পরিবর্তন কলমে ফারহানা মরিয়ম

পরিবর্তন

খাবার টেবিলে রোজকার মতন খাবার পরিবেশন করছিলেন চমন আরা। খাবে স্বামী বখতিয়ার আহমেদসহ তার তিন সন্তান মুগ্ধ, স্নিগ্ধ, উৎস আর পুত্র বধু মোহর। প্রগতিশীল পরিবার। সারাক্ষণ টিভিতে গান, মোবাইলে গান আর মিডিয়া জগত নিয়ে আলোচনা চলতে থাকে। বড় দুই ছেলে ডাক্তার। ছোটটা রুয়েটে পড়ে। লক ডাউনে এখন বাসায় । সেই অনুযায়ী বউমা মোহর একটু কনজারভেটিভ। ধার্মিক, নামাজের পাবন্দ, কোরআন হাদিসের নিয়মিত পাঠক। বখতিয়ার তাকে নাম দিয়েছে গোঁড়ামি। আসতে না আসতেই মেয়েটার উপর বিরক্ত সে। ভেবেছিল মেয়ে নেই তবে পুত্র বধু এসে বাড়িময় ঘুরে বেড়াবে,নাচবে গাইবে । মুখরিত করে তুলবে চারপাশ। কিন্তু স্বপ্ন আর বাস্তবের চেহারা দেখলো না। চমন আরার বাংলা, হিন্দি অনেক গান মুখস্থ। গুনগুন করে গান সারাক্ষন। নায়ক নায়িকার নাম থেকে শুরু করে তাদের পার্সোনাল লাইফ সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় তার নখদর্পণে। বাড়িতে নিয়মিত ইন্ডিয়ান পত্রিকা স্টার ডাস্ট, সানন্দা, ফিল্মফেয়ার রাখা হয় শুধু বিনোদন জগতের খোঁজ খবর রাখার জন্য। বখতিয়ার প্রাউড ফিল করে চমনকে নিয়ে। মোহর এ বাড়ির বউ হওয়ার পর বখতিয়ারের গানের পিপাসা আরো বেড়েছে। টুকটাক বাহানায় চমনকে গান শোনানোর জন্য বায়না ধরে আর ফিল্মি বিষয়ে অনেক কিছু জিজ্ঞেস করে যা তার অনেকবার শোনা। শুধু মোহরের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এ প্রচেষ্টা। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। তার উপর বড় ছেলে মুগ্ধর আচার আচরণ স্বভাব চরিত্রে অনেক পরিবর্তন এসেছে। দাঁড়ি বানাচ্ছে না কিছুদিন ধরে। নামাজ পড়া শুরু করেছে, আবার নাকি কোরআনের আলোচনা করে জামাই বউ মিলে। এই বয়সে দাড়ি রাখে? নামাজ পড়ে? আমি বাপ হয়ে এখনো দাড়ি রাখিনা। একটু ছেলে মুগ্ধ মেয়েটা মাথা খেলো বলে। বখতিয়ারের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ভেবেছিলো ডাঃ মেয়ে অনেক বেশি স্মার্ট হবে কিন্তু এই কি! আপাদমস্তক ঢেকে বের হয়। চমন আরা টিভি দেখছিল। মোহর এসে বলল মা একটু কথা বলতে পারি? হ্যা এসো এসো, বসো। দেখো নাচের অনুষ্ঠান দেখাচ্ছে, কম্পিটিশন, বললো চমন। মা নামাজ পড়েছেন? আসরের নামাজের সময় এখন। চমন বিরক্ত চোখে তাকাল। সে নামাজ পড়ে তবে নিয়মিত না। মাঝে মাঝে সারাদিনের নামাজ একবারে পড়ে রাতে।

আরো পড়ুনঃ  রং বদল

 

বললো রাতে পড়ে নেবো। মা, নামাজ ওয়াক্ত মতো পড়া ফরজ। সাত বছর বয়স থেকে নামাজে অভ্যস্ত হতে হবে। নামাজ ত্যাগ করা অলংঘনীয় অপরাধ, মুসলমান হিসেবে নামাজ অবশ্যই পড়তেই হবে। চলুন মা একসাথে নামাজ পড়ে নেই। অনিচ্ছা সত্ত্বেও উঠে গিয়ে নামাজ পড়লো চমন। সত্যি বলতে কি মোহরের সাথে নামাজ পড়ে তার ভালোই লাগছে। এরপর মোহর কয়েকটা বই দিলো চমনকে । হাকিকত সিরিজ। ওর এতো ভালো লাগছিল পড়তে । জীবন বদলে দেয়া শক্তি আছে লেখাগুলোর মধ্যে। এক একটা পৃষ্ঠা জীবনের এক একটা ধাপের ভুল গুলোর অনুশোচনার তাগিদ দেয়। বুঝতে পারে কি ভুলের মধ্যে ছিল। এভাবে তো কেউ বলেনি! এমন চমৎকার লেখা সে জীবনে পড়ার সুযোগ পায়নি। নেশাগ্রস্থের মতো পড়ে ফেললো সে। বখতিয়ার বললো কি পড়ছো? হাতে নিয়ে ধমক দিলো চমনকে। চমন শুধু বললো একটু পড়ে দেখো প্লিজ। জীবনে কিছু চাইনি তোমার কাছে, রিকোয়েস্ট করছি একটু পড়ো। একরাশ হতাশা আর বিরক্তি নিয়ে বই হাতে নিলো বখতিয়ার। এলোমেলো করে দিচ্ছে তার সব। এ কেমন ঝড়? কে সে? কি করেছে এতো দিন? নানান চিন্তা ঘিরে ধরেছে। সব সময় জুমা পড়তো। ঘোরের মধ্যে নিজ থেকেই ফজরের জন্য উঠলো, রেডি হলো‌। চমন ও উঠেছে। মুগ্ধ আর মোহরতো নিয়মিত উঠেই। আবছা আলোয় হাঁটছে বখতিয়ার। উদ্দেশ্য মসজিদ। কি সুন্দর বাতাস গায়ে লাগছে , মনে অপার্থিব পুলক। এ অনুভুতি তার কাছে নতুন। নামাজ পড়ে কাতারবন্দি হয়ে । এ এক অন্য বখতিয়ার। চমন নামাজ পড়ে কোরআন হাতে নেয়। অনেক বছর চর্চা নেই। সেই ছোট্ট বেলায় মক্তবে পড়েছিল। শুরু করে চমন। ভিতরে তীব্র অনুশোচনা। এ কন্ঠকে কোরআন দিয়ে সাজায়নি। অনর্থক বাক্য গান দিয়ে ব্যবহার করেছে। আল্লাহর কাছে মাফ চায় চমন। শুকরিয়া জানায় আল্লাহর কাছে মে মোহর তাদের পুত্র বধু হিসেবে এসেছে। শোকর করে আল্লাহর কাছে মে তিনি কোন এক উসিলায় তাদের পরিবর্তন করে দিয়েছেন। নিয়মিত কোরআন ও হাদিস চর্চায় জান্নাতি আবহ তৈরি হয় বখতিয়ার ও চমনের সংসারে। এ সুখের পরিধি মাপার কোন যন্ত্র তাদের কাছে নেই। শুধু আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হয়ে উচ্চারণ করে আলহামদুলিল্লাহ।

আরো পড়ুনঃ  বন্যা নিয়ে লেখালেখি

 

আরো পড়ুনঃ দৈনিক চিরকুটে সাহিত্য 

গল্পের শিরোনাম শিয়াল মামার বিয়ে, কলমে সাকিব মৃধা

গল্পের শিরোনাম ভ্রুণের আর্তনাদ লেখিকা সানজিদা সাবিহা

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *