বোনের কাছে ভাইয়ের চিঠি
প্রিয় নূপুর,
জীবনের প্রান্তবেলায় আজ আমি বড্ড একা, নিঃসঙ্গ! কখনো ভাবেনি আমার প্রতিটি দিন
প্রতিটি সময় এমনি করে কষ্টের ভেতর কেটে যাবে! স্বপ্ন সবই মরে পচেগলে দুর্গন্ধ ছড়াবে!
নূপুর, আল্লাহর বড় নেয়ামত স্বাস্থ্য। সেই স্বাস্থ্যই আমার ভালো নেই, ভালো থাকেনি, থাকবেও না। , জেনে রেখো একটা মানুষ কখনই অসুখবিসুখের ” ভান” ধরেনা। আমারও ইচ্ছে হয় পাঁচ দশটা সুস্থ লোকের মতো জীবন কাটাতে।
এই যে পাখিদের সুর, নদীর কলতান, জীবনের এতো কোলাহল, সবুজের গালিচা, আকাশ, চারদিকে প্রেমের ছড়াছড়ি, রাত জেগে মুঠোফোনে কথা বলা, ভিডিও কলে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি করা আমার কাছে এসবের কোন দামই নেই, সবকিছু অসার মনে হয়। বিশ্বাস করো এখন আর এক মুহূর্তের জন্যও বেঁচেবর্তে থাকতে মন চায় না। খুব বেশি পরবাসী জীবন আমার। একাকিত্ব আমাকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়। হায়রে জীবন আমার! চোখে কষ্ট! পেটে কষ্ট! পায়ে কষ্ট! প্রিয়জন থেকেও কষ্ট আসে যখন তখন।
আত্মহত্যা মহাপাপ, এটা জেনে আর সামনে এগুতে পারি না। শামুকের মতো আর কচ্ছপের মতো বেঁচেবর্তে আছি। ঘরকুনো অন্ধকারের মতো আমি একা, আলো আর আমার জীবনে আসলো না । অথচ, কতো স্বপ্ন ছিলো সমস্ত হৃদয় জুড়ে।
নূপুর, আমি আমার জীবনকে জীবন বলি না। পাপ অভিশাপে জর্জরিত দেহ। পবিত্রতার সফেনে কখনই ঢেকে দিতে পারবো না, আলসতা আর হতাশা গ্রাস করেছে আমাকে, এ গুলো থেকে পরিত্রাণ কিংবা রেহাই পাওয়া অসম্ভব!
নূপুর, বড্ড নিঃশ্চিন্তে নাক ঢেকে তোমরা ঘুমাও, ঘুমাও দিনেও, স্বপ্নের মাঝে হারিয়েও যাও! অথচ, আমি ঘুমাতে চাই, ঘুমাতে চাই, ঘুম আমার আসে না!
এরমক জীবনে “ঝুমুকে জড়ানো আমার উচিৎ হয়নি, ওর কোন আহ্লাদ, ওর কোন স্বপ্নই আমি আলোয় ফুটাতে পারেনি! অন্য মেয়ে হলে ঝাঁটার বাড়ি দিয়ে সংসার নামক ছেলেখেলাকে পায়ে দলে আরেক পুরুষের হাত ধরে চোখের সামনে দিয়ে হেঁটে যেতো, যেতো কি না তুমিই বলো? আমার কি আছে যোগ্যতা? কিছুই তো নেই!
আর তাই আমার বুক ঘিরে কান্নারা কণ্ঠনালী জোরছে চেপে ধরে কারণে অকারণে। কেন আমি মানুষ হয়ে জন্ম গ্রহণ করলাম কেন আমি একটা ফুটফুটে বেড়াল কিংবা অন্য প্রাণী হলাম না? তাহলে অন্ততপক্ষে আদর টুকু তো আমার ভাগ্যে জুটতো? হায় আপসোস! আমি কেন রোগা হলাম?
তোমার আর পুতুলের মতো তেজী মন মানুষিকতা আমাকে বিধাতা দেয়নি, অন্ধকারে অল্পতেই তলিয়ে যাই। ভাবতে আবাক লাগে একটা পা’ হীন কি দারুণ তুমি জীবনকে উপভোগ করছো (!!!)
নূপুর,গতকাল সকালে হানিফের হোটেলে দু’টো ডিম, মৌসীমি ভর্তা, তেল মরিচ ছাড়া পেঁপের হালুয়া খেয়ে দুপুরে ঝুমুরের হাত দিয়ে খাইয়ে দেয়া গরুর গোস্ত খাবার পরও যখন ব্লাডপ্রেসার ৯৩/ ৫৭ তখন প্রচণ্ড ভয় পেয়ে ওরস্যালাইন গিলি কিন্তু প্রেসারের উন্নতি একদম হয়নি। বাসায় ফিরে কাউকে না বলে অস্থিরতার ভেতর ফ্যানটি ছেড়ে শুয়ে থাকি। দুখের বিষয় কেউ এসে বলেনি এই যে বুড়োবাম কি হয়েছে?
দোকান থেকে এত তাড়াতাড়ি এলে কেন? শরীর কি আজো খারাপ? প্রভৃতি প্রভৃতি। কিংবা নরম দু’ টি হাত আমার কপাল মাথা অবধি স্পর্শ করেনি!
যা হোক আমার দুঃখ আমারই থাক আমার কষ্ট আমাকে নিরবে নিভৃতে কাঁদাক। তোমরা ভালো থেকো, ভালো থেকো অসীমের মাঝে সসীম হয়ে।
ইতি
তোমাদেরই ভাইয়া।