চতুর্থ রজনী 1st part ~উম্মে আম্মারা

চতুর্থ রজনী, ১ম পর্ব

চতুর্থ রজনী
পর্ব – ০১ম
উম্মে আম্মারা

 

এত শত গল্পের মার’আ চরিত্রের মাঝে রাজা আদহাম শুধু নীল দরিয়ার নাইলাহ কেই খুঁজে। আরবের জাবাল সাওদা তে দাড়িয়ে আসমানের জ্বল জ্বলে তাঁরা ছোঁয়া অসাধ্য! কিন্তু জ্বল জ্বলে অশ্রু ছোঁয়া ছিলো রাজা আদহামের জন্য সম্ভবপর। কিন্তু কি এক অজানা কারণে অশ্রু ছোয়া থেকে বাঁধা প্রাপ্ত হয়েছিলো রাজা আদহাম?তা জানতে হলে ফিরে যেতে হবে পুরোনো রাজকুমার আদহাম এর কাছে। ছোট রাজকুমার আদহাম কাঠের খেলনা তোলোয়ার নিয়ে মায়ের সামনে খেলছে, বলছে আম্মিজান, আমি সব কাফের কে মেরে রাজকুমারী কে মুক্তি করে আনবো।এত তার কল্পনার খেলা, যেই কল্পনার গল্পের উৎস তার মা।রাত্রি যখন অন্ধকারে ছেয়ে যায়, তখন রবের আদেশে জোসনা মাখা চাঁদ এসে উপস্থিত হয়।ছোট রাজকুমারের ঘুম আসে না চোখে,মা তখন শুরু করে আরব রজনী শুনাতে।এক ছিলো রাজকন্যা, তার নাম ছিলো নাইলাহ।সে ভালোবাসতো এক আলোকিত দ্বীনকে,যেই দ্বীনের আলো হৃদয়ে আলোকিত করে। যেই দ্বীনের মাধ্যমে রব কে পাওয়া যাবে।তারপর যখন সে সেই দ্বীনের খোঁজ পেলো,তখন সে সাক্ষ্য দিলো লা – ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাঃ। এক প্রভুর প্রতি ইমান আনার জন্য রাজা তাকে পরিত্যাগ করলো।রাজমহল থেকে বের করে দিলো।পিতার পরিত্যাগ পেয়ে হৃদয় তার ভারী হয়ে আসলেও,আলোকিত দ্বীন যে সে পেয়েছে। তাই আর সামনে অন্ধকার থাকলেও ভয় নেই তার।এক গভীর অরণ্যের মাঝ দিয়ে যখন সে যায়,তখন একদল কাফের তার পিছু করে, হঠাৎ করেই তাকে বন্দী করে নেয়।এ খবর যেন বাতাসের প্রবাহে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে। অবশেষ এক রাজাকুমার এর কর্নে এ খবর যায়।যার কাছে আলোকিত দ্বীন ছিলো আগে থেকেই। মহান প্রভুর নাম নিয়ে সে তলোয়ার উঠিয়ে নিয়ে ঘোড়ায় চেপে ছুটে গেলো কাফের দের কাফেলায়। সব কাফের দের সাথে যুদ্ধ করে রাজকন্যা নাইলাহ কে মুক্তি করলো।পরিশেষে দুই আলোকিত নূর এক হলো।তাদের এই এক হওয়া রবের সন্তুষ্টির জন্য-ই ছিলো।এই গল্প ছোট আদহামের মন জয় করে নিয়েছিলো। তার মন আরো উতলা হয়ে উঠেছিলো আলোকিত দ্বীন, মহান প্রভু আর নাইলাহ সম্পর্কে আরো জানতে। কিন্তু এ মিষ্টি রূপকথার ইতি ঘটলো রানীর শেষ নিঃশ্বাসের সাথে। মায়ের মৃত্যুর পর ছোট আদহাম আস্তে আস্তে করে বড় হতে থাকে।রাজ্যের ভার এখন তার উপর। হাজারো ব্যস্ততায় রাজা আদহাম ভুলে গেলো সেই মিষ্টি রূপকথা। ভুলে গেলো সেই মহান প্রভু কে।সে হয়ে উঠলো দাম্ভিক,পাপী রাজা।পাপ করলেও অনুশোচনার দাগ হতো না হৃদয়ে। এমন সব দিন পার হতে থাকে। একদিন হঠাৎ তার ইচ্ছে হলো নীল দরিয়ার পানি ছুইতে।সেনা সৈন্য ছাড়াই একাই গেলেন নীল দরিয়ার নিকটে। রাতের অন্ধকারেও নীল দরিয়ার পানি চাঁদের আলো তে জ্বল জ্বল করছে।হঠাৎ এক নারীর চিৎকার। চিৎকার শুনে রাজা আদহাম তোলোয়ার বের করে সামনে এগিয়ে দেখে এক নারী কে একা পেয়ে কিছু লোক বিরক্ত করছে,নারীটির পোষাকের অংশ ধরে টানছে। রাজা আদহাম তার তোলোয়ার নিয়ে ছুটে যায় তাদের সামনে, লোকগুলো ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। মেয়েটি রাজা আদহাম কে শুকরিয়া বলে চলে যায়।রাজা আদহাম ভাবতে থাকে কে এই নীল দরিয়ার মার’আ।সে রাজ্যে ফিরে এসে সেই নারীর ঘরে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।সেই নারী ছিলো ইয়াতিম।তার চাচার কাছে মানুষ হয়েছে। চাচা এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়।পরিশেষে রাজা আদহাম ও নীল দরিয়ার মার’আর বিয়ে হয়।বিয়ের প্রথম রাতে রাজা আদহাম মেয়ে টিকে জিজ্ঞেস করে, হে নীল দরিয়ার মার’আ তোমার নাম আমায় বলো।মেয়েটি বড় লজ্জায় বলল,নাইলাহ।রাজা আদহাম নাম টি শুনে অবাক হয়ে বলল,নাইলাহ!এতবছর ধরে যেই গল্প সে ভুলে ছিলো। আজ সেই গল্পের এক চরিত্র তার সামনে এসে উপস্থিত।রাজা আদহাম হঠাৎ লক্ষ করলো নাইলাহ কাঁদছে।অশ্রু ভরা চোখে নাইলাহ রাজা আদহাম এর দিকে তাকিয়ে এক প্রকার অপ্রস্তুত হয়ে বলল,আপনি কি আলোকিত দ্বীনের উপরে নেই? দাম্ভিক রাজা আজ যেন কোনো উত্তর খুঁজে পাচ্ছে না।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *