কিচিরমিচির ধ্বনিটাতেও কেমন জীবনের জয়গানের নতুন সুর শুনতে পাই। ঠিক তেমনি, দরজার কোণে জড়োসড়ো হয়ে থাকা মাদী মাকড়সার ডিম আঁকড়ে নেবার অতি সাধারণ দৃশ্যটাও অনিন্দ্য এই জীবনের বিপরীত পাঠখানাও পড়িয়ে দেয় আমাকে অনায়সে। নিটোল অনুভূতিতে তখন শংকার শেকড়ও সম্রাজ্য বিস্তার করে নিতে চায়। তবে তা নিতান্তই সাময়িক। ওটাকে বাড়তে দেই না। আগাছার মতো সমূলে উৎপাটন করে নেই দ্রুতই। এতো ভয় পেলে কী চলে? জীবনের আরেক অর্থ তো যুদ্ধ। লড়ে চলার আরেক নাম৷ জন্ম নেবার লগ্নে এই যুদ্ধের ডামাডোলও যে বেজে যায় অলক্ষ্যে। একে এড়িয়ে চলে কার সাধ্যি? “জীবন” মানেই তো অনিশ্চয়তা। অন্য সবার মতোই ইদানীং এই ভয়টাও আমাকে অক্টোপাসের মতো পেঁচিয়ে ধরে যখন তখন। জীবন সাগরে ভাসিয়ে নেওয়া আমার জীবন তরী আজ কোন দিকে সাঁতরে চলছে জানিনা। কখন কোনদিন এই যাত্রা তার ইতি পর্ব টেনে নেবে সেটাও জানিনা। তবুও আল্লাহপাকের দেওয়া এই প্রাণের মাঝে যতক্ষণ স্পন্দন রয়েছে, ততটা ক্ষণ প্রিয় এই জীবনটাকে সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে চাই😌। প্রিয় সব মুখগুলোকে আজীবন ভালোবাসতে চাই মন প্রাণ উজাড় করে। হাসিখুশিতে ভরিয়ে রাখতে চাই আমার অতি প্রিয় “পরিবার” নামের ছোট্ট বাগিচাটাকে👨‍👩‍👧‍👧। আবেগের সুঁতোয় বেঁধে নিতে চাই বর্ণিল সম্পর্কের সমস্ত কসুমরাজিকে। রেখে যেতে চাই কিছু রেশ, যা আমার অবর্তমানেও প্রিয় মানুষগুলোর মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলবে। সেই তৃপ্তির মাঝেই অমর হয়ে থাকতে চাই আমি।বাবা এই সময়ে আমাদের মাঝে না থাকলেও,😔 বাবা-মায়ের মতো পরম বন্ধু দুজনকে আগলে রাখতে চাই নিজের সবটুকু দিয়ে🥰। যেমন করে তারা এক সময় আগলে রেখেছেন আমাকে। খোদা তায়ালার অসীম কৃপায় আজও যারা আমার মাথার ওপর নির্ভরতার আকাশ হয়ে রয়েছে, আজকের এই বিশেষ দিনে আমি তাদের জানাই অপার শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ছোট্টবেলার মতো সামনের দিনগুলোর মতোই আমি আমার বাবা হয়ত নেই, কিন্তু আমার আাবার সঙ্গ দেখতে চাই চিরসবুজ “সুপারম্যান” হিসেবে। মায়ের হাতের সেই রান্নার স্বাদ পরশ আজো জিহ্বার ডগায় ছুঁয়ে নিতে চাই। আমার মা -বাবাই আমার সব আজ সেটা বিশ্বাস না করলে নয়। আমার পুরো পৃথিবী। অনেক ভালোবাসি বাবা-মা তোমাদের। আমার জীবনের অমূল্য পরশপাথর তোমরা। মহান আল্লাহপাক আব্বুকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম নসীব করুন,আম্মু তোমাকে সুস্থতা দান করুন। দীর্ঘ হায়াত দরাজ করুন। আমিন। সেই সঙ্গে ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল বাবা-মা।

আরো পড়ুনঃ  সোহায়েব আল রাফি'র পরিচিতি ও জীবনী

“রাব্বির হাম হুমা কামা রব্বায়ানি সগীরা”।

ওহ! হ্যাঁ। ভুলেই তো যাচ্ছিলাম। এমন হলে হবে? যাই হোক। বরাবরের মতোই আজকেও এই বিশেষ দিনে সবার আগে নিজেকে জানাচ্ছি, “শুভ জন্মদিন”। যা আছি, যেমনটি আছি, আলহামদুলিল্লাহ। এমনই থাকতে চাই, আজীবন। নিজেকে বদলাবার কোন অভিপ্রায় নেই সত্যি, তবে এটা ঠিক, বদলে দিতে চাই অনেক কিছুই…বদলে নিতে চাই অনেকটা, সবার দোয়া ও ভালোবাসায় নিজেকে সফলতার সর্বোচ্চ দ্বারে নিয়ে যাওয়ার লড়াই চলতে থাকবে ইন শা আল্লাহ।
ইতিহাস লিখলেও আমার জীবনের কাহিনির শেষ হবে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *