চলো প্রতিদিন ডিম খাই,
প্রোটিনের অভাব তাড়ায়
আজ ফুরফুরে মন। বুকের বা পাশে শর্মিলা বাতাস।চারিদিকে সূর্যি মামার আভায় আর শোঁ শোঁ বাতাসে গন্ধ ছড়াচ্ছে আমার রুপালি চাঁদ আয়ান ঢাকা কলেজে ভর্তির সুযোগ হলো বলে।
বাড়ির আঙ্গিনাটা নতুন মনে হচ্ছে আয়ানের মা রোহানা ফারবিনের। আয়ানরে যে জায়গায় বসে পড়াতে সেই টেবিলটি কে মনে হচ্ছে লক্ষী এক তাঁরা।যে কোচিং সেন্টারে পড়তো সেই দিকের বাতাসে যেন মনে হচ্ছে আয়ানের কাছে প্রশান্তির ঝর্ণা।
আজ আয়ানের কলেজের ১ম দিন
-আয়ান বাবা, এই ডিমটা একটু খা বাবা।
– মা,বিরক্ত করো না তো। সেই স্কুল সকালের বিরক্তির দিনগুলো আবার ফিরিয়ে আসলো।
-না বাবা দুপুরে বাসায় ফিরবি। একটু খা।
-না মা, যাচ্ছি….
এভাবে আয়ানের ডিম খাওয়ার প্রতি অনীহা। বিকেলে রোমানা পারভিন কফি খেতে খেতে পারভেজ চাচার বেলকনির দিকে চোখ আটকে গেল।দেখে পারভেজ চাচা নাতনিকে ডিম খাওয়াচ্ছে।আর নাতনির ফোকলা দাঁতের হাসি ঝলসা হাসিতে বেলকনি মুখরিত।
আয়ান ক্লাসে করিম স্যারের বাংলা ঘন্টায় ব্যাগ থেকে বই বের করতে গিয়ে দেখলো লাল টিফিন। আর টিফিন খুলতে দেখলো ডিম।আয়ানের রাগে মুখ লাল হয়ে গেল।ডিম ডিম..
এই ডিমের জ্বালাতন নিয়ে শুরু করে দিল বন্ধুর কাছে মায়ের গল্প –
রহিম স্যার দেখে ফেললো আর জিজ্ঞেস করলো।কি নিয়ে আলাপ,আনায়,শাকি?
সঠিক বলো নাইলে ক্লাস থেকে বের করে দিবো এখুনি
-সরি স্যার…
-টিফিনে কি?
-ডিম, স্যার আয়ান ডিম খাইনা, তাই জোর করে না বলে আন্টি ডিম ব্যাগে দিয়ে দিছে।
এদিকে সবাই ডিম ডিম হাসাহাসি শুরু করলো।
-চুপ! সবাই চুপ। ডিমের গুণাগুণ সম্পর্কে জান?হাসলে কেন সবাই…
– শুন।”দুনিয়ায় সবচেয়ে ভালো খাবারগুলোর একটি হলো ডিম। ডিমে থাকে ৯ টি অতিপ্রয়োজনীয় অ্যামিনো এসিড।সর্বোচ্চ গুণাগুণসম্পন্ন প্রোটিনের ভালো উৎস।ডিমের লুটিন এবং এবং জিয়াজ্যানথিন চোখ ভালো রাখে।কোলাইন ভালো রাখ।কোলাইন ভালো রাখে মস্তিষ্ক, স্নায়ু এবং হৃৎপিণ্ডের স্বাস্হ্য।”
– আয়ান চমকে গেল! ডিমে এককিছু,স্যার- ডিমে হলুদ অংশ ভালো লাগে মুটামুটি সাদা অংশ মোটেও ভালো লাগে না এইজন্য একেবারে ডিম খাইনা স্যার।
– শুন.. ডিমের সাদা অংশে রয়েছে অ্যালবুমিন। আর এই অ্যালবুমিন হল সবথেকে উৎকৃষ্ট মানের প্রোটিন। অর্থাৎ এই প্রোটিন খেলে শরীর তা অত্যন্ত দ্রুত গ্রহণ করে নেয়। ফলে নিয়মিত ডিম খেলে যে দেহে প্রোটিনের ঘাটতি মিটে যাবে, তা বলাই বাহুল্য। আর দেহে প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ হলে মাসল-মাস বৃদ্ধি পাবে। এমনকী ইমিউনিটিও বাড়বে কয়েকগুণ। তাছাড়া মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত গঠনেও প্রোটিনের প্রয়োজন হয়। তাই শরীরে প্রোটিনের চাহিদা মেটাতে চাইলে ডিমের সাদা অংশ খাওয়া চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন মীনাক্ষী মজুমদার।
-মীনাক্ষী মজুমদার কে স্যার?
-কলকাতার ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সের প্রধান পুষ্টিবিদ। শুন… আজকাল অনেকেই কুসুমকে খলনায়ক ভেবে নেন। তবে বিষয়টি একবারেই কিন্তু তেমন নয়। বরং কুসুমে রয়েছে ভিটামিন এ, ভিটামিন ডি, কোলেস্টেরল, জিঙ্ক এবং সেলেনিয়াম সহ একাধিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ। তাই দেহের পুষ্টির চাহিদা মেটাতে চাইলে কুসুমকে বাদ দেওয়া চলবে না। বরং সময়-সুযোগ পেলেই কুসুম খান। এতেই একাধিক ছোট-বড় রোগব্যাধি শরীরের কাছে ঘেঁষার সুযোগ পাবে না।
এদিকে স্যারের কথা শুনে নিজর কাছে খুব ছোট মনে হচ্ছে আয়ানের। আর মনে মনে সীদ্ধান্ত নিল মায়ের কথা শুনবো প্রতিদনি সকালে একটা ডিম খেয়ে আসবো….
চলো একটা ডিম খাই,
রোগ ব্যাধি তাড়ায়।
সাফিয়া নূর মোকাররমা
(বিপিটি স্টুডেন্ট মেডিসিন ফ্যাকাল্টি ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা)