ফাজলামির শেষ পরিণতি কলমে নারগিস খাতুন

ফাজলামির শেষ পরিণতি
 নারগিস খাতুন

 

আমি সালমা সুলতানা আজ আমার ছোটো কাকার মেয়ের খাদিজার বিয়ে। খাদিজা বয়স আঠারো হয়েছে, ছোটো খাটো মেয়ে চার ফুট লম্বা, গায়ের রং কালো। ছোটো কাকা তার মেয়ে খাদিজার জন্য অনেক পাত্র দেখেছে, ছোটো আর কালো মেয়ে বলে পাত্র পক্ষ খাদিজাকে পছন্দ করে না। অবশেষে দশ লক্ষ টাকা পণে খাদিজার আজ বিয়ে হচ্ছে। ছোটো কাকা কৃষক, দিন আনে দিন খায়, শেষ ভিটা টুকু ছাড়া সব বিক্রি করে খাদিজার বিয়ের পণ জোগাড় করে। আমি খাদিজার বয়সে বড়ো এবার কলজের থার্ড ইয়ারে পড়ছি। খাদিজা উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ে। আমার বাবা একটা ব্যবসা আছে সেই থেকে আমাদের দিন বেশ ভালোভাবেই যায়। আমি আর আমার একটা ছোটো ভাই আছে। খাদিজারা দুই বোন খাদিজা বড়ো, ছোটো বোনের নাম রেশমা। বর পক্ষ চলে এসেছে। আমি রেশমাকে সহ আরো কয়েক জনকে সঙ্গে করে গেটে বরকে আটকিয়ে শালী হিসাবে নতুন দুলাভাইকে ফাজলামি করতে লাগলাম। বর পক্ষ খুশি হওয়ার পরিবর্তে রেগে গেলেন, গেটে কোনো রকম টাকা না দিয়ে জোর করে বাড়ির ভেতরে চলে আসে। আমরা রেগে আছি গেটেতো টাকা পেলাম না কিন্তু এবার বরের এমন জিনিস লুকিয়ে রাখবো যে আরো বেশি টাকা দিতে বাধ্য হবে। গেটে ছোটো কাকা বরের হাতে একটি সোনার আংটি পরিয়ে দেয়। আমরা সবাই যুক্তি করে কৌশলে সেই আংটিটি খুলে নিয় বরের হাত থেকে, আংটিটি রাহুল লুকিয়ে রেখে দেয়। আমার আব্বুরা দুই ভাই ও এক বোন, রাহুল পিসির ছেলে। রাহুল আমি সমবয়েসী।
রাহুল এই গ্রামে বেশি আসেনা পড়াশোনা নিয়েই ব্যাস্ত তাই সে আমাকে বলে এই গ্রামটা ঘুরতে যাবে, বিয়ে পড়ানোর আগে আগেই চলে আসবে। তাই আমি, রাহুল, রেশমা, আমার ছোটো ভাই সবাই একসাথেই ঘুরতে চলে গেলাম। আমরা চারজন অনেক ঘুরলাম, একটু দেরি হয়ে গেল বাড়ি আসতে। বাড়ি এসে দেখি সবাই কান্না করছে। আমরা চারজন খুব অবাক হলাম, আমার মা কে জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে সবাই কান্না করছে কেনো? মা বলে খাদিজা গলায় দড়ি দিয়ে আত্নহত্যা করেছে, কথাটা শুনেই অবাক হয়ে দেখলাম খাদিজার লাশ বারান্দায় শুয়ে আছে তাকে ঘিরে সবাই কান্না করছে। মা কে আবারও জিজ্ঞাসা করলাম আজ খাদিজার বিয়ে আর সে আত্মহত্যা কেনো করেছে? মা কান্না কণ্ঠে বলল জানিনা কে বা কারা বরের আংটি চুরি করে নিয়ে চলে গিয়েছে, সেই আংটি বিয়ে বাড়িতে কারোর কাছে খুঁজে পায়নি। পাত্র পক্ষ বলে বিয়ের আগেই পাত্রের আংটি চুরি করেছে, এমন চোরের বাড়িতে আমার ছেলের বিয়ে করাবো না, এই বলে পাত্র পক্ষ বিয়ে ভেঙে দিয়ে চলে গিয়েছে। খাদিজার বাবা অনেক কষ্ট করে খাদিজার বিয়ে দিচ্ছিল এমন পাপ কাজ যে কে করেছে সেই শকেই খাদিজা আত্নহত্যা করেছে। আমরা পাত্র পক্ষদের কে যেতে বাধা দিছিলাম তখনই খাদিজা আত্নহত্যা করে ফেলেছে। মায়ের কথা শুনেই আমাদের খুব কষ্ট হলো। রাহুল তার পেন্টের পকেট থেকে আংটিটি বের করে সবাইকে বলে আমরা বরের সাথে টাকা নেওয়ার জন্য আংটিটি লুকিয়েছিল। আমি সালমাকে বলেছিলাম এই গ্রামটা ঘুরতে নিয়ে যেতে। কিন্তু জানতাম না যে এর মধ্যেই এত কিছু হয়ে যাবে। আমাকে মাফ করে দাও ছোটো মামী ছোট মামা। রাহুলের সাথে সাথে আমরাও সবাই মাফ চাইলাম। নিজেদের খুব অপরাধী মনে হচ্ছে যদি, এই রকম ফাজলামি না করতাম তাহলে হয়তো আমাদের মধ্যে খাদিজা এখনও বেঁচে থাকত। আজ তার বিয়ে হতো। বাড়ির কেও কিছুই বলতে পারছে না। আমার মা বাবা আমাকে বকাবকি করছে অন্য দিকে রাহুলের বাবাও রাহুল কে অনেক বকাবকি করছে যে ওরা দুইজন ছোটো আর তোরা দুইজন বড়ো তোদের তো বুদ্ধি করার দরকার ছিল। আমরা চুপ করে থাকি। শেষে খাদিজার কবর দিয়ে আসে সবাই।

আরো পড়ুনঃ  পরী ও তৃপ্তি মুরগির বন্ধুত্ব

মুর্শিদাবাদ       ভারতবর্ষ 

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *