দখলপ্রবণ
মুহাম্মদ নুরুল হুদা
চেয়েছিলো কেউ দখল করতে? দখল করিনি আমি;
কে কাকে কখন করেছে দখল জানেন জগতস্বামী।
দেখেছি তোমাকে তোমার গভীরে এফোঁড় ওফোঁড় ঘুরে
বৃত্তাকারেই ফেরে সব দেখা, কখনো-বা যায় উড়ে।
সাতসমুদ্র পাড়ি কি দিয়েছো কলম্বাসেরও আগে?
তখনো আকাশে জাগে সপ্তর্ষি নীলিমার অনুরাগে।
হেঁটে হেঁটে এলে উড়ে উড়ে গেলে কখনো সাঁতার কেটে,
পাইনি তোমার আদি পরিচয় মিথ ইতিহাস ঘেঁটে।
অনুমান করি আগুনে পৃথিবী যখন ঠাণ্ডা হলো,
তুমি জেগেছিলে আদিপ্রতিরূপ নাঙাপায়ে টলোমলো।
হিমালয় থেকে সুন্দরবন জল-চ্ছলোচ্ছল-স্থল,
এক পৃথিবীর একক নৃপতি একা একা এক দল।
বাবেল পেরিয়ে হাবেল কাবেল তোমার বংশধর,
প্রাণ থেকে প্রাণী চরকুড়েঘর, ঘ্রাণে ঘ্রাণে নারী-নর।
দেশ থেকে দেশে, বেশ থেকে বেশে চন্দ্র-সূর্যে এসে
এক থেকে বহু, বহু থেকে এক দেহে মনে এসে মেশে।
মিশতে গেলেই দূর-নিকটের চেনা-অচেনার ফাঁক,
করে কলরব হংসমিথুন, বিরহী বলাকা ঝাঁক।
আফ্রোএশিয়া দুই আমেরিকা ইউরোপ সাদা-কালো,
বর্ণে গন্ধে অঙ্গে অঙ্গে মিশ্রজাতের আলো।
নর কি করেছে নারীকে দখল, নারী কি করেছে নর?
সব প্রশ্নের আদিউত্তরে কল্লোল কলস্বর।
পুরুষে-পুরুষে নারীতে-নারীতে নারীতে-পুরুষে দেখা;
এইকি জাতক আদি পৃথিবীর? এই প্রাণ আজো একা।
দেহে দেহে দেখা ভ্রূণে ভ্রূণে দেখা শক্তি ও প্রেমে দেখা,
পরস্পরের দখলিস্বত্ব এইভাবে হলো শেখা।
প্রথম যখন লুঠ হয়ে গেলো দ্বিতীয়-র বেদখল,
তৃতীয় তখন শীর্ষানন্দে পিপাসিত চঞ্চল।
প্রথম দ্বিতীয় যবে মুখোমুখি খোঁজে প্রিয় মস্তান,
তৃতীয় তখন সেই দুজনের কুজনের সন্তান।
প্রথম থেকেই এসেছে দ্বিতীয়, তৃতীয় তাদের মায়া,
ছায়ায় মায়ায় রূপ থেকে রূপে আদিপ্রাণ আবছায়া।
প্রাণের মধ্যে প্রাণ বেদখল, দেহের মধ্যে দেহ,
আমরা পরস্পর বেদখল; আছে কার সন্দেহ?
কণার ভিতর কণাকে খুঁজেছি, আমরা কি জোড়কণা?
পাওয়া না-পাওয়ার দ্বন্দ্বে-গন্ধে আজো আছি আনমনা।
তাই কি হঠাৎ তোমাকে হারিয়ে তোমাকেই পেয়ে যাই?
পাই বা না পাই, দখলপ্রবণ তোমাকেই শুধু চাই।