মা হলো এক অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব
লেখক – রতন বসাক
আজ এই কথাগুলো লিখে বলতে পারছি তার কারণ হলো মা। বাবার ঔরসে মায়ের গর্ভে ধীরে ধীরে মানবাকৃতি পেয়ে, এই পৃথিবীর আলো দেখার সুযোগ করে দিয়েছে আমাকে এই মা। মায়ের কথা যতই লিখি না কেন, কোন সময়ই মায়ের সম্পূর্ণ বর্ণনা ও ব্যাখ্যা করে আমি বোঝাতে পারবো না। মায়ের গুণের অনেক কথাই তবুও বাকি থেকেই যাবে। মা হলো অতুলনীয়, মায়ের তুলনা কারো সঙ্গেই করা যায় না। যাঁর মা আছে সে যতটা না বোঝে মায়ের প্রয়োজনীয়তা, তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি বোঝে যাঁর কাছে মা নেই।
আমাদের অর্থাৎ প্রত্যেকটা প্রাণীর জন্মের শুরুটাই এক আজব দেশে হয়। মাতৃগর্ভ অর্থাৎ যেখানে থেকে আমরা কিছুই দেখতে পারি না। পুরো শরীর গঠনের পর, একটা নির্দিষ্ট সময়ের পরেই ভুমিষ্ঠ হয়ে আমরা এই জগতের আলো দেখতে পারি। এই জগতে এসে আমরা যাকে সবার প্রথম দেখতে পাই, তিনি হলেন আমাদের মা। হয়তো তাই বলেই আমরা প্রথম শব্দটা ” মা ” মুখ থেকে বের করে কেঁদে উঠি । মাকে দেখার পরেই আমরা এদিক-ওদিক দেখতে শুরু করি।
মায়ের দুটো শক্ত, সুন্দর ও স্নেহ ভালোবাসায় ভরা হাতের মধ্যে আমরা তাঁর সেবা-যত্নে ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠি। এই মায়ের সঙ্গেই আমাদের সবচেয়ে বেশি নিবিড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে। আর এটা হওয়ার কারণ হলো, তাঁর সঙ্গে অনেক বেশি সময় কাটাই বলে। মায়ের কোল আমাদের সবচেয়ে বেশি নিরাপদ বলে মনে হয়। ভয় পেলে কিংবা অন্য কোন কারণে আমরা মায়ের কাছে সবার আগে চলে আসি। তাঁর কোলে উঠে আমরা অনেক বেশি নিশ্চিন্ত হয়ে যাই। মাকে পেয়ে গেলে মনে হয় যেন আমরা দুনিয়া পেয়ে গেলাম।
এই মা-ই ভালো-মন্দে ও সুখে-দুখে আমাদের পাশে থাকে নিঃস্বার্থভাবে। মুখে কিছু না বললেও আমাদের শুধুমাত্র মুখ দেখেই এক মুহূর্তেই মা বুঝে যায় আমি কি চাই? তাঁর পক্ষে যতটা সম্ভব, ঠিক তার চেয়েও বেশি চেষ্টা করে সেই চাওয়াটাকে পূরণ করার। মায়ের মনে যতই দুঃখ-কষ্ট থাকুক না কেন কিংবা শারীরিক ব্যথা বেদনা থাক না কেন, হাসিমুখেই সব সময় সন্তানকে কোলে তুলে নেয়। তাঁর কাছে সন্তানের সুখ সবার আগে।
মা যদি শিক্ষিত হয় তাহলে সে নিজেই সন্তানকে লেখাপড়া শেখায়। আর নিজে লেখাপড়া না জানলে তখন শিক্ষক রেখে সন্তানকে লেখাপড়া শেখানোর চেষ্টা করে। লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হয়ে উঠুক তাঁর সন্তান এটাই মায়ের কামনা থাকে। মায়ের কাছে পুত্র কিংবা কন্যা দু’জনেই সমতুল্য। কাউকে বেশি কিংবা কাউকে কম ভালোবাসে তা কিন্তু নয়। কোন মায়ের একাধিক সন্তান থাকলে মা প্রত্যেকটি সন্তানকেই সমানভাবে ভালোবাসে।
মা যতদিন বেঁচে থাকে অর্থাৎ সাথে থাকে, ততদিন আমরা ঠিকমতো মায়ের অবদান ও মূল্য অনুধাবন করতে পারি না। যেদিন আমরা মাকে হারাই, সেদিন বুঝতে পারি মাথার উপর যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। মাকে হারিয়ে কষ্টে বুকটা যেন জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। মা কিছু দিক না দিক, ঘরে থাকলে তাঁর কন্ঠের আওয়াজ কানে শুনলেই বুকটা যেন জুড়িয়ে যায়। বাইরে থেকে ফিরে এসে ঘরে তাঁর, মানে মায়ের মুখটা দেখলেই দুঃখ, কষ্ট, জ্বালা ও ব্যর্থতা, পাওয়া না পাওয়া সব ভুলে যাই আমরা।
সবার মতোই জন্মসূত্রে আমিও একজন মা পেয়েছিলাম। মানে মাত্র ১৮ বছরই মাকে সাথে পেয়েছি তাই। তারপর আমাদের সবার মায়া কাটিয়ে পরলোক গমন করেছিলেন। সামান্য এই ক’টা বছর মায়ের থেকে যা যা পেয়েছিলাম, তা কোনদিনও আমি ভুলতে পারবো না। আজ আমি যাই আর যতটুকুই হই না কেন, সবটাই মা ও বাবার দানে হয়েছি । তাদের এই দান আমার পক্ষে কোনদিনই সম্ভব হবে না শোধ করে দেওয়ার। তবে মাকে যদি আরো ক’টা বছর সাথে পেতাম এবং সেবা করার সুযোগ পেতাম, তাহলে নিজেকে ধন্য মনে করতাম।
মা-ই একমাত্র তাঁর সন্তানকে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার উপযোগী করে তোলে। কিছু মা’কে বাদ দিলে বেশিরভাগ মা-ই তাঁর সন্তানকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান মনে করে। তাই প্রত্যেকটি মায়ের সুস্থতা ও ভালো থাকার কামনা করি। মা থাকলেই তাঁর সন্তান এই পৃথিবীতে আরও এগিয়ে যেতে পারে খুব সহজে তাঁর আশীর্বাদে। মাকে তো আমরা সবাই সম্মান দিই ও ভালোবাসি। তবু পৃথিবীর প্রত্যেকটি মাকে বিশেষ সম্মান ও স্মরণ করে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার আন্তর্জাতিক মাতৃদিবস পালন করা হয়।