
মা-বাবাকে নিয়ে একটি ছোট গল্প। গল্পের নাম: মায়ের অমোঘ ভালোবাসা
একটি ছোট গ্রামে বাস করত সুমন নামে একটি ছেলে। তার বাবা-মা ছিল খুব সাধারণ মানুষ। বাবা একজন কৃষক, আর মা ছিলেন গৃহিণী। তাদের জীবনে তেমন কোনো আর্থিক স্বচ্ছলতা ছিল না, কিন্তু তাদের মধ্যে ছিল অগাধ ভালোবাসা। সুমন তাদের একমাত্র সন্তান, এবং তার বাবা-মা তাকে খুব ভালোবাসত। তারা সবসময় চাইত, সুমন যেন পড়াশোনায় ভালো করে, আর জীবনে কিছু একটা সফল হয়।
সুমনের বাবা প্রতি দিন সকাল সকাল জমিতে কাজ করতে চলে যেতেন, আর মা বাড়ির সব কাজ সামলাতেন। সুমন প্রায়ই স্কুল থেকে ফিরে দেখে, তার মা বাড়ির কাজ শেষ করে তাকে পড়তে বসতে সাহায্য করত। মা কখনোই ক্লান্ত হতেন না, সব সময় হাসিমুখে থাকতেন, যেন কোনো কষ্টই তাকে ছুঁতে পারে না। কিন্তু সুমন জানত, তার মা রাতে অনেক সময় খালি পেটে শুয়ে পড়েন, কারণ পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে তার বাবা কখনো কখনো টাকা পেতেন না।
একদিন সুমন তার মাকে প্রশ্ন করল, “মা, আপনি তো অনেক কষ্ট করেন, তবুও কখনো ক্লান্ত হতে দেখিনি। আপনি কীভাবে এত শক্তি পান?”
মা মৃদু হেসে বললেন, “সুমন, মা হওয়ার পর আমি কখনোই ক্লান্তি অনুভব করি না, কারণ তোমার ভালোবাসাই আমার শক্তি। আমি জানি, তুমি একদিন বড় হয়ে অনেক ভালো কিছু করবে। তোমার জন্য আমি প্রতিদিন কাজ করি, আমার কষ্ট তাতে কিছুই না।”
সুমন কেঁদে ফেলল, কারণ সে জানত, তার মা কতটা ত্যাগ স্বীকার করেন। তার মা কখনোই নিজের কথা চিন্তা করেননি, বরং সব সময় সুমনের জন্য তার স্বপ্ন দেখতেন।
একদিন সুমন স্কুলে একটা বড় পুরস্কার জিতল। সেই আনন্দের মুহূর্তে সে তার বাবা-মাকে বলল, “মা, বাবা, আমি যে পুরস্কার পেয়েছি, সেটা আমার নিজের অর্জন নয়, এটা আপনারা দুজনের ত্যাগের ফল।”
তার মা চোখের জল মুছে হাসলেন এবং বললেন, “আমার সুমন, তুমি যে ভালো মানুষ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। আমি শুধু তোমার পাশে থাকব, তুমি যা ইচ্ছে করো, আমরা তোমার জন্য সব কিছু করতে প্রস্তুত।”
বাবাও সুমনের মাথায় হাত রেখে বললেন, “তুমি আমাদের জীবনের অহংকার। তোমার সফলতা আমাদের ত্যাগের প্রতিফলন। তোমার দিকে তাকালে মনে হয়, আমাদের সব কষ্ট সার্থক।”

সুমন সেদিন বুঝেছিল, তার মা-বাবার ভালোবাসা কোনো হিসাব-নিকাশের মধ্যে পড়ে না। তাদের ত্যাগ এবং পরিশ্রমের মধ্যেই তার জীবনের সফলতা নিহিত। সুমন প্রতিজ্ঞা করেছিল, জীবনে সে কখনোই তার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ভুলবে না, এবং তারা যা স্বপ্ন দেখেছেন, তা সে বাস্তবায়িত করবে।
মা-বাবার ভালোবাসা কখনোই শর্তসাপেক্ষ নয়। তাদের ত্যাগ, ভালোবাসা এবং সহানুভূতি আমাদের জীবনকে আলোকিত করে। সুমনের গল্প আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মা-বাবার ভালোবাসার মূল্য কোনোদিনও কমানো যায় না।