মন্তব্যের টুকরো পাথর
আহমাদুল্লাহ আশরাফ
পৃথিবীতে যারা বড় হয়েছেন, হয়েছেন সফল।মানুষ এখন তাদের জীবনী পড়ে না। পড়তে ইচ্ছেও করে না। মানুষ চায় সহজতা। অল্পতেই চূড়ায় উঠতে চায়। চায় সুখের জীবন ও জীবনের সুখ। যেন না দেখতে হয় কখনো দুঃখের জীবন ও জীবনের দুঃখ। ফলে সে মানুষগুলো আজো পড়ে রয়েছে মাটিতে। তারা পারেনি স্বপ্নের আকাশ ছুঁতে। তাদের চোখ দেখতে পারেনি সফলতার মুখ।
যাপিত জীবনে কষ্ট আসবে। আবার দুঃখরাও জমাবে ভিড়। অনুকূল প্রতিকূল পরিবেশেও হার মানা যাবে না। কোন নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় করা যাবে না। থেমে থাকা যাবে না জীবনযাত্রায়। কোন রকম মন্তব্যও যেন আমাকে বেধে রাখতে না পারে সে-ই প্রচেষ্টাই আজ বিলুপ্ত। মানুষ ভয় করে অন্যের মন্তব্যকে। যেই ভয়-ই তাকে নিয়ে যাচ্ছে ব্যর্থতার দিকে। মানুষ দাপটশালীর চোখ রাঙানোকে মনে করে জীবনের জম। ফলে আত্মপরিচয় ভুলে গিয়ে হয়ে যায় তার অধীন।অথচ; ছিল সে স্বাধীন।
পৃথিবীতে এমন নজির দেখাতে পারবে না কেউ।যারা কাজ করেছে,তাদের সমালোচনা হয়নি।করা হয়নি তাদের বদনাম। অর্থের কষ্ট, রাত জেগে থাকার কষ্ট আরো কত কষ্ট তাকে সইতে হয়নি বরং আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার মতো ঘুম থেকে উঠেই বড় হয়ে গেছে এমন মানুষ পাওয়া পৃথিবীর বুকে শুধু কঠিনই নয় অসম্ভব। তবুও—মানুষ, কেন জানি এতেই বিশ্বাসী।ফলে তাদের বিশ্বাসই তাদেরকে প্রকৃতির কাছে অবিশ্বাসী বানায়।নিক্ষেপ করে ব্যর্থতার আস্তাকুঁড়ে।
হযরত নূহ আলাইহি ওয়াসাল্লামের ঘটনা তো সবাই-ই জানি। তিনি যখন মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার হুকুম মতো কিশতি বানাচ্ছিলেন।তখনো করা হয়েছিল তার সমালোচনা। শুনতে হয়েছে কত কাফেরের পঁচা দুর্গন্ধ কথা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লার হুকুম মানতে কি তিনি কোন ত্রুটি করেছেন! থেমে থেকেছেন কোন সময়!থাকেননি তিনি থেমে। এমনকি পুত্রকেও তিনি ছেড়েছেন। ছেড়েছেন দুনিয়ার মায়া মমতা আর নিন্দুকের নিন্দা। বরঞ্চ এই নিন্দাই তাকে সামনে এগুতে সাহস দিয়েছে। ফলে তিনি নিজেকে আরো কুরবান করতে পেরেছেন মহান স্রষ্টার জন্য।
জাহিলিয়্যাতের যামানা। ছয়শো শতাব্দির সময়ের কথা। যখন ছেয়ে গিয়েছিল গোটা ভূখন্ডে জুলুম অত্যাচারের ছিদ্রহীন আঁধার। কোথাও ছিলো না সত্যের আলো।বাবা আপন সন্তানকেও জীবিত কবর দিতে দ্বিধাবোধ করতো না।সামন্য বিষয়ের জন্য গোত্রকে গোত্র,বছরকে বছর লেগে থাকতো যুদ্ধ আর যুদ্ধ। ঠিক তখনই আগমন ঘটলো আলোর মশাল নিয়ে শেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের।ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়লো নুরের জ্যোতি। কাটতে লাগলো মিথ্যের ঘন অন্ধকার।মানুষের চোখে আসতে থাকলো হক বাতিল যাচাইয়ের আলো।বুঝতে থাকলো মানব সৃষ্টির রহস্য।
তখনো কি সমালোচনা হয়নি রাসূলের।সাহাবায়ে কেরামকে তিক্ত ঢুক গিলতে হয়নি!জীবন দিতে হয়নি তাদের খোদার রাহে!কিন্তু; তারা কখনো ভয় করেননি কোন জালিমের জুলুমকে।কোন সমালোচনাকারীর সমালোচনাকে।কোন নিন্দুকের নিন্দাকে তারা সামান্য কেয়ারও করেননি।এগিয়ে গিয়েছেন আপন লক্ষ্যে।মেনেছেন প্রতিনিয়ত আল্লাহ ও রাসূলের হুকুমকে।যার ফলে তারা আজ আমাদের আকাবির।সফল মানুষদের কাতারে রয়েছেন।
এটাই বাস্তবতা। চির সত্য কথা। যারাই বড় হয়েছেন কষ্ট করেই হয়েছেন।কোন মন্তব্যকে ভয় করেননি।বরঞ্চ মানসিকতা এমন হওয়ার দরকার ছিল যে,আমার সমালোচনা হচ্ছে মানে হলো আমার কাজ হচ্ছে। আমার মেহনত মোজাহাদা হচ্ছে। আমাকে আরো এগিয়ে যেতে হবে সামনের দিকে।একের পরে এক বাধা আসবেই তখনই তা প্রতিকার না করে আপনি সফল মানুষ হোন। দেখবেন ওরা নিশ্চুপ হয়ে যাবে আপনার সফলতা দেখে।কারণ; ওরা সাফল্যে বিশ্বাসী।
নিজেকে আনন্দিত মনে করুন যখন:—
১। আপনার সমালোচনা করা হয়
২। আপনার শত্রু বাড়তে থাকে
৩। আপনাকে মানুষ বাঁকা চোখে দেখে
৪। চতুর্দিক হতে প্রতিকূলতার পরিস্থিতি তৈরি হয়
৫। আপন মানুষগুলোও একে একে দূরে যেতে থাকে
তখন আপনার করনীয় হচ্ছে:
১। বেশি বেশি দোয়া করুন সফলতার জন্যে
২। কাজের গতি আরো বাড়িয়ে দিন
৩। নিজেকে মনে করুন আপনি সঠিক পথেই চলছেন
৪। হতাশ হবেন না, লা তাহযান ইন্নাল্লাহা মাআনা
৫। কাউকেই আপনার লক্ষ্যের কথা না জানিয়ে সফলতা দেখানোর ইচ্ছে করেন।
ফলে—মানুষ তার সমালোচনার জবাব পেয়ে লা-জবাব হয়ে যাবে। নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে, তারাও আপনার মতো হতে চাইবে।এভাবেই পরিবর্তন হবে মানুষ ও মনন।সমাজ ও রাষ্ট্র। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা আমাদের সকলকে “মন্তব্যের টুকরো পাথর”কে ফুল হিসেবে গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।
────মন্তব্যের টুকরো পাথর
────আহমাদুল্লাহ আশরাফ
────ত্রিশাল, মোমেনশাহী।
────২৮’জুন’২৪|শুক্রবার।