উৎসবের নামে অদৃশ্য সহিংসতা

আমরা যদি না জাগি মা
কেমনে সকাল হবে?
( কাজী নজরুল ইসলাম)

উৎসবের নামে অদৃশ্য সহিংসতা

 

৩১st নাইট উদযাপন এখন আর শুধু আনন্দের বিষয় নয়,এটি ধীরে ধীরে জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ ও প্রাণীজগতের ওপর এক অদৃশ্য সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে। উচ্চ শব্দের আতশবাজি, ধোঁয়া ও অনিয়ন্ত্রিত উল্লাস এই রাতটিকে প্রতিবছরই ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, ৫৫ ডেসিবেলের বেশি শব্দ মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অথচ ৩১st নাইটে ব্যবহৃত আতশবাজির শব্দ প্রায়ই ১৪০–১৬০ ডেসিবেল পর্যন্ত পৌঁছে যায়, যা শ্রবণশক্তি নষ্ট, হৃদস্পন্দন বেড়ে যাওয়া, উচ্চ রক্তচাপ ও হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি সৃষ্টি করে। বিশেষ করে হৃদরোগী, বয়স্ক মানুষ, নবজাতক, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও মানসিক রোগে আক্রান্তরা এই শব্দদূষণের সবচেয়ে বড় ভুক্তভোগী,হসপিটালে ভর্তিকৃত রোগী রা সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হন।

আবার এই অন্তর্মুখী সহিংসতার শিকার কেবল মানুষ নয় পশুপাখিরাও। পাখিদের শ্রবণক্ষমতা অত্যন্ত সংবেদনশীল হয় । বিকট শব্দে তারা দিশেহারা হয়ে রাতের অন্ধকারে উড়ে গিয়ে ভবন, কাঁচ বা বৈদ্যুতিক তারে পাখা ঝাপটে আঘাত পায়। অনেক ক্ষেত্রে পাখিরা প্রাণ হারায়, ডিম ও ছানার মৃত্যু ঘটে। গৃহপালিত পশুরাও ভয় পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে বা দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়।

পরিবেশগত ক্ষতিও কম নয়। আতশবাজিতে ব্যবহৃত পারক্লোরেট, সালফার, নাইট্রেট ও ভারী ধাতু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এতে বায়ুদূষণ কয়েক গুণ বেড়ে যায়, যা হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, চোখ জ্বালা ও দীর্ঘমেয়াদি ফুসফুসজনিত রোগের ঝুঁকি বাড়ায়। এক রাতের দূষণের প্রভাব অনেক সময় কয়েক দিন পর্যন্ত থাকে।

নিরাপত্তার দিক থেকে ৩১st নাইট প্রতিবছরই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। আগুন লাগা, দগ্ধ হওয়া, শিশু ও কিশোরদের আহত হওয়ার ঘটনা নিয়মিত ঘটে। আইনগত নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও আতশবাজি ব্যবহারের প্রবণতা এই ঝুঁকিকে আরও বাড়িয়ে তোলে।

এক রাতের ক্ষণস্থায়ী উল্লাসের জন্য মানুষের স্বাস্থ্য, নিরীহ প্রাণী ও পরিবেশকে বিপন্ন করা কোনোভাবেই সভ্য আচরণ হতে পারে না। উৎসব মানে আনন্দ কিন্তু সেই আনন্দ যদি অন্যের কষ্টের কারণ হয়, তবে সেটি আর উৎসব থাকে না।
নতুন বছর শুরু হোক নতুন শপতের মাধ্যমে , নিরাপদ ও দায়িত্বশীল সিদ্ধান্তে নেয়ার মাধ্যমে। উল্লাস নয় মানবিকতাই হোক আমাদের উদযাপনের রহস্য।

লেখক: মাহজাবীন তাসনীম রুহী
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *