নানুভাইয়া
কলমে উমাইরা নাবিহা
আমার দাদুভাইয়া! যাকে ছোটবেলা থেকে নানুভাইয়া ডেকে এসেছি আর এখনো ডাকি।সেই মানুষটার সাথে কাটানো স্মৃতি গুলো হাতড়ে খুঁজে বেড়াই এখন।
সাইকেলের পিছনে বসে চড়ে বেড়াতাম।নানুভাইয়ার স্কুলে যাওয়ার মজাই ছিল আলাদা! স্কুল এলাকার কাছাকাছি গেলেই এলাকার মানুষ হতে শুরু করে ছাত্রছাত্রী সবাই সালাম দিত নানুভাইয়াকে। কারণ হেডস্যার যে! অনেক সময় এত্ত সালামের জবাব নিতে না পেরে কি করতো,শুধু *ওয়া আলাই ওয়া আলাই* করে করে একেবারে স্কুলের গেইটে গিয়ে সাইকেল থেকে নেমে বলতো ওয়া আলাইকুমুসসালাম ওয়ারাহমাতুল্লাহ!! আমি খুব হাসতাম।
হাসসান-উসামারা আসলে আমি সহ ওরাও যেত স্কুলে। খুব মজা করতাম।
ছোটবেলা থেকে নানুমনি (দাদুমনি)র সাথে ঘুমানোর অভ্যাস। মাঝে মাঝে নানুভাইয়ার সাথেও ঘুমাতে যেতাম। কিন্তু শুয়ার পর সব দোয়া দরূদ শেষ করেই শুরু হতো একের পর এক প্রশ্ন! *Parts of speech কাকে বলে? এটা কত প্রকার ও কি কি বলো তো? Noun, pronoun এর উদাহরণ দাও! ৫ এর নামাতা টা বলো তো?*
এরকম আরো কতো..অনেক সময় বিরক্ত হয়ে যেতাম। ওফ, ঘুমানোর আগেও কি জ্ঞান অন্বেষণ শেষ হয় না!
আমাকে পড়াতেনও নানুভাইয়া। হয়তো আমার প্রথম শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু এই আমাকে পড়াতে গিয়ে বেকায়দায় পড়ে যেতেন তিনি! কোনো সময় লিখতে গিয়ে যদি *র* একটা ফোটাও না পড়ে তখন ছাড় দিতাম না.. বলতাম নাকি, আপনি কিসের হেডস্যার হয়েছেন যে? আল্লাহ! হেডস্যারও লিখতে ভুল করে!
বেশিরভাগ সময় কক্সবাজার যেতাম নানুভাইয়া আর আমি। গাড়ি আমার ভীষণ বিরক্তের জায়গা। কিছুদূর যাওয়ার পরই শুরু হয়ে যেত একটা কমন প্রশ্ন- *নানুভাইয়া আর কতক্ষণ লাগবে বাবার বাসায় পৌঁছাতে? আর কতদূর আছে মাম্মার বাসা?* কখনো বিরক্ত হতেন না একই প্রশ্ন বারবার শুনেও। ঠিকঠিকই উত্তর দিতেন..
বাইরের দোকানপাটের সাইনবোর্ড থেকে কোন জায়গায় আমরা সেটা পড়ে শুনাতেন,পড়তে শিখিয়েছেন। যাওয়ার পথে চারপাশ দেখিয়ে বলতেন, কোথায় কি আছে ।
মানুষটা অনেক কর্মঠ ছিলেন আমার দেখা সময়ে।আমি দেখার আগে এর চেয়েও বেশি কর্মঠ ছিলেন সবার ভাষায়। একবার আমার কোনো একটা টিচার মাদরাসায় বলেছিলেন আমাকে- *তোমার দাদুভাইয়ার মতো হও, আমরা তাকে দেখেছি স্কুল টাইমে স্কুলে। আবার স্কুল শেষ হলে কখনো টেইলার্সে,কখনো চাষের মাঠে। কখনো বা হোমিওপ্যাথিক চেম্বারে।*
মা শা আল্লাহ! একটা মানুষ এতটা কর্মঠ হয়েও, যিনি বসে থাকার পাত্র ছিলেন না মোটেও।এর মাঝেও কবিতা লেখালেখি করেছেন প্রচুর! বাংলা,উর্দু,আরবি কিংবা ইংরেজি! কোনোটাই বাদ না…
বাবা (বড় ফুফু), আব্বু, মাম্মা (মেঝ ফুফু), ফুতু (ছোট ফুফু) সবাইকে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। আলহামদুলিল্লাহ.. এবং তারাও তার মতই শিক্ষকতার মহান পেশায় ব্রত।
শেষ বয়সে এসে ব্রেইন স্ট্রোক করেছেন। আজ সেই চতুর, কর্মঠ মানুষটা ঘরের চারদেওয়ালের ভিতরে বন্দি। লাঠি নিয়ে চলাফেরা করেন। বাইরে যেতে হলে অন্যের সহযোগিতা লাগে। অনেক সময় উঠতে বসতে, শুতেও অন্যের সহযোগিতা লাগে।
হে আল্লাহ! তুমি তাঁকে সুস্থততার সাথে আমাদের মাঝে দীর্ঘজীবী করো। হায়াতুত-তায়্যিবা দান করো মাবুদ।
নানুভাইয়ার একটা বাংলা কবিতার বই বের হয়েছে *অনুভবে রব* নামে। উর্দু কবিতা নিয়েও কাজ চলছে। আমার সামান্য লেখালেখির অভ্যাসটা হয়তো জীনগত ভাবে তার কাছে থেকেই এসেছে।
সবার কাছে নানুভাইয়ার জন্য দোয়া কামনা করছি।
মাশা’আল্লাহ। লিখা অনেক ভালো হয়েছে। সামনে আরো ভাল হবে আশা করি