সমাজ চিন্তক আলহাজ্ব মাস্টার আব্দুর রহমান সিকদার
আনুমানিক ১৯১১ সালের দিকে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার পহরচাঁদা গ্রামে গোবিন্দপুর পশ্চিম পাড়ায় জনাব আলহাজ্ব মাস্টার আব্দুর রহমান সিকদার জন্ম গ্রহন করেন। পিতা মরহুম মোশারফ আলী ও ততপূর্বপুরুষ সাতকানিয়ার বাসিন্দা ছিলেন।
পারিবারিক শিক্ষায় বেড়ে উঠেন তুখোড় মেধাবী ও বিচক্ষণ জনাব আব্দুর রহমান। আনুমানিক ১৯৩০ সালের দিকে পহরচাঁদায় পারিবারিক কাচারী ঘরে তৎকালীন এলাকার ছোট খাট কচি কাচাদের নিয়ে পাঠশালা শুরু করেছিলেন। এখানেই তিনি পাড়ার কোমলমতি ছেলে মেয়েদের বাল্য শিক্ষা, মুসলিম শিক্ষা, মক্তব শিক্ষা সহ নামাজ দোয়া শিক্ষা দিতেন। সেখান থেকেই এলাকার জনগণ সম্মান করে তাকে মাস্টার ডাকতেন, সেই বাল্যকালের মাস্টার উপাধিতেই জনাব আব্দুর রহমান “মাস্টার” নামে সমধিক পরিচিতি লাভ করেন।
তিনি সমাজসেবক, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। পরিনত বয়সে অন্যান্যদের সাথে গোবিন্দপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সাথে যুক্ত হন। পশ্চিম পাড়া জামে মসজিদ প্রতিষ্ঠা ও ৮৫/৮৬ সালের দিকে প্রথমবার পাকা করনে বিশাল ইটের যোগান দেন। নিজ নেতৃত্বে ১৯৯০ সালে এলাকায় আপামর জনসাধারণের স্বার্থে নিজের নামে এম.এ.রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠান করেন। এছাড়াও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে বিদ্যোৎসাহী হিসেবে কাজ করেন।
তার আর্থিক অনুদানের মধ্যে পহরচাঁদা কুতুববাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে ১০ শতক, গোবিন্দপুর পশ্চিমপাড়া জামে মসজিদে ৫০ শতক, এবং এম.এ.রহমান সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিশাল অংকের জমি দান করেন। এছাড়া পহরচাঁদার প্রথম গোবিন্দপুর দক্ষিনপাড়া জামে মসজিদে মুসল্লিদের ব্যবহারের জন্য পুকুরের দক্ষিণ পাড় মসজিদের নামে দান করেন।তিনি ব্যক্তি জীবনে প্রায় ৪০ একর জমির মালিক ছিলেন।তার কাছে যারা আসতো তারা কখনও খালি হাতে ফেরত যেত না।কিছু না কিছু দিয়ে সাধারণ মানুষের সাহায্য করতেন।সমাজের সেবা করতেন।সমাজ উন্নয়নের জন্য অনেক কাজ করে গেছেন।
তিনি ক্রীড়ামোদী হিসেবে খেলাধুলা বেশ পছন্দ করতেন। তাঁর বাড়ীর উঠানে প্রতিবছর দাড়িয়াবান্ধা খেলার আয়োজন হতো। এবং এখানে সমগ্র চকরিয়া সহ পহরচাঁদার প্রসিদ্ধ দাড়িয়াবান্ধা খেলোয়াড়গণ অংশগ্রহণ করতেন। তার মধ্যে অন্যতম জনাব মাষ্টার নজরুল ইসলাম, এলাহাদাদ মেম্বার, জহির আহমদ সওদাগর, কবির আহমদ (কবিন্না মাঝু) সামাদ সহ নাম না জানা অনেকেই।
সামাজিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে জায়গা জমির হিসাব খুব ভাল বুঝতেন।তাই এলাকার যে কোন সমস্যা সমাধানের জন্য অনেকেই তাঁর কাছে ছুটে আসতেন। গ্রামের সালিশ বিচার এবং সমাজের সর্দার হিসেবে খুব ভাল খ্যাতিমান ছিলেন।
এই মহান ব্যক্তি ৮ই জানুয়ারী ২০০১ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
মৃত্যুকালে তাঁর আট পুত্র, চার কন্যা, স্ত্রী সহ অসংখ্য নাতী-পুতী রেখে গেছেন।
আসুন আমরা এই মহৎ শিক্ষানুরাগী সমাজপতির জন্য দোয়া করি। আল্লাহ্ তায়ালা যেন তাঁকে ক্ষমা করে তার জান্নাত নসীব করুন। আমিন।।।