বর্ষাকালের ভালো-মন্দ
লেখক – রতন বসাক
গ্রীষ্মকালের প্রচন্ড দাবদাহে যখন গাছপালা ঝলসে যায় ও মাটি শুকায়। ঠিক তখন মানুষ ও সমস্ত প্রাণীকুল এই ঋতুর কড়া প্রহার থেকে রেহাই পেতে বৃষ্টির আশা করে। সূর্যের প্রচন্ড তাপে নদী-নালা-খাল-বিল ও সমস্ত জলাশয় শুকিয়ে, জল বাষ্প হয়ে উপরে উঠে যায়। গরমের মারে সবাই হাঁসফাঁস করতে থাকে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন, বর্ষাকাল কবে শুরু হবে? বাংলা মাসের বৈশাখ ও জৈষ্ঠ মাস শেষ হলেই আসে আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস। আর এই দুটো মাসই ঋতুচক্রের নিয়ম অনুযায়ী বর্ষাকাল।
এই সময়ে আকাশে সাদা-কালো মেঘের ঘনাঘাটা দেখা যায়। সূর্যের আলো কখনো চমকায় আবার কখনো মেঘ ঢেকে অন্ধকার করে দেয়। মেঘ জমলেই যে বৃষ্টি হবে, তার কোন মানে নেই। অনেক সময় প্রচন্ড হাওয়ায় মেঘ উড়ে দূরে চলে যায়। বৃষ্টি হয় না আকাশে মেঘের ঘর্ষণে বিদ্যুৎ চমকায় ও ভীষণ শব্দ শোনা যায়। তাই চলতি কথায় বলে ” যত গর্জায় তত বর্ষায় না। ” অনেক সময় বজ্রপাতের ফলে বড়-বড় গাছ জ্বলে পুড়ে যায় ও মানুষ আর প্রাণী মৃত্যুর কবলে পড়ে।
তবে বর্ষাকাল মানেই অনবরত বৃষ্টি কখনো জোরে, কখনো আস্তে; আবার কখনো সূর্যের আলো দেখা যায় আর মেঘে ঢাকা থাকে পুরোটা আকাশ। বর্ষার বৃষ্টি জল পেয়ে সমস্ত গাছ-গাছালি নতুন করে সবুজ ও সতেজ হয়ে ওঠে। নদী-নালা-খাল-বিল ও জলাশয় বৃষ্টির জলে ভরে যায়। মানুষ প্রচন্ড গরমের পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। বৃষ্টির জন্য বর্ষাকাল কবি ও লেখকদের কাছে ভীষণ প্রিয়। তাঁরা এই সময় আবেগ প্রবন হয়ে পড়ে নতুন কিছু লেখার জন্য।
বর্ষাকালে ঘরের বাইরে চলাফেরা করা ভীষণ বিরক্তি কর হয়ে ওঠে। কেননা কাদা আর জলে ও তার কারণে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে। জামা-কাপড় সহজে শুকায় না আর সব সময় একটা স্যাঁতসেঁতে ভাব অনুভব হয়। আবার অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত হলে বন্যা হবার আশঙ্কাও দেখা দেয়। শহর ও গ্রামের নিচু স্থানে জল জমে যায়, এমনকি মানুষের ঘরেও জল ঢুকে অনেক ক্ষতি করে দেয়। এই বর্ষাকালের জন্যই মানুষের এক দুর্দশা গ্রস্থ জীবন যাপন করতে হয়। তাই অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত কোন সময়ই কাম্য নয়।
পৃথিবীর সমস্ত জায়গায় সমভাবে জলের বন্টন নেই। তাই বর্ষাকালের বৃষ্টির মাধ্যমে জলের অভাব দুর্গম স্থানে পূরণ হয়। কৃষি কাজে এই বর্ষাকালের বৃষ্টি আশীর্বাদ স্বরূপ, যদি প্রয়োজন মতো হয়। হয়তো পাম্প চালিয়ে কিছুটা পরিমাণ জল কৃষি কাজে ব্যবহার করা যায়। তবে যতটা প্রয়োজন ততটা সম্ভব নয়। তাই বর্ষাকালের বৃষ্টি একমাত্র ভরসা চাষীর কাছে। রুক্ষ ও শুষ্ক পৃথিবী সবুজ রঙে ছেয়ে যায়, সবাই আবার নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়।
বর্ষাকালের জল যাতে না জমে যায় কিংবা বন্যার পরিস্থিতি না হয়। তার জন্য জমা জল নিকাশি ব্যবস্থা আগে থেকেই ঠিক করে রাখতে হবে। এই সময় বাইরে গেলে ছাতা কিংবা রেইনকোট সঙ্গে নিয়ে বেরোতে হবে। ছোটরা যাতে বিনা কাজে বাইরে না যায় তাও দেখতে হবে। বর্ষাকালের বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য আমাদের পুকুর কেটে রাখতে হবে। তাতে অসময়ে আমাদের জলাভাব অনেকটাই দূর হবে। ঋতুচক্রের এই বর্ষা ঋতু সত্যি সবুজ পৃথিবীর জন্য অতি অত্যাবশ্যক ঋতু।