পজেটিভ
টেবিলের উপর কেটে রাখা আনারসের এক পিস নিয়ে সবে কামড় দিতে যাবে ওয়াহিদ উদ্দিন। এমন সময় উনার ভায়রার ছেলে মামুন এসে বলল খালু আপনার বাইকের চাবিটা দিন। এই আধা ঘণ্টার জন্য। খুব জরুরি। তোমার গাড়ির কি হয়েছে মামুন? চাবিটা ওর হাতে দিয়ে বললেন ওয়াহিদ। আর বলবেন না খালু। আমার ড্রাইভারকে আপাতত বিদায় করে দিয়েছি।সে বাড়ি চলে গেছে। তাছাড়া লক ডাউনে পড়ে পড়ে গাড়িটা একটু সমস্যা করছে। এজন্য আপনার বাইকটা দরকার। খালাম্মা কে দোয়া করতে বলবেন। কি কারণে দোয়া চাইছে এটা না বলেই দৌড় দিল মামুন।
ওয়াহিদ উদ্দিন আর তার ভায়রা ভাই সবুর মুন্সী দুজনে দুই ফ্ল্যাট নিয়ে থাকে। আফতাব পাঁচ তলায় আর সবুর সাত তলায় । সবুরের একমাত্র ছেলে এই মামুন। ব্যাংকে চাকরি করে। বেচারা বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। কিন্তু বিয়ের দশ বছর হয়ে গেল তার সন্তান হচ্ছে না। বউটা অনেক ভালো একটা মেয়ে। ব্যবহার অনেক সুন্দর। খুব সাংসারিক আর ভদ্র মেয়েটা। শুধু একটাই অভাব,,,, সন্তান।
কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলতে গেলো লতিফা, ওয়াহিদের স্ত্রী। আরে মামুন ! আয় আয়। কাঁঠালের বিচি দিয়ে গরুর গোশত রেঁধেছি। তোর তো অনেক প্রিয় । কই তুমি, খেতে এসো বলে ওয়াহিদকে আওয়াজ দেয় লতিফা। খালাম্মা বলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে মামুন। বিচলিত লতিফা কোন রকমে বলতে পারলো কি হয়েছে তোর বাবা? ওর হাতে হসপিটালের ফাইল। মামুন বাইকের চাবিটা পকেটে থেকে বের করে লতিফাকে দিয়ে বলল খালুকে দিয়েন। খালাম্মা রিপোর্ট পজেটিভ একটু বলে বেরিয়ে গেল মামুন।
ওয়াহিদ সাহেব শুনে বেজায় চটেছেন। কান্ড জ্ঞানহীন নাকি ছেলেটা? তোমার বয়স হয়েছে, ডায়াবেটিসের পেশেন্ট, আমার প্রেশার, এরপরও সে কিভাবে পারলো? লতিফা অপ্রস্তুত। দৌঁড়ে গিয়ে সময় নিয়ে গোসল করতে এলো। দোয়া দরুদ পড়ছে। এদিকে দাঁড়োয়ানকে বলে পানিতে বেকিং সোডা মিশিয়ে বাইকটি পরিস্কার করার নির্দেশ দিলো ওয়াহিদ। এমন সময় কলিংবেল বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই ওয়াহিদ দেখলো লতিফার বড় বোন কাজল আর মামুন সাথে মামুনের বউ টিয়া। প্রায় দৌঁড়ে লতিফা এসে বলল বুবু এ অবস্থায় বাসায় এসেছো কেন তোমরা? জানো না আমি ও ওয়াহিদ দুজনেই অসুস্থ। আর মামুন তুই কিভাবে পারলি করোনা পজিটিভ নিয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরতে? দেখো খালাম্মা কি বলে টিয়াকে ইশারা করে মামুন, টিয়ার চোখে খুশির ঢেউ চকচক করছে।
কাজল বললো জড়িয়ে ধরবে না কেন লতিফা? এ পজেটিভ তো করোনা নয়। টিয়ার প্রেগন্যান্সির রিপোর্ট পজেটিভ। তাও একটি নয় টুইন বাচ্চা কনসিভ করেছে টিয়া? খুশিতে কি আমার ছেলের মাথা ঠিক থাকার কথারে বোন!! লতিফা ও স্তব্ধ হয়ে গেছে আনন্দে। দীর্ঘ দশ বছর পর বোনের পরিবারে নতুন অতিথির খবর। এরকম নিউজ শুনে কার না খুশী হওয়ার কথা? মামুন তো খুলে বলেনি তাই ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে বুবু। এগিয়ে যায় লতিফা আমার মামুন বাবা আর টিয়া মায়ের জন্য অনেক অনেক দোয়া। কি যে একটা ঝটকা দিলি আমাদের, এমন কেউ করে? হাসলো ওয়াহিদ উদ্দিন । মামুন লতিফাকে বলল খালাম্মা গোশত দিয়ে খেতে এসেছি তাড়াতাড়ি খাবার দাও। আয়, এসো টিয়া, বুবু তোমরাও এসো । মিষ্টি মুখ নয় সোজা দাওয়াত খাবো, মামুনের কথায় সবাই হাসতে হাসতে ডায়নিং টেবিলের দিকে এগোলো।
আরো গল্প পড়ুন