
ইনসাফের কাব্যগাথা
আতিয়া মাহজাবিন
আকাশে যখন রক্তিম আভা, মাটিতে বারুদ-ঘ্রাণ,
তখন জন্ম নিয়েছিল এক নাম, এক বিদ্রোহী মহাপ্রাণ!
সে কোনো সাধারণ মানব নয়, এক অবিনাশী শক্তি,
জালিমের তরে মহাপ্রলয়, আর মজলুমের সে ভক্তি।
শোনো তবে আজ সেই পুরুষের রুদ্র-বিজয় গাথা,
যার রক্তে কেনা এ মাটির প্রতিটি ধূলি ও পাতা।
সে ছিল এক জ্যান্ত তলোয়ার, নাম ওসমান হাদি;
বুকে তার ছিল ইনসাফের তৃষ্ণা, আজন্ম প্রতিবাদী।
সে এসেছিল না কোনো সিংহাসনের লোভে কিংবা মোহে,
সে তো জেগেছিল এ মাটির তরে অবিনাশী এক দ্রোহে।
ফজরের সেই আর্দ্র কুয়াশা, নামত যখন পথে,
সে বীর তখন বেরিয়ে পড়ত অমায়িকতার রথে।
পায়ের ধুলোয় সিক্ত হতো যে আঁকাবাঁকা গলি,
সেখানে সে লিখে গিয়েছে ইনসাফেরই বুলি।
জবান খুললেই ছুটেছে শব্দ, তপ্ত বুলেটের মতো,
জালিম শাসকের মসনদটা কাঁপত অবিরত।
সে যখন হাঁকত ‘ইনসাফ! ইনসাফ!’, কেঁপে উঠত আকাশ,
শব্দে তার মিশে থাকত বারুদ আর দীর্ঘশ্বাস।
অথচ কী অদ্ভুত!
শত্রুর বুকে যে ছিল আততায়ী, এক কালজয়ী বিষ,
বন্ধুর তরে সে-ই ছিল এক স্নিগ্ধ অহর্নিশ।
হাসিটি তার ছিল যেন ঠিক ভোরের শিউলি ফুল,
মমতায় সে যে ছিল অবারিত, সাগরের ন্যায় অকূল।
সাথী মহলে সে এক কবিতা, মায়াভরা এক ছায়া;
জালিমের কাছে সে যে এক রুদ্র-প্রলয় কায়া!
শত্রুর সাথেও ইনসাফ তার, চরিত্রের সেই শান,
মৃত্যুকে ছুঁয়ে গিয়েছে সে, এক মুক্তির জয়গান।
সে তো সিন্দাবাদ, পাড়ি দিয়েছে একাই অনন্ত কালো জল,
পিছনে রেখে গিয়েছে কোটি মানুষের চোখের অশ্রু-মল।
সাত আসমান চিরে ওঠে আজ তারই নামগাথা,
ওসমান হাদি, তুমি এ মাটির বুকে অমর কাব্যগাথা।




