নারীদের নিয়ে কবিতা
নারী দিবসে, নারীদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে লেখালেখি করা হয়েছিলো৷ যেগুলোর মধ্যে কিছু কবিতা সংগ্রহ করে নারীদের নিয়ে কবিতা আপনার কাছে উপস্থাপন করা হলো। আশা করি নিচের দেওয়া প্রতিটি কবিতা আপনার ভালো লাগবে। ভালো লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
সৃষ্টির প্রথম সত্তা নারী
সুচিত্র গণ চৌধুরী
নারীরা হলেন আদতে সৃষ্টির প্রথম সত্তা,
তবুও সমাজে পুরুষ সাজে গৃহকর্তা।
যুগ বদলে অবহেলিত নারী উঠছে জাতে,
নারীরা সম পারদর্শী পুরুষালি সব কাজে।
জলে স্থলে অন্তরীক্ষে নারী দিয়েছে পাড়ি,
জগতে সর্ব কষ্ট সহিষ্ণু মমতাময়ী মাও নারী।
মা নারী বোন নারী মাসী নারী পিসি নারী
মা আমার শক্তি দায়িনী ত্রিপুরারী।
জগৎময় নারী, আজ বিশ্ব বিজয়ী নারী,
মা অন্নপূর্ণা, মা লক্ষ্মী, মা দুর্গাকে স্মরণ করি।
জগতে নারী শ্রদ্ধা নারী শক্তি নারী ভক্তি,
নাম যশে থাকেনা মায়েদের আসক্তি।
রোগ শোক দুখেও বিরতি থাকেনা মায়েদের,
সন্তান সন্ততির সুখে নিবেদিত প্রাণ তাদের।
কেহ ভুলেও করোনা মায়ের জাতিকে অবহেলা,
ওনাদের উদর হয়ে এই ভুবনে আমাদের পথচলা।
বহুরূপী নারী
ফজলুল হক খান
আমি নারী, সব পারি
ইচ্ছে হলে বুকে জড়িয়ে ধরি!
প্রয়োজন ফুরিয়ে গেলে
ভগবানকেও মিথ্যেবাদী বলি।
আমি প্রিয়তমের শত্রুর সাথে
নীরবে নিভৃতে করি কোলাকুলি!
আমি এক নিমেষেই হতে পারি
ব্রহ্মাণ্ডের সেরা বহুরূপী –
অসুস্থকে সুস্থ করি তুলি
শান্তির পতাকা উড়িয়ে
সুখের বৃন্দাবনে একাকাশ
ফল্গুধারা সৃষ্টি করি।
আমার রোষানলে পড়ে
ছাইভস্ম হয়েছে যুগে যুগে
জানা অজানা অনেক নগর
তবুও পিছু হাঁটে বোকা সব নাগর?
আমি স্বপ্ন দেখাই সুন্দর সুন্দর মৌবন!
ভালোবেসে কিংবা মোহে পড়ে
ধরণীর বুকে তিলে তিলে পুড়ছে
ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ভোরের সমীরণ?
নারীর অধিকার
মোহাম্মদ হোসেন
নারী আজ আলোকিত আলোড়িত নাম
নারী সৃষ্টির এক অপরুপ নেয়ামত।
নারীবিহীন পৃথিবী হতো ধূসর মরুময়
অসুন্দরের এক শীলাময় পাথর খন্ড।
নারী লক্ষ্মী সীতা সাবিত্রী পার্বতী মহামায়া
নারীই করেছে পৃথিবীকে উর্বর সবুজ শ্যামল
নারীরাই করেছে পৃথিবীকে ছায়াময় কোমল।
নারীরা হয়নি শুধু দেবতাদেরশয্যা সঙ্গিনী
অসুরদের হাত থেকে রক্ষা করতে হয়েছে
রণরঙ্গিনী
কখনো সেজেছে ভগ্নি মাতা কন্যা জীবন
সঙ্গিনী
সৃষ্টির সুষমায় নিজকে ধরেছে মেলে
অসুন্দর কে পিছনে দিয়েছে ঠেলে
স্নেহ, মায়া, মমতা দিয়েছে উজার করে ঢেলে।
এক সময় পুরুষ শাসিত সমাজে নারী ছিল দাসী
নারীর অধিকার কেড়ে
হাসতো পুরুষেরা াজাহান্নামের হাসি।
নারী তার স্বীয় যোগ্যতায় অর্জন করেছে
ষধিকার
স্তরে স্তরে প্রমান করেছে নিজ যোগ্যতার
স্বীয় যোগ্যতায় নারীর মহিমা হয়েছে অপার।
একবার নারী অবলা আবার এই নারীই পুরুষের তরবারী
এতদূর এসেছে নারী সব বাঁধা সংহারি।
নারী ধৈর্য ধরে করে সব সহ্য
নুর নাহার নিশি
আজ দোষ হয় করলে নারী জোড় গলায় প্রতিবাদ
লোকেও দেয় হাজার হাজার তারে অপবাধ
তাই এক নির্যাতিত নারীর মিটে গেছে সব আশা
আজ এ ধরায় বেঁচে থেকে কথা বলার সব স্বাদ ।
পুরুষেরই কি যৌবনে জীবনের সব চাহিদায়
চলার পথে একটা নারীর হয় নিজ প্রয়জনে খুব দরকার
তবে কিছু পুরুষ দেয়না কেনো তবে সে নারীরে সম্মান
করে নারীর জীবন জ্বালিয়ে পোড়িয়ে শুধু কেনো ছাড়ক্ষার।
কেউ ভাবেনা কেনো সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এই নারী
কখনোই খুঁজে না নিজের আপন ঠিকানার বাড়ি
পর কে আপন করে সারা জীবন ধরে সে নারী
বড় আশায় আসে স্বামীর বাড়ি বাপের ভিটা ছাড়ি ।
বলি নিজ নিজ বিবেক খরচ করে খোঁজে মন
একটু ভাবো নারীকে দিয়ে সম্মান তোমার মা বোন
এই জগতের বিবেকবাণ জাগ্রত হে মহা পুরুষ
তোমার গর্ভধারিণী মা সেও এক নারী
না জেনে শুনে দিওনা বিনা কারণে সব নারীরে দোষ ।
হে পুরুষ রক্ষা করে নিজ মনের মনুষ্যত্ব
বলি একটু নাও নিজ ঘরের নারীর মনের খোঁজ
সে বাঁচতে শিখেছে তোমার উপর করে অবলম্বন
কখনোই বুঝিনি তাই নিজ স্বার্থের কোন বোঝ ।
নারী সেতো কেবল তোমার ভোগের বস্তুু নয়
তবে কেন হে পুরষ নারীকে দাও না পেতে নিজ অধিকার
থাকতে দেওনা হাসি খুশি দুর আকাসে উড়ে হয়ে মুক্ত
তুমি নিজেই তো নিজ মত চলো তবে হও না কেন অনুতপ্ত ।
জানো তো কিছু নারী আছে বেশ বেশ অভিমানী
না খুঁজে নিজের অস্তিত্ব ধৈর্য ধরে সব যায় মানী
তারা মন খুলে সুখ-দুঃখের কারো সাথে
বলেনা কোন গল্প তাদের কথা থাকে খুবই অল্প
কারণ কাঁদতে কাঁদতে তাদের চোখে পড়েছে ছানি ।
মা বাবা ভাই বোন সন্তান স্বামীকে ভালোবাসাই
ন্যায় নীতিবান আদর্শবাণ একটা সত্য নারীর ধর্ম
দিনরাত অবিরাম স্বপ্ন দেখে সবার সুখেরই তরে
সবারই সুখের লাগি কবে যায় সবসময় সব ভালো কর্ম।
ভাবো এক নারী দেখিয়াছে এই জগতে আলো
কিন্তুু সেই নারীকে নির্যাতনে দোষারোপ করে
নারীর হৃদয় পোড়ে হে পুরুষ তোমরাই আগুন জ্বালো
জানো তো নারী ও কিন্তুু প্রতিবাদ করতে পারে
তবু সে করেনা শুধুই তোমাদেরই বেসে ভালো ।
নারী তুমি জাগো
সানজিদা রসুল
নারী তুমি দেখিয়েছো জগতের সব আলো
দূর করছো গর্ভের আঁধার কালো
দেখিয়েছো এই ধরণীর আলো বাতাস বায়ু মৃত্তিকা সকল সৌন্দর্য।
নিকৃষ্ট কিছু পুরুষ আছে-
যিনি শুধু নারীকে দাসী বানিয়ে রাখে-
তার ইজ্জত
কে চরম ভাবে পদতলে পিষে তার নারী সত্বা কে নিছক বিনোদনের সামগ্রী
বানিয়ে
কাপুরুষের মতো পালিয়ে যায়
ধিক সেই কাপুরষ কে
আজকের দিনে যেনো সেই হতভাগা
পুরুষ কোন আওয়াজ না তুলে
তবে সে তার পুরুষত্ব কে অবমাননা করবে।
শুভ বোধ উদয় হোক– সেইসব পুরুষদের যাদের দিনে ভদ্র পোষাকে ভদ্রলোক মনে হলেও– বাস্তবে তারা ব্যর্থ পুরুষ – যিনি শুধু নারীর ইজ্জত কে চরম ভাবে অপমান করে– গা ঢাকা দেয়।
আজকের দিনে তাদের মনুষ্যত্বের হোক পরাজয়-
নারী নয় কোন ঠুনকো খেলনা -খেলা শেষ হলেই তার স্থান হবে অবহেলার রাখা কোন এক অন্ধকার কুটিরে
যেখানে দম বন্ধ হয়ে সেই নারী ছটফট করবে মৃত্যুর আগ মূহুর্ত পর্যন্ত।
জাগো নারী আজ আওয়াজ তুলো নারী নয় কোন ভোগের মাংস
নারী হলো সমাজ সংসার কে সাজিয়ে দেওয়ার জন্য মমতাময়ী এক মজবুত কারিগর।
নারী হলো পুরুষ কে পরম যত্নে আগলে রাখার জন্য
নারী নয় শুধু পুরুষের ভোগের জন্য।
মানুষ দিবস
বাবুল আকতার।
নারী,
তোমাকে বিনম্র শ্রদ্ধা,শুধু নারী দিবসেই নয়,ইহকাল- পরকাল এবং সব সময়,
মেয়ে,
জগৎ সংসারের প্রায় অঘটন ময়নাতদন্ত রিপোর্টে
তুমি প্রশ্নবোধক বিস্ময়।
মা,
নারী নির্যাতনের এ যুগে বাবা কেন আজও থাকে
শংঙ্কিত ভয়ে তটস্থ?
বোন,
বলতে পারো,অযাচিত ভ্রুণ হত্যায় কি করে থাকো স্বাভাবিক সুস্থ?
প্রিয়া,
উশৃংখল নগ্ন পিঠ- বুক কাটা পোশাক ইন্ধনে হয়ো’না আর অযাচিত ধর্ষিত,
বালিকা,
নারী- পুরুষ নয় কোন আলাদা জাত,মনুষ্যত্ব হৃদে হোক সূর্যমুখীর মত অঙ্কিত।
সখী,
নারী দিবস ও পুরুষ দিবসে আমি প্রতি বছরই নিরবে
থাকি একদম নিরস,
কন্যা,
বৈষম্যবর্ধক বিভেদ নিরাময়ে সময়ের প্রয়োজনে চাই
শুধুই মানুষ দিবস।।
নারী দিবস
সৃজনে শুক্লা দাস
চারিদিকে আজ সমারোহ আজ নারী দিবস
গানে, কবিতায়, ভাষনে, পালনের আবেশ। মেয়ে মানেই বোঝা আজ ও শোনা যায়
কালো বলে কত মেয়ের বিবাহ ভেঙ্গেও যায়।
তবু মহা সমারহে নারী দিবস পালিত হয়।
পণ প্রথার কবলে কত মেয়ে প্রাণ দেয়
তবু মহা সমারহে নারী দিবস পালিত হয়
আজ ও কত নাবালিকা কিশোরী ধর্ষিতা হয়।
তবু মহা সমারহে নারী দিবস পালিত হয়
কত যন্ত্রণায় যে মেয়েটি একদিন মা হয়
আজ ও বৃদ্ধাশ্রমে সেই মা কত অসহায়।
তবু মহা সমারহে নারী দিবস পালিত হয়।
পিতা মাতার মুখাগ্নি তে নাকি মেয়ে কিছুই নয়
তবুও মহা সমারহে নারী দিবস পালিত হয়।
নারী মানেই ভোগের সামগ্রী তাকে বিবস্ত্রা করা হয়
তবুও মহা সমারোহে নারী দিবস পালিত হয়
নারী শুধুই নারী নয় মাতৃত্বের আধার
তবু নারী আজও সতীত্ব রক্ষায় করে হাহাকার।
নারী চায় সম্মান দিবসের কিবা প্রয়োজন? নারী অসম্মানে বৃথাই সব আয়োজন।