পরী ও তৃপ্তি মুরগির বন্ধুত্ব
খুরশীদ জাহান রুপা
ছোট মেয়েটি দেখতে মাশাআল্লাহ অনেক সুন্দর। এককথায় যেন পরীর বাচ্চা । তাই তার বাবা- মা আদর করে তার নাম পরী রেখে দিল। আস্তে আস্তে পরী বড় হতে লাগল। পরীর বয়স যখন ৭ বছর তখন একদিন পরীর হঠাৎ পরীর ভীষণ জ্বর আসলো। পরীর খাওয়া দাওয়া বন্ধ হয়ে গেল। পরীকে হাসপাতালে নেওয়া হলো। ডাক্তার পরীর কিছু টেস্ট দিল। ডাক্তার কিছু মেডিসিন দিল আর বলল, ওকে সবসময় হাসিখুশি রাখবেন। এই অসুস্থতার সময় পরীকে মুরগী দেখানো হতো। মুরগী দেখে দেখে পরী ভাত খেত। ৫ দিন পর পরী সুস্থ হয়ে উঠে।
প্রতিদিন মুরগী দেখার কারণে পরীর মুরগির প্রতি একটা ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়। পরী মুরগী ধরতে চাইত কিন্তু কেউ ধরতে দিত না। একদিন পরী ওর দাদু কে বলে, দাদু আমাকে একটা মুরগির বাচ্চা ধরতে দাও। পরীর দাদু বলে,আচ্ছা ধরতে পারলে ধরো। ধরার পর সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে হাতমুখ ধুয়ে নিও। পরী বলল,আচ্ছা ঠিক আছে দাদু। পরী আরও বলল,দাদু আমি মুরগির বাচ্চা ধরতে পারলে আমি নিজেই ওকে পালব, আমাকে দিয়ে দিবে কিন্তু। দাদু মনে থাকে জানি । পরীর দাদু বলল,আচ্ছা সোনা আপু তোমাকে দিয়ে দিব। পরী বলল, দাদু বলো সত্যি দিবে তো। দাদু বলল,হ্যাঁ রে পাগলী তোকে মুরগির বাচ্চা দিয়ে দিব।পরী বলল,বলো তিন সত্যি। ওর দাদু বলল,আরে বললাম তো দিব, যা তিন সত্যি বলছি।এখন বিশ্বাস হলো তো। পরী বলল,হ্যাঁ দাদু।এখন তাহলে আমি মুরগির বাচ্চা ধরি।
এই বলে পরী মুরগির বাচ্চার পিছু পিছু দৌড়াতে থাকল। অবশেষে পরী একটা সাদা রং এর মুরগির বাচ্চা ধরে ফেলল। মুরগির বাচ্চা ধরার পর পরী অনেক খুশি হলো। খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়ল। খুশিতে মুরগির বাচ্চা একে একে মা,বাবা,দাদা,কাকা,ফুফু,ভাই,বোন সবাইকে দেখাতে লাগল। সবাই পরীর খুশি দেখে ভীষণ খুশি হলো।
পরী মুরগির বাচ্চাটির জন্য নাম খুজতে লাগল। ভাবল মুরগির বাচ্চার একটা নাম দিবে। ভাবতে ভাবতে সে একটা নাম বের করে ফেলল। মুরগির বাচ্চার নাম রাখল তৃপ্তি।
তারপর থেকে শুরু হলো তৃপ্তি আর পরীর মধ্যে বন্ধুত্ব। পরী তৃপ্তিকে সবসময় সংগে নিয়ে ঘুরত।একা একাই তৃপ্তির সাথে কথা বলত।তৃপ্তিকে রোজ গোসল করাত।গামছা দিয়ে গা মুছে দিত। পরী তৃপ্তি কে নিয়মিত ভাত,খুদ,পানি,চাল খেতে দিত। এছাড়াও সে তৃপ্তিকে ওড়না দিয়ে পেচিয়ে কাপড় পড়িয়ে দিত। পরী তৃপ্তির সাথে খেলা করত। তৃপ্তি কে পরী ভীষণ ভালোবাসত। কাঁথা গায়ে দিয়ে পরীর কাছে ঘুম পারাত। তৃপ্তি ও একসময় পরীর পোষ মানে। পরী তৃপ্তি আয় আয় বলে ডাকলে,তৃপ্তি পরীর ডাকে সাড়া দিত এবং তাঁর কাছে ছুটে আসত। পরী নানুর বাড়ি গেলেও খাঁচায় করে তৃপ্তি কে নিয়ে যেত।এভাবেই দুজনের বন্ধুত্ব চলতে থাকল।
৬ মাস পর।একদিন শীতের সময়। পরী তৃপ্তিকে চাল খাওয়ানোর সময় দেখল তৃপ্তি আগের মতো তেমন লাফালাফি করছে না,খেতে চাইছে না,কেমন যেন ঝিমাচ্ছে। তখন পরী সবাই কে বিষয়টি খুলে বলল। পরী তৃপ্তি কে নিয়ে ভীষণ চিন্তায় পড়ে গেল। তৃপ্তির অনেক ঠান্ডা লাগছে। পরীর দাদা পশু ডাক্তারের কাছ থেকে ঠান্ডার ওষুধ আনল। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী পরী তৃপ্তি কে ওষুধ গুলো খাইয়ে দিল। পরীর অনেক মন খারাপ হয়ে গেল। ওষুধ খাওয়ানোর পর কখন তৃপ্তি সুস্থ হবে সেই আশায় রইল। এভাবে দুইদিন পার হয়ে গেল। কিন্তু তৃপ্তি সুস্থ হলো না। তৃপ্তির অবস্থা ক্রমশ খারাপ হতে চলল। তিনদিনের মাথায় পরী ঘুম থেকে উঠে দেখে তৃপ্তি নড়াচড়া করছে না,লাফালাফি করছে না।পরীর আর বুজতে বাকি রইল না যে ওর তৃপ্তি মুরগীটি মারা গেছে। পরী সেকি কান্না জুড়ে দিল। বাড়ির সবাই পরীর কাছে ছুটে আসলো। সবাই এসে দেখে তৃপ্তি মুরগী মারা গেছে। পরী তৃপ্তি মুরগী মারা যাওয়াতে ভীষণ কষ্ট পেল।