
বাবার চিঠি
খাদিজা খাতুন
—জানিস খোকা আমি না পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভার বহন করেছি,
—যেদিন তোর সাথে আমার শেষ দেখা হয়েছিল সেদিন।
—ওই যে তোকে বিদায় দেওয়ার সময়।
—আমার মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সব দুঃখ নিংড়ে এসে আমার বুকে বাসা বেঁধেছে,
—আমি না, সেই জন্য নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না।
—আর হাঁটতেও পারছিলাম, মনে হচ্ছিল কাঁঠালের —কাঁচা আঠার সাথে আমার পা আটকে গেছে।
—তবুও আমি থামিনি তোকে বিদায় দেওয়ার তাড়নায়।
—আমি এতো বাধার মধ্যেও হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম
—তুই তো চলে যাচ্ছিস, আমার কাছে আবার কে নানান বায়না নিয়ে আসবে!
—কে হাজার টা সমস্যা নিয়ে হাজির হবে!
—কে কারণে অকারণে আব্বা আব্বা বলে চিল্লায়ে উঠবে!
—কে মিথ্যা বলে টাকা নিয়ে বাপ বেটার একই রকম পাঞ্জাবি কিনবে!
—তবুও তোকে আমি রেখে আসলাম,
—ফেরার পথে না আমার কষ্ট কেন জানি বৃদ্ধি পেতে থাকলো,
—খোকা, তুই বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা সেই কষ্ট টা আজও বেড়ে চলেছে।
—বাড়ি এসে দেখি বাড়ি ভর্তি মানুষ তবুও আমার পুরো দুনিয়া শূন্য শূন্য লাগছে।
—তোর ঘরে যায়, পুকুর পাড়ে যায়, বাগানে যায়, পাড়ার দোকানে যায় কোথাও তোর দেখা পায় না।
—এভাবে তোকে আমি খুঁজতেই থাকি,
—একদিন আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি একটা তাঁরা জ্বল জ্বল করে জ্বলছে,
—মনে হচ্ছে আমার দিকে তাকিয়ে বলছে আব্বা আমি এখানে, তোমার খোকা।
—সেই থেকে সারাদিনের হাজারো ব্যস্ততার পরেও রাতের আঁধারে আমার ঘুম নেই,
—দু চোখ এক করলেই ভেসে উঠে তোর শেষ বিদায়ের দিনের ছবি।
—তাই তো ঘরে না থেকে রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তোর সাথে গল্প করতে থাকি।
—আর দিন গুনতে থাকি তোর সাথে পাশাপাশি বসে আবার গল্প করতে পারবো।